গত মাসে মুক্তি পেলো “স্টার ওয়ার্সঃরাইজ অফ দ্যা স্কাইওয়াকার” সিনেমাটি। সিনেমাটি ইতিমধ্যেই হলিউড বক্স অফিসে বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন ডলার ইনকাম করেছে। এই সিনেমার মাধ্যমেই স্টার ওয়ার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির স্কাইওয়াকার সাগার সমাপ্তি ঘটলো। এর পরে যদি আরো আসেও তাহলে সেটা নতুন একটা সাগা শুরু হবে।
সিনেমাটির ইতিবাচক দিক থেকে বলা শুরু করি। প্রথম দিকে যেই কথাটি বলবো সেটি হচ্ছে সিনেমাটির একশন সিকুয়েন্স দূর্দান্ত হয়েছে। স্টার ওয়ার্স ভক্তকূলদের বেশ বড় অংশ এই সিনেমার মাধ্যমে বেশ কিছু দিক থেকে সন্তুষ্ট যা স্টার ওয়ার্সের আগের পর্ব করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এর আগের মুভির মাধ্যমে স্টার ওয়ার্সের বিশাল ভক্তকূলদের মধ্যে বিভক্তি হয়। এর কারণে অনেক তোলপাড় চলে। যাই হোক সেই কথা অন্য আরেকদিন বলবো। তবে এই সিনেমাটি এর আগের স্টার ওয়ার্সের পর্ব থেকে বেশ ভালো ছিল সেটা সন্দেহাতীতভাবে বলাই যায়।
ডিরেক্টর জে.জে. আব্রামস তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আগের পর্বের ভুলগুলোর সমাধান দেয়ার। সেটা করতে তিনি কিছুটা সক্ষমও হয়েছেন। এছাড়াও মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে আলাদা কিছু বলার নেই। বরাবরের মতই অসাধারণ মিউজিক কম্পোজ করেছেন এই সিনেমার মিউজিক কম্পোজার জন উইলিয়ামস। তিনি কিন্তু স্টার ওয়ার্সের প্রায় সব মুভিতেই এই ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বিশেষ করে সিনেমার সাউন্ড মিক্সিং আলাদা স্থান পাবে এইটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ইতিমধ্যে অস্কার নমিনেশন তালিকায় সেরা সাউন্ড মিক্সিং বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে “স্টার ওয়ার্সঃ রাইজ অফ দ্যা স্কাইওয়াকার ” সিনেমাটি।
এছাড়াও মুভির সিনেমাটোগ্রাফিও দূর্দান্ত হয়েছে। সিনেমার অরজিনাল স্কোর বেশ ভালো ছিল। কিছু চরিত্রদের চরিত্রায়ন যেগুলা আগের পর্ব গুলোতে চোখে পড়েনি। সেই চরিত্রগুলোরও দারুণ চরিত্রায়ন হয়েছে।
মুভিতে যতগুলো পুরানো চরিত্র ছিল যেগুলা সবসময় ভক্তদের মনে আলাদা জায়গা নিয়েছিল সেই সব চরিত্রও ভালো ছিল। সবাই জানে এই সিনেমাতে “ল্যান্ডো” চরিত্র ফিরে আসে। এই চরিত্রটিও সিনেমাতে ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। “কাইলো-রেন” চরিত্রটি দূর্দান্ত ছিল। স্টার ওয়ার্সের সিকুয়েল ট্রায়োলজিতে এই চরিত্রটিই আমার কাছে সেরা লেগেছে।
এবার মুভির নেতিবাচক দিক থেকে কিছু বলা যাক। বলা বাহুল্য এই সিনেমাতে পরিচালক বেশ কিছু ভুলগুলো শুধরাতে সক্ষম হলেও অনেক জায়গায় তিনি বেশ কিছু গোজামিল পাকিয়ে ফেলেছেন। যার মাধ্যমে তিনি সিনেমাতে বেশ কিছু প্লটহোল সৃষ্টি করেছেন। প্লটহোলের কারণে সিনেমার অনেক জায়গায় কিছু দৃশ্যের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ তিনি। এছাড়াও সিনেমাটির কিছু কিছু দৃশ্য জোর পূর্বক মনে হয়েছে। এবং সিনেমার আগের পর্বের জন্য সিনেমা বেশ তাড়াহুরো মনে হয়েছে বিশেষ করে বড়সড় ঘটনা বেশ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে যা একটু ভালোমতো দেখানো যেত। এইছাড়াও সিনেমার বেশ কিছু চরিত্র ছিল যেগুলো একদমই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে আমার কাছে। আবার সিনেমার মূল চরিত্র “রে” এবং “কাইলো-রেন” এর চরিত্রায়ন বেশ ভালো হলেও অন্যান্য চরিত্র যেমন “পো”, ” ফিন” এদের চরিত্রের উন্নতি তেমন চোখে পড়েনি। আসলে এসব কারণেই সিনেমাটি মুক্তির পরেই বিভিন্ন সাইটের সমালোচকরা এই সিনেমাটি বেশ কাটাছেড়া করেছেন যা স্টার ওয়ার্স মুভিগুলোতে খুব বেশি দেখা যায়না। কিন্তু অপরদিকে ভক্তকূলদের এই সিনেমা দেখে অনূভুতি বেশ ভালো দিয়েছে তারা। এইদিক থেকে ভক্তকূল এবং সমালোচকদের মধ্যে বিভক্ত থেকে গিয়েছে।
তবে সর্বোসাপেক্ষে বলা যায়, এই সিনেমাটি ভালোই মনে হয়েছে। সিনেমাটি এখনো দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে চলছে। আপনি যদি স্টার ওয়ার্স ভক্ত হন তাহলে সিনেমাটি দেখে আপনি হতাশ হবেন না। আশা করি ভালোই লাগবে।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।