উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কোন ব্যাপার টা জরুরি?

উদ্যোক্তা শব্দ টির সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত।  বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া তে প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারো উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প ভেসে আসে।  উদ্যোক্তা আসলে কি জিনিস? তা আগে কানা জরুরি।

তো,উদ্যোক্তা হল এমন একজন ব্যবসায়ী যে নতুন কোন ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করেন যা আগে কেউ করেননি অথবা পূরনো কোন ব্যবসাকে নতুন একটা রূপে নিয়ে আসেন মানুষের কাছে। তিনি নতুন ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন, চালাবেন এবং কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবেন, সেখান থেকে কতটুকু লাভ করবেন তার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করেন। একজন সফল উদ্যোক্তার প্রধান গুণাবলী হল তিনি দীর্ঘ সময় পরিশ্রম করতে পারেন।

 

 

অনলাইন ও অফলাইন এ যেকোন জিনিসের বিজিন্যাসের ক্ষেত্রে একটা জিনিস খুবই লক্ষ্যনীয়, তা হলো কাস্টমারের সেটিসফেকশন।  একটি বিজনেস কে তার যোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে কাস্টমার এর সেটিসফেকশন অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।  এখন বলুন তো এই সেটিসফেকশন টা কি শুধু প্রোডাক্ট বেসড হবে নাকি বিক্রেতা বেসড নাকি প্রোডাক্ট ও বিক্রেতা উভয় বেসড হবে?

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি বলব প্রোডাক্ট ও বিক্রেতা উভয় বেসড হবে।  যেমন,  ধরুন আমি অনেক ভালো মানের কোনো প্রোডাক্ট সেল দিচ্ছি।  প্রথম বারের জন্য আমার কাছে কোনো কাস্টমার প্রোডাক্ট টি নিতে আসল।  হুম খুব ভালো।  আমি তাকে তার মন মতো প্রোডাক্ট সেন্ড করলাম।  কিন্তু তবুও কাস্টমার আমার থেকে একটু ডিসএপয়েন্টেড। এর কারণ কি হতে পারে বলুন তো?

এর কারণ হলো, বিক্রেতার কথা বলার ধরন, ম্যাসেজের ধরন। বাঙালি রা স্বভাবতই ফ্রেন্ডলি স্বভাবের।  অনেক সময় তারা নিজেরা ফ্রেন্ডলি ভাবে কথা বার্তা না বললে ও, সামনের জন থেকে চায় যেন সে ফ্রেন্ডলি আচরণ করে।  বিক্রেতার বেলায় ও ব্যাপার টা এমন।  আমার থেকে যিনি প্রথম কিনলেন তার ম্যাসেজের রিপ্লাই যদি আমি সময় মত না দি।  বা তার সাথে ফ্রন্ডলি ওয়ে তে কথা না বলি তাহলে সে কিনতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। অফলাইনের সেলের ক্ষেত্রে খোশগল্প পছন্দ করা বাঙালির সাথে হাসি ভাবে কথা বললে,তার সব কথার উত্তর ইন ডিটেইলস এ হাসি মুখে দিলে কাস্টমার অনেকাংশে সেটিসফাইড হয়। এখন প্রশ্ন আসে অফলাইনে সেলের ক্ষেত্রে কাস্টমার তো বিক্রেতা র কথা বলার ধরন /ফেস দেখতে পারেন না।  তখন আমরা কি করতে পারি?  

আমি বলব, হ্যাঁ অনলাইলে সেলের ক্ষেত্রে কাস্টমারের আকর্ষণ ধরে রাখা টা কঠিন ব্যাপার।  কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ তো নেই।  ধরুন কাস্টমার আপনাকে কোনো প্রোডাক্ট এর দাম জিজ্ঞেস করে ম্যাসেজ করল। তখন আপনি স্বাভাবিক ভাবে শুধু দাম টা বলতে চাবেন।  কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি যদি একটা সালাম বা হ্যালো র মাধ্যমে উত্তর শুরু করেন,তাহলে ব্যাপার টা আপনার নিজের কাছে ও ভালো ঠেকবে এবং কাস্টমারের কাছে।  তারপর হ্যালো সালাম এর পর যে প্রোডাক্ট টার জন্য সে দাম জানতে চাইল, তাকে সে প্রোডাক্ট এর পুরো ডিটেইলস টা ম্যাসেজে সেন্ড করতে পারেন।  এতে করে প্রোডাক্ট সম্পর্কে সে বিস্তারিত জানতে পারবে এবং কোনো রকম কনফিউশান থাকবে না। তারপর দাম টা বললেন।  তবে এই তিন ধাপের ম্যাসেজ এক টা ম্যাসেজেই লিখে দেওয়া শ্রেয়।  বারবার ম্যাসেজ করলে সে সেলার এর উপর বিরক্ত বেশি হবে।  তাই একেবারে পুরো টা দিলে, কাস্টমার এর জন্য  সুবিধা।  সে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারবে। 

তারপর যদি সে অর্ডার কনফার্ম করে তাহলে বিক্রেতা নিজে থেকে কয়দিন লাগবে প্রোডাক্ট পৌঁছাতে সে ব্যাপারে বলে দেওয়া শ্রেয়।  এতে করে কাস্টমার চিন্তামুক্ত থাকতে পারবে।

আর যদি অগ্রিম পেমেন্ট হয়।  সে ক্ষেত্রে অনেকে ফ্রড হবে ভেবে দিতে চায় না।  সে ক্ষেত্রে বিক্রেতা নিজের বিজিন্যাসকে একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাস যোগ্য অবস্থায় নিয়ে অগ্রিম পেমেন্ট এর কথা বলতে পারে।  বা ৫০% অগ্রিম পেমেন্ট বা প্রোডাক্ট তৈরি হওয়ার পর অগ্রিম পেমেন্ট বলতে পারে।  এবং কুরিয়ার বা সেন্ড করার সাথে সাথে কাস্টমার কে ছোট একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানাতে পারে।  আসলে অগ্রিম পেমেন্ট এর ব্যাপার টা সম্পূর্ণ দুই পাক্ষিক, এক্ষেত্রে বায়ারকে যেমন সেলার এর উপর বিশ্বাস রাখতে হয়, তেমনি সেলার কে বিশ্বাসযোগ্য / অনেস্ট হতে হয়। এক্ষেত্রে রিভিউ ব্যাপারটা অনেক কাজে লাগে।  সম্পূর্ণ পিওর রিভিউ।

কাস্টমার রা কোনো কিছু অর্ডার করার আগে পেজে স্ক্রল করে,লাইক কমেন্ট চেক করে এবং রিভিউ অবশ্য ই চেক করে।  তাই সেলার দের উচিত কাস্টমারদের প্রোডাক্ট পাওয়ার পর রিভিউ র ব্যাপারে বলা।  এতে করে নতুন কাস্টমারদের, ভিজিটর দের পেজের অনেস্টি, বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে জানা সহজ হয়।

যদি সেলার সময় মতো প্রোডাক্ট পৌঁছে দিতে না পারে,তাহলে কাস্টমারকে আগে ই সরি বলে কবে পাঠাতে পারবে সে বিষয়ে অবগত করা জরুরি।  এতে কাস্টমার একটু বিরক্ত হতে পারে।  কিন্তু সমস্যা বুঝে শান্ত ও হয়। কিন্তু যদি প্রোডাক্ট সেন্ড করতে লেট হয় এবং তা কাস্টমারকে জানানো হয়।  তাহলে কাস্টমার ধরেই নেয় সেলার আনফ্রেন্ডলি, আনপ্রোফেশনাল।  পরবর্তী তে কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সে।  তাই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো খারাপ সব কিছু কাস্টমার র

জিজ্ঞেস করার আগে বলে দেওয়া শ্রেয়।  

প্রোডাক্ট  পৌছানোর পর কাস্টমার কে অবশ্য জানাতে বলা উচিত। যদি সে কোনো কারণে না জানায় তাহলে সেলার দের বিরক্ত না হয়ে প্রোডাক্ট পৌঁছেছে নাকি, প্রোডাক্ট এর সব ঠিক আছে নাকি ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য ম্যাসেজ করা উচিত।  এতে করে কাস্টমারের সামনে আপনার সুন্দর ব্যবহার এর পাশাপাশি, দায়িত্বশীলতা এবং প্রফেশনাল বিহেভার ধরা পড়বে। যার কারণে কাস্টমার আপনার কাছে পুনরায় প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী হবে।  এবং প্রোডাক্ট পাওয়ার পর কনভারসেশন শেষ হওয়ার সময় অবশ্যই বলে দিতে হবে ” পুনরায় কেনার জন্য আমন্ত্রণ রইল।”

এভাবে  কাস্টমার আপনার ব্যবহার, ভালো প্রোডাক্ট এবং প্রোফেশনাল বিহেভিয়ার দেখে আপনার পেজের প্রতি আকর্ষিত হবে এবং পুনরায় কিনতে চাবে।

তবে অনেক সময় দেখা যায় প্রোডাক্ট কাস্টমারের পছন্দ হয় না,  ডিফেক্ট থাকে ইত্যাদি সমস্যা থাকে। সে সময় কাস্টমার অনেকটা রাগান্বিত হয়ে পেজপ ম্যাসেজ দেয় অনেক সময়। সেক্ষেত্র সেলার দের কখনও নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহার করা উচিত না। ক্রিযা প্রতিক্রিয়া দেওয়া টা এতে হিতের বিপরীত করে ফেলে।  তাই কাস্টমার রাগান্বিত ভাবে ম্যাসেজ দিলে সেলার যথেষ্ট ঠান্ডা মাথায় তা হ্যান্ডেল করে প্রোডাক্ট বদলাতে চাইলে তা বদলে দেওয়া উচিত।  আর যদি পছন্দই না হয় তাহলে রিফান্ড সম্ভব হলে, তা করে দেওয়া উচিত। এতে কাস্টমার সেটিসফাইড না হলে ও নেগেটিভ রিভিউ বা পেজে নিয়ে নেগেটিভ কিছু পোস্ট করতে চাবে না।

শুধু মাত্র আপনার বিহেভিয়ার এর কারণে।  এছাড়া ভালো মানের প্রেডাক্টের বিকল্প কিছু নেই।  সুতরাং, অনলাইন /অফলাইন যেকোনো বিজিনেসের সফল হওয়ার জন্য সেলার এর আচার ব্যবহার, কথা বলার ধরন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমার এই স্বল্প জ্ঞান  থেকে যা বুঝতে পারলাম তা শেয়ার করলাম।  আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।

 

ফটো কালেক্টড ফ্রম গুগল।

Related Posts