আমরা কি পারিনা ওদের পাশে দাড়াতে!!

আমরা সর্বদাই আমাদের নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি,কেন? আমাদের কি সমাজের প্রতি কোন দায়িত্ব নেই! আছে, কিন্তু আমরা তা ভুলে যাই। ভুলে যাই আমরাও সমাজের কেউ। সেদিন, কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়েছিলাম আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য। আমি যাত্রী ছাউনিতে বসে ছিলাম।অদূরেই একটি ছেলে, বয়স আট কি দশ হবে। ময়লা আর ছেড়া পোশাক পরিহিত ছেলেটি একজন টাই কোর্ট পরিহিত ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে বলল,কিছু টাকা দিবেন, পেটে খিদে। ভদ্রলোক শুনেও না শোনার ভান করে তার ছোট ছেলেটির হাত ধরে চলে গেলো।ভদ্রলোকের ছেলেটির বয়েসটা হবে ৮/৯ বছর,দামী ব্লেজার ও সুট পরিহিত। একই বয়সের দুটি বাচ্চা – একজনের পড়নে ময়লা ও ছেড়া জামা কাপড় আর অন্য জনের পড়নে দামী ব্লেজার ও স্যুট। এটাই বুঝি আমার দেশ,আমার দেশের সমাজ।

ভদ্রলোক তার ছেলের হাত ধরে এ্যালিয়েন গাড়ী চেপে চলে গেল।আর ক্ষুধার্ত ছেলেটি ফ্যাল ফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।আমি দূর থেকে সব দেখছিলাম।আমি ছেলেটির কাছে গেলাম, বললাম,তুমি কি খেতে চাও?

— আমি শুধু এক প্লেট ভাত আর মাংস খেতে চাই।

আমি ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে পাশের একটি খাবার হোটেলে বসে গেলাম।ওয়েটারকে বললাম,মাংস আর ভাত দাও।কিছু সময় পরে ছেলেটির সামনে এক প্লেট ভাত আর মাংস দেয়া হলো।ভাত ও মাংস দেখে ছেলেটির চোখ জলে টলটলে করছিলো।আমি বিষয়টি খেয়ার করলাম।

ছেলেটি একটুও দেড়ি না করে খেতে আরম্ভ করলো।দেখে মনে হলো, এক যুগ পরে কিম্বা জীবনে প্রথম ছেলেটি মাংস ভাত পেল।আমি জিজ্ঞেস করলাম,তোমার জীবনে কোন স্বপ্ন আছে?

— আছে।

–কি?

মাঝেমধ্যে এক প্লেট মাংস-ভাত।

আমি অবাক।এমন বয়সি ছেলেদের আপনি চাওয়া পাওয়ার কথা জানতে চাইলে হরহামেশাই বলে দেবে খেলনা গাড়ী বা খেলনা জাতিয় কোনো বস্তুর কথা! আর ও…

খাবার শেষে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,তুমি এখন কি ভাবছ? ছেলেটি একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,যদি প্রতিদিন আজকের দিনের মত হত!

আমাদের সমাজে এই নিষ্পাপ শিশুদের জন্মগত অধিকার এক প্লেট ভাত আর এক প্লেট মাংস পাবার।অথচ আমরা ওদের উপেক্ষা করে চলে যাই,নিজেদের জীবন সাজাই।আমরা শুধু আমাদের জীবন নিয়ে ভাবি,আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি,আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি,কিন্তু ওদের নিয়ে ভাবার কেউই নেই!

আমাদের দেশে যে শিশুদের সারাজীবনের একমাত্র স্বপ্ন এক প্লেট ভাত আর মাংস,তাদের সেই মনের আশা পূর্ণ না করে আমরা দেশের উন্নতি করে চলেছি- বড়ই বেদনাদায়ক কথা।

এমন স্বপ্নের কথা কি ভাবা যায়? এমন হাজারো শিশু আপনার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আজ তাদের খোঁজ আমরা নেইনা।কিন্তু তারা যখন ভোটার হবে,এদেশের নাগরিকত্ব পাবে,তখন নেতা মন্ত্রীরা তাদের খোঁজ নিশ্চয়ই করবে।কিন্তু আজ কে তাদের খোঁজ করে?

আমরা কি পারিনা,আমাদের চারপাশের অবহেলিত, ক্ষুধার্ত  ছিন্নমূল শিশুদের পাশে দাড়াতে? আমরা অবশ্যই পারি।একটু চেষ্টা করলেই পারি।এর জন্য দরকার শুধু একটু ইচ্ছে শক্তির।

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন