পিঁপড়া বৃত্তান্ত পার্ট ১

পিঁপড়া বৃত্তান্ত পার্ট ১

আজকাল গায়ের উপর লাল পিপড়াগুলো খুব জ্বালাচ্ছে। সুহাসিকা বলেছিল আমি খুব মিষ্টি। এই কথা শোনার পর থেকে খুব চুলকানি শুরু হয়। আচ্ছা, সুহাসিকা আমাকে মিষ্টি কেন বলে?

 

“তোমার পিঠে একটি ছিদ্র আছে দেখেছো?”

“পিঠে ছিদ্র?” আমি অবাক হলাম।

“হুম। পিপড়াগুলো ওখানটাই ঘর বানিয়েছে।” সুহাসিকা হাসছে। যেন খুব বড় কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়ন হল।

“আচ্ছা, শোনো।”

“বল।”

“চিন্তা করো না তো। ছিদ্র বন্ধ করে দিচ্ছি।” ভ্রু কুঁচকে সুহাসিকা হাতে তুলো নিলো।

“কিভাবে বন্ধ করবে, শুনি।”

“তুমি কি ভেবেছো, অলৌকিক ক্ষমতা শুধু তোমার আছে?” সুহাসিকা মুখে হাসি এনে বলল।

“আমার আবার কীরকম ক্ষমতা?”

 

সুহাসিকা উত্তর না দিয়ে একটি বাটিতে দুই চামচ লবণ আর কয়েক ফোঁটা পানি তুলো দিয়ে ভিজিয়ে আমার পিঠের ছিদ্র মুখে লাগিয়ে দিলো।

“ব্যথা করছে?”

“একদম না। কিন্তু তুমি যে বললে না কী ক্ষমতা আছে আমার?”

“সেদিন রাতে আমি ঘুমোচ্ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি তুমি পাশে শুয়ে আছো। মুখ হা করে ঘুমোচ্ছো।”

“ধুর! ওটা তোমার হেলুসিনেশন।” আমি খুব একটা পাত্তা দিলাম না।

“তুমি যা-ই বলো না কেন, আমি খুব ভয় পেয়েছি। দোয়া পড়েও কিছুতে কিছু হচ্ছিল না। পরে চোখ বন্ধ করে এক মনে আয়ুতুল কুরসি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ি।”

“তোমার কী ধারণা? ওত রাতে আমি আমার আরামের ঘুম বাদ দিয়ে তোমার কাছে গিয়ে ঘুমিয়েছি? আবার তুমি ওঠার আগে আগে বাসায় ফিরে এসেছি?” আমি বিদ্রূপ ভরে বললাম।

“জানি না বাপু। তোমার একটুও চিন্তা হচ্ছে না?” সুহাসিকার মুখে অনেক চিন্তা।

আমি আর কথা বাড়াই না। বাসায় অনেকগুলো কাজ পড়ে আছে। শার্ট জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ছি, এমন সময় সুহাসিকা পেছন থেকে আমার শার্ট খামছে বলল, “একবার বলে তো যাও।”

আমি বললাম, “মুখে বিদায় বলতে আমার খারাপ লাগে। মনে হয় বুক চিঁড়ে কিছু একটা নাই হয়ে যাচ্ছে।”

“আচ্ছা, ছাতা নিয়ে যাও।”

“আজ ভিজবো। খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে।”

সুহাসিকা শার্ট ছেড়ে দিলো।

 

বর্ষা অদ্ভুত বিশ্রি রসিকতা করছে আজকাল। আকাশে তারা থাকলে আগে ধরে নেয়া হতো, বৃষ্টি হবে না। কিন্তু এখন আর এসব ফর-সি চলে না। রাতে এলইডি আলোর নিচে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি দৃশ্যমান হচ্ছে। গায়ে লাগছে আবার লাগছে না ফোঁটা। বাতাস বইছে। স্মৃতিময় বাতাস। এ বাতাস পিছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তাদের চাওয়া কখনও পূরণ হয়, তো হয় না। আজ তাদের চাওয়া পূরণ করবো না। খুব ঘুম চোখে। শরীর কাঁত করে দেয়া আলস্য। বৃষ্টির রাতে ঝুমঝুম শব্দে ঘুম ভালো হয়।

 

তারপরও ঘুম আসছে না। আজকাল ঘুম বড় অমূল্য হয়ে উঠছে। পয়সা দিয়ে এ কেনা যায় না? কবে মন ভরে ঘুমিয়েছি মনেও পড়ছে না।

 

মোবাইল বেজে উঠলো।

এত কষ্টে আসা ঘুম ভাঙিয়ে দিলো কে? স্ক্রিনে আম্মু লিখা। আমার রুম থেকে আম্মুর রুমের দূরত্ব কয়েক গজ। ফোন দেয়ার কী দরকার এত রাতে?

 

(চলবে…)

Related Posts