আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদেরকে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বলবো। চট্টগ্রামে অবস্থিত তিনটি পার্বত্য জেলার একটি হচ্ছে বান্দরবন। পাহাড় দেখতে হলে চলে যেতে পারেন ঐ এলাকায়। দেখার মতো কি কি আছে বান্দরবনে সেই নিয়েই আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান দেখার মতো কি কি আছে
বানদরবন হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। এটি বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। শুরুতেই পাহাড়ের কথা যখন উঠলো, বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং এই বান্দরবনেই অবস্থিত। এছাড়া ঝর্ণা, প্রপাত, পাহাড়ি রাস্তায় চলা, গাড়িতে করে ঘোরা, ডাকবাংলোতে বা হোটেলে থাকা, পাহাড়ি অঞ্চলে ভোর এসবের সৌন্দর্য তো অতুলনীয়!
বান্দবনের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে জিংসিয়াম সাইতার জলপ্রপাত, বগা লেক,রিজুক জলপ্রপাত, জীবন নগর পাহাড়, পাতাং জারি জলপ্রপাত, ফাইপি জলপ্রপাত, শুভ্র নীলা, বাকলাই ঝরণা, বুদ্ধ ধাতু জাদি, চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ, চিনরি ঝিরি ঝরণা, থানচি, রুমা ঝর্ণা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট ও জাদুঘর, বাকলাই জলপ্রপাত, , চিংড়ি ঝিরি জলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়, মেঘলা এবং আরও অনেক দর্শনীয় স্থান। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত।
নাফাখুম:
নাফাখুম বান্দরবনের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এটি একটি আকর্ষনীয় জলপ্রপাত। এটি মূলত থানচি উপজেলায় অবস্থিত। এই জলপ্রপাতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি পাহাড় এবং বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটিকে রেমক্রি জলপ্রপাতও বলা হয়। খরস্রোতা পাহাড়ি সাঙ্গু নদীতে এর অবস্থান।
কিভাবে যাবেন: বান্দরবন শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা মাইক্রো ভাড়া নিয়ে চলে যেতে পারবেন নাফাখুম।
সত্যি বলতে কি, ওখানে একবার গেলে বারবার যেতে মন চাইবে।
জাদিপাই জলপ্রপাত:
জাদিপাই হলো বান্দরবনে অবস্থিত আরেকটি জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রশস্ত জলপ্রপাত। মূলত এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। তবে কেওক্রাডং থেকে হেঁটেও যাওয়া যায় সেখানে।
কীভাবে যাবেন: বান্দরবন থেকে প্রথম গাড়ি করে রুমা বাজার পৌছাতে হবে। এরপর বগা লেকে পৌছাতে হবে। সেখানে পৌছাতে পৌছাতেই দিনের আলো নিভে আসবে। এরপর রাত্রি যাপনের জন্য আপনাকে গাইডের সহযোগিতায় বগালেকেই আদিবাসী গ্রামে থেকে যেতে হবে। এরপর পরদিন ভোরে রওয়ানা দিয়ে কেওক্রাডং পৌছাতে হবে। এরপর প্রায় আড়াই ঘন্টার পথ হেঁটে প্রায় দুপুর নাগাদ পৌছাবেন জাদিপাই ঝরণা।
শৈল প্রপাত (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
এরপর আসে শৈল প্রপাত। এটি মিলনছড়ি এলাকায় অবস্থিত। এটি বান্দরবন শহর থেকে থামচি যাবার পথে ৪ কি.মি. এর মধ্যে পড়ে। এখানে বিভিন্ন হাতে তৈরি পণ্য বিক্রি হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে এই এলাকায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে। তবে ওখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
বগা লেক (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
এরপর আসে স্বচ্ছ পানির বগালেকের নাম। ওখানে চাইলে বোটে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন। অথবা কায়াকিং করতে পারেন। প্রায় ১৫ একর জায়গা নিয়ে এটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লেক।এছাড়া লেকের আশেপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখতে পারেন।
নীলগিরি (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
নীলগিরি হলো বান্দরবন পর্যটন এলাকার অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থান। এই স্থানটি এর নামের মতোই সুন্দর। এই এলাকাটি থানচি এলাকায় অবস্থিত।এই স্থানটির উচ্চতা প্রায় ৩৫০০০ ফুট। এটির অবস্থান বান্দরবন শহর থেকে ৪৬ কি.মি. দূরে। উপর থেকে নিচের পাহাড়গুলো খুবই ছোট আর সড়কগুলো সরু সুতার মতো মনে হয়। আর নীলগিরির কাছাকাছি ক্যাম্প করার জন্য ম্রো আদিবাসী গ্রাম বেশ বিখ্যাত জায়গা।
থাকার ব্যবস্থা: নীলগিরি রিসোর্টে রিজার্ভেশন কোনো সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে নিতে হবে। ভাড়া পড়বে ৪০০০- ৭০০০ টাকা। এছাড়া তাঁবুতে থাকতে হলে ২০০০ টাকা করে ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি। খাবারের জন্য রেষ্টুরেন্টের ব্যবস্থা আছে। হ্যালিপ্যাডও আছে।
কিভাবে যাবেন: নীলগিরিতে যেতে হলে মাইক্রোবাস বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারবেন। সরাসরি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাবে আপনাকে। যাবার পথে মনোরম দৃশ্য চোখে পড়বে দুইপাশে। উপরে যেতে যেতে মনে হবে যেন মেঘের দেশে চলে এসেছেন।
মেঘলা (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
দলবেঁধে পিকনিকে যেতে হলে বান্দরবনের মেঘলা একটি উপযুক্ত স্থান।বান্দরবন কাউন্সিলর অফিসের কাছেই শহর থেকে মাত্র ৪ কি.মি. দূরে মেঘলা পর্যটন অঞ্চলের অবস্থান। খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে রিসোর্ট এবং মোটেল রয়েছে। ভেতরে কৃত্রিম লেকে বোটিং করার সুব্যবস্থা আছে।
যেভাবে যাবেন: বান্দরবন শহর থেকে বাসে করে অথবা অটোরিক্সায় চড়ে অথবা সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারবেন মেঘলা পর্যটন এলাকায়। পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য এটি খুব সুন্দর জায়গা। আর বড় দল নিয়ে পিকনিকে যেতে হলে আগে থেকেই বুকিং দিতে হবে। ভেতরে বাস পার্কিং এবং গাড়ি রাখার জন্য আলাদা জায়গাও রয়েছে।
নীলাচল (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
নীলাচল বা টাইগার হিলের অবস্থান মেঘলার কাছেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এখানে গেলে বর্ষাকালে দারুণ সুন্দর আকাশ উপভোগ করতে পারবেন। মনে হবে যেন মেঘের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন। এছাড়া পাখির চোখে দেখতে পাবেন পুরো বান্দরবন শহর।
তবে এখানে থাকা খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশিক্ষণ থাকতে চাইলে খাবার আর পানি সাথে করে নিয়ে যাবেন। এছাড়া রাতের মনোরম দৃশ্য পাহাড়ের উপরে বসে উপভোগ করার জন্য অনুমতি নিয়ে এখানে ক্যাম্প করতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন: বান্দরবন শহর হতে জিপ বা চান্দের গাড়িতে করে সরাসরি চলে যাবেন নীলাচলে। এরপর গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে কিছুটা পথ যেতে হবে।
চিম্বুক পাহাড় (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান):
বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত হলো চিম্বুক পাহাড়। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২৫০০ ফুট প্রায়। শহর থেকে দূরে হওয়ায় যেতে কিছুটা সময় লাগবে। আঁকাবাঁকা পথে যেতে যেতে চারপাশের পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। থাকতে চাইলে ওখানে সরকারি দুটি রেস্টহাউজ আছে। আগে থেকে বুকিং দিয়েই সেখানে যেতে হবে। আর যাবার পথে মিলিটারি চেকপোস্টে নাম- ঠিকানা লেখাতে হবে।
এছাড়া বান্দরবন পার্বত্য অঞ্চলে বেড়ানোর মতো আরও জায়গা রয়েছে। যেমন- সিপ্পি আরতুয়াং যেটি সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। লিক্ষ্যং ঝর্ণা, সাকাহাফং পর্বত, ডাবল ফলস বা ক্লিবুং ঝর্ণাও নামকরা দর্শনীয় স্থান এই অঞ্চলের। এছাড়া এডভেঞ্চার যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে মারায়ন তং।
এছাড়া রয়েছে সাজেক, রহস্যে ঘেরা আলির গুহা, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিজয়। রয়েছে দেবতাখুম, ঋজুক ঝর্ণা, সাতভাইখুম, অমিয়াখুম জলপ্ররপাত, দামতুয়া ঝর্ণা, নীল দিগন্ত এবং আরও অনেক দর্শনীয় স্থান।
এই ছিলো আজকের আর্টিকেল (বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান)। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।