অনলাইন ফিশিং থেকে বাঁচার উপায়

আমরা অনলাইনে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত, আবার অনেকেই গায়েই লাগায় না বিষয়টি। কিন্তু বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে ইন্টারনেটে। আপনি কি জানেন যে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, ই-মেইল অ্যাকাউন্ট সহ বিভিন্ন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে থাকা অ্যাকাউন্টও হ্যাক হতে পারে! হ্যাকাররা ফিশিং লিংক নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেনে রাখা ভালো যে বিশেষ করে বাংলাদেশ অঞ্চলকে টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র। আর এজন্যই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে প্রতি মুহূর্তে।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি নিরাপদ এবং বৈধ ওয়েবসাইটের লিংকের সাথে প্রায় কাছাকাছি মিল রেখে এক ধরনের ওয়েবলিংক তৈরি করে থাকে হ্যাকাররা। মূলত সেসব ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকারদেরই তৈরি এবং এর ওপর সকল নিয়ন্ত্রণও থাকে হ্যাকারদের হাতে। হুবহু আসল সাইটের অনুরূপ দেখতে ঐসব লিংকে প্রবেশ করলে অ্যাকাউন্টের ইমেইল, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি ইনফরমেশন দিতে বলা হয় ব্যবহারকারীকে। আর যদি একবার সেগুলো দেয়া হয় তাহলে আসল সাইটে থাকা অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন সেসব চলে যায় হ্যাকারের কাছে। হ্যাকার যে লিংক দিয়ে ব্যবহারকারীকে বোকা বানানোর মাধ্যমে নিজের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করালো সেই লিংকটিকেই বলা হয় ফিশিং লিংক।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন বেশ কিছু ফিশিং স্ক্যাম হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করতে পেরেছেন। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো জিমেইল অ্যাকাউন্ট এবং নেটফ্লিক্স আইডির দখল নেওয়া। হ্যাকাররা ইউজারের মেইল ইনবক্সে একটি মেইল পাঠায় যেখানে সে অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করতে বলা হয়। এমনটা না করলে ইউজারের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় সেই মেইলের মাধ্যমে। মূলত এসব দেখে বিভ্রান্ত হয়ে ইউজার ঐ লিংকে প্রবেশ করে। সেই লিংকে প্রবেশ করলে ইউজারকে নতুন করে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিতে বলা হয়। ইউজার সেটি দিয়ে দিলেই ঐ অ্যাকাউন্টের সকল তথ্য হ্যাকারের নিকট চলে যায়।

একজন পেশাদার ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপারকে দিয়ে কোনো সাইটের অনুরূপ হুবহু দেখতে আরো একটি সাইট নকল করে তৈরি করা হলে একজন সাধারণ ইন্টারনেট ইউজারের পক্ষে টা বোঝা কষ্টকর। আর ফিশিং লিংকের মাধ্যমে তেমন কোনো সাইটে গিয়ে নিজের তথ্য দিলে সহজেই সেগুলো অন্যজনের হাতে চলে যায়। উইন্ডোজ পিসি ইউজারদের থেকে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ইউজাররা এ ধরনের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ অ্যান্ড্রয়েডে ব্রাউজার ব্যতিত ওয়েব সাইটের ইউআরএল লিংক দেখা যায় না।

ফিশিং লিংকের সাহায্যে হ্যাকিং বেশ পুরনো একটি হ্যাকিং কৌশল। যদি কথা বলা হয় তাহলে মেইলের ক্ষেত্রে মেইল সার্ভার অনেক ফিশিং সাইটকেই স্প্যাম করে দেয়। তবে এখন নতুন কিছু ফিশিং স্ক্যাম হচ্ছে, যেখানে ফিশিং লিংকটা স্প্যাম ফোল্ডারকে বাইপাস করে সরাসরি ব্যবহারকারীর মেইল ইনবক্সে চলে যাচ্ছে। আর ব্যবহারকারীও সাধারণ মেইল মনে করে সেটতে ক্লিক করে ফেলছে। এজন্য সব সময় চোখ কান খোলা রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে নিরাপদে থাকাটা অনেকাংশেই সম্ভব। আর একটি বিষয় হলো, আপনার ব্যবহৃত ডিভাইসে অবশ্যই ভালো মানের প্রতিনিয়ত আপডেটেড একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন