Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা

বাবুই পাখিকে ঘিরে কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটি আজও উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ। কবিতাটি তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে পাঠ্য। আজও কবিতাটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি।
মানুষের মানবিক দিক জাগ্রত করতে কবি রজনীকান্ত সেন কবিতাটি লিখেন। কবিতাটি এরকম-
 বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।”
বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরেরও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

কবিতাটি আজও মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার পথে আজ বাবুই পাখির বাসা।

বাবুই চড়ুই সদৃশ পাখি। গাছের ঝুরির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎজোড়া। অনেকেই একে ‘তাঁতি পাখি’ও বলেন।

এখন থেকে ১৫-২০ বছর আগে গ্রামগঞ্জের তালগাছ, নারিকেল গাছ বা আখক্ষেতে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত, উৎসাহ যোগাত মানুষকে স্বাবলম্বী হতে।

সারাবিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাস। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ বর্ণের তামাটে হয়। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোচাকৃতি, লেজ চৌকা।

তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রঙ হয় গাঢ় বাদামি। বুকের উপরের দিক হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি। বুকের কালো ডোরা ততটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রূরেখা কানের পেছনে একটি ফোঁটা থাকে।

বাবুই পাখি সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল ও আখেেত বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভূতি তাদের প্রধান খাবার।

এক সময় প্রচুর তাল, নারিকেল ও খেজুরগাছ ছিল। এসব গাছে বাসা বেঁধে বাবুই পাখি বসবাস করত। ফুটিয়ে তুলত শৈল্পিক নিদর্শন। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করত।

বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার ধারে, বাড়ি ও পুকুর পারে সেই তালগাছ যেমন আর দেখা যায় না তেমনি দেখা মেলে না ছড়ার নায়ক বাবুই পাখিরও। গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদীর পারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনার বিষয়।

এসমব গাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও, এমনটি মনে করেণ স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবকরা।

তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখার জন্য দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়জন বলে মনে করেন তারা।

Related Posts

8 Comments

Leave a Reply