দুই বা ততোধিক বস্তুকে কোনো কিছুর মাধ্যমে সমন্বয় করার প্রক্রিয়াকে নেটওয়ার্ক (Network) বলা হয়। তন্দ্রুপ Cable, Modem বা Satellite এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে সমন্বয় করার প্রক্রিয়াকেই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা হয়। ষাটের দশকে মিনি ও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রথম নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে আশির দশকের গোড়ার দিকে পার্সোনাল কম্পিউটারের (PC) মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়া যাত্রা শুরু করে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহারের সময় একই সময়ে একটি কম্পিউটারে মাত্র একজন ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। PC তে নেটওয়ার্কিং এর ফলে একটি কম্পিউটারে একই সময়ে যেমন একাধিক ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে, তেমনিভাবে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে একাধিক কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্তকারে বলা যায় কম্পিউটারে নেটওয়ার্কের ফলে নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটার একই সিস্টেমের আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ অংশ সমন্বিত হয়ে একটি প্রক্রিয়াকরণ অংশে পরিণত হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রয়োগক্ষেত্র :
বর্তমানে নেটওয়ার্কবিহীন আধুনিক বিশ্ব কল্পনা করা যায় না। বিভিন্ন অফিস, আদালত, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, শিল্প কারখানা ইত্যাদিতে ব্যাপক হারে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কের প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন –
১. স্বয়ংক্রিয় অফিস ও কারখানা ব্যবস্থাপনা।
২. ডিসট্রিবিউটেড কমপিউটিং
৩. অগ্নি নির্বাপন ও নিরাপত্তা
৪. ই – মেইল প্রেরণ ও গ্রহন
৫. ইলেকট্রনিক বুলেটিন বোর্ড
৬. দূরবর্তী প্রোগ্রাম ও ডাটাবেসে প্রবেশ
৭. রেলওয়ে বা বিমান রিজার্ভেশন সিস্টেম
৮. ইলেকট্রনিক অর্থ স্থানান্তর
৯. হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রিসোর্স শেয়ারিং
১০. ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট
১১. টেলি ও ভিডিও কনফারেন্সিং
১২. ফাইল স্থানান্তর
১৩. ফ্যাক্স ও টেলেক্স সার্ভিস
১৪. ইন্টারনেট ফোন
১৫. ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ইত্যাদি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধা সমূহ :
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তা নিচে তুলে ধরা হলো,
১. ব্যবসায়িক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হয়তো সব ধরনের তথ্য বিনিময় বা শেয়ার করা নিরাপদ নয়। তবে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই সব ধরনের তথ্য বিনিময় করা যায়।
২. হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ারিং করা যায়, যেমন – নেটওয়ার্কভুক্ত কোনো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত প্রিন্টার অন্যান্য কম্পিউটার থেকে ব্যবহার করা যায়। একইভাবে শেয়ার যোগ্য যেসকল হার্ডওয়্যার রিসোর্স যেমন – স্ক্যানার, প্লটার, হার্ড ডিস্ক স্পেস এবং মডেম ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
৩. সফটওয়্যার রিসোর্স শেয়ার করা যায়। যেমন – কোনো প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে কেন্দ্রীয় ভাবে সফটওয়্যার ইন্সটল ও কনফিগার করা হয়, তখন ঐ সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম পুরো প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ক্লায়েন্টদের জন্য ব্যবহার যোগ্য রিসোর্স হয়ে যায়।
৪. তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। নেটওয়ার্কিং সুবিধা কাজে লাগিয়ে একটি কেন্দ্রীয় স্টোরেজ মিডিয়া বা সার্ভারে নেটওয়ার্ক ক্লায়েন্ট যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।
৫. তথ্য সুরক্ষা করা যায়। যেমন – নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয় এমন কেউ ইচ্ছে করলেই সংরক্ষিত কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে না।
৬. বার্তা বা মেসেস আদান – প্রদান করা যায়। নেটওয়ার্কভুক্ত ক্লায়েন্ট একে অপরের সাথে ইলেকট্রনিক মেইল বা ই – মেইল আকারে ডকুমেন্ট লেনদেন এবং তাৎক্ষণিক বার্তা বিনিময় করতে পারে।