একটি এক টাকার কোয়েনের আত্মকাহিনী

আমি একটা এক টাকার কোয়েন।আমার জন্ম ১৯৯৯ সালে।আমার যখন জন্ম হয় তখন থেকেই আমার পথ চলা শুরু।আমি এক সময় মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলাম।সবাই মাথায় করে রাখতো।বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেপুলেরা।আমার জন্ম হবার পর আমাকে কি কি কাজে ব্যবহার করা হত তুমি জানো?
এক সময় তাতে আমার জনপ্রিয়তা ছিল খুব। আমি সর্বদা মানুষের পকেটে থাকতাম।আমাকে সাধারণত চকোলেট,হাটবাজার,মালাই বরফ, সিভিট,হাওয়াই মিঠাই,আমার আচার, আমড়া মাখানো, বারোভাজা,ঝাল মুড়ি ইত্যাদি কিনতে ব্যবহৃত হত।আমার একটা মানুষ বন্ধু ছিল।ওর বয়স তখন ৯ বছর।সব সময় আমাকে নিয়ে থাকতো।আমাকে কখনো একা থাকতে দিত না।ওর একটা পোষা বিড়াল ছিল।একবার ওই ছেলে টি আমাকে টিবিলের উপর রেখে আসে।কিছুক্ষণ পরে ওই বিড়াল টা এসে আমাকে নিয়ে খেলা করতে শুরু করল।এবং এক সময় আমাকে মেঝেতে ফেলে দিল।ওই ছেলেটার একটা মাটির ব্যাংক ছিল। সেই ব্যাংকে। প্রতিদিন কিছু না কিছু কোয়েন রাখতো।কিন্তু আমাকে সব সময় আলাদা রাখতো।মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ও আমাকে অন্য কোয়েন এর সাথে মিশিয়ে রাখলো।তার পরে আমি অন্ধকারাচ্ছন্ন কোয়ে গেলাম।৩ বছর পর যোখর ও ব্যাংক টি খুলে ফেললো তখন ওর সাথে আমার আবার দেখা হল।কিন্তু এক সময় সে একটা ভিডিও গেমের দোকানে গেল এবং আমাকে আরো কিছু কয়েনের সাথে ঐ দোকানে রেখে আসলো।এর পর থেকে আমি কোন মানুষের পকেটে ৩ দিনের বেশি দিন থাকিনি। হাত বদল হতে হতে আমি এক ফকিরের হতে এসে পরি।লোকটা খুব সরল মনের।কথা বলতে পারে না।বোবা।ভাবলাম তার হতে দীর্ঘ দিন থাকবো।কিন্তু আমার ভাগ্য।একটা ট্রাকের নিচে পরে তার হতে থাকা টাকা আর আমি একসাথে ছিটকে পরে গেলাম।আসলেই মানুষ জাতি যে এত নিচ হতে পারে কল্পনা করা কঠিন।কেন বলছি জানেন? ওই ফকিরটার এক্সিডেন্ট হবার পর ট্রাকে থাকা জিনিস পত্র ত কিউরি করেছেই,ফকির টার টাকা হল আমাকে ও চুরি করেছে।তার পর আমি আবার হাত বদল হতে থাকি।একবার আমি হাত বদল হতে হতে এক ক্রিকেটারের হতে পরি।তার নাম বললে আপনারা সবাই চিনবেন।তাই আর নাম বললাম না।একদিন ওই ক্রিকেটার আরেক ক্রিকেটারকে বলছিল:” ভাই এই কইন টা আপনার পকেটে রাখেন।দেখবেন সামনের ম্যাচে ইনশাআল্লাহ সেঞ্চুরি পাবেন।হ্যা তাই হল।যখন ওই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করল তখন আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল।হাজার হাজার মানুষের সামনে এই ভাবে আমি আসতে পারবো ভাবতেও পারিনি।তার পর ওই ক্রিকেটার এর কাছ থেকে কি ভাবে যেন ছিটকে এলাম।আবার হাত বদলের পালা শুরু হল।এক পর্যায় আমি এক সরকারি চাকরি জিবির কাছে এলাম।উনি একদিন তার বাসার ভাড়া মিটাতে আমাকে ব্যবহার করেছিলেন।হটাৎ করে ওই বাসের হেলপার বলে উঠলো যে “। না ভাই এই সব কোয়েন আর চলে না।নোট টাকা থাকে দিন”।বুঝলাম যখন একটা মানুষের ছেলে বড় হতে থাকে তখন তার যেমন আদর কমতে থাকে তেমনি আমার জনপ্রিয়তা কমছে।
হ্যা এক সময় আমি আর আমি রইলাম না।কোয়েন আজ বিলুপ্তির মুখে।আমাদের বড় ভাই ৫ টাকার কোয়েন বাদে আজ আমরা ১-২ টাকার কোয়েন ব্যর্থ আমাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে।আমি এখন একটা ডাস্টবিনের মধ্যে।আমার গায়ের রং সেই আগের মতই আছে।কিন্তু আমার অস্তিত্ত আর এই পৃথিবীতে নেই।
এক সময় যখন জানতে পারলাম যে ছেলেটা আমার ছোটবেলার বন্ধু ছিল ওই ছেলেটাই আমাকে সেইদিন স্টেডিয়ামে হাজার হাজার মানুষের সামনে তুলে ধরেছিল।নামটা এখন বলা যাক:
মুশফিকুর রহিম🐯🐯🐯

Related Posts