কিছু কিছু অর্জন “বর্জনীয়”

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই  ভালো আছেন। আজ আমি আরও একটি নতুন টপিকস নিয়ে আপনাদের সামনে কথা বলতে হাজির হলাম। নিম্নোক্ত আর্টিকেলটি অত্যান্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি আমি সবাই উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।

মানব জীবনের স্থায়িত্ব খুবই ক্ষুদ্র। কেমন ক্ষুদ্র? যদি আমি জীবনটাকে একটি বরফের টুকরার সাথে তুলনা করি তাহলে বরফের টুকরা টি পারিপাশ্বিক তাপমাত্রার প্রভাবে যেমনি নিশ্চিতভাবে গলে তরলে পরিণত হবে ঠিক তেমনি আমাদের জীবনও বরফের ক্ষুদ্র টুকরাটির মতো স্বল্প  সময় ব‍্যবধানে শেষ হয়ে যাবে। মানুষের এই ক্ষুদ্র স্থায়িত্বের জীবনে কতই না আশা! কতই না ভরসা! আশা-ভরসা নিয়েই মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। যে জীবনে আশা ও ভরসার যৌথ সমন্বয় নেই সে জীবন এই পৃথিবীর পরম ও অনাবিল সুখ শান্তি লাভ করতে পারে না।

আমরা জানি মানুষ এই পৃথিবীতে সুখ শান্তিতে থাকার জন্য, পৃথিবীতে সকল জীবনীকরণ নিয়ে নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ অর্থ উপার্জন করে। মানুষ তার জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন কর্মসংস্থান বেছে নেয়।  নিজে এবং নিজের পরিবারকে সংরক্ষিত করার জন্য বা অভাবমুক্ত করার জন্য অর্থ উপার্জনের বিকল্প কিছু নাই।তাইতো মহান আল্লাহ আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করে রিজিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। এজন্যই আমরা এক একজন  এই পৃথিবীর মানুষের কাছে এক নামে পরিচিত হই। কেউ ডাক্তার নামে পরিচয় দিই, কেউ ইঞ্জিনিয়ার নামে পরিচয় দিই, কেউবা পাইলট নামে পরিচয় দিই, আবার কেউ নিজেকে শিক্ষক নামে পরিচয় দিই। এভাবে পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন প্রকার পেশা রয়েছে যে পেশার সাথে নিজেকে জড়িত রেখে অর্থ উপার্জন করে থাকে। সবগুলোই পেশায় আমাদের জীবনের জন্য বৈধ যদি সেটি সঠিক নীতি তে করতে পারি। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন মানুষ রয়েছে যারা শুধুমাত্র  অর্জনকেই বড় মনে করে, সেটা চাই বৈধ পথে হোক অথবা অবৈধপথে  হোক।

বৈধ পথে উপার্জনকারী মানুষগুলো দেবতুল্যে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে অবৈধপথে উপার্জনকারী মানুষগুলো বিবেকবর্জিত মনুষ্যত্বহীন মানবে পরিণত হয়। আর এই অবৈধ মানুষগুলো পৃথিবীতে দুশ্চরিত্রবান হয়। মানুষ যখন স্বীয় বিবেককে বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পন্থাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নেয় তখন তার ভেতর থেকে মনুষ্যত্ব লোপ পেতে থাকে এবং পশুত্ব বৈশিষ্ট্য  বৃদ্ধি পেতে থাকে।

অবৈধপথে অর্থোপার্জন এর মধ্যে রয়েছে সুদ ও ঘুষ গ্রহণ, চুরি করা, ডাকাতি করা, ছিনতাই করা, অন্যের মাল আত্মসাৎ করা, অন্যের সম্পদ মিথ্যা ছলনায় আত্মসাৎ করা, নিজস্ব আধিপত্য দেখিয়ে অন্যর সম্পত্তিকে নিজের নামে লিখে নেওয়া,  এছাড়া অর্থ উপার্জনের আরো অনেক অবৈধ পন্থা আছে এক কথায় বিবেক বহির্ভূত কাজে বা পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করে উক্ত পেশা বা উৎস হতে অর্থ উপার্জন করে যারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তারাই হল সবচেয়ে দুশ্চরিত্রবান, অভিশপ্ত ও পৃথিবীর মানুষের জন্য আতঙ্কের নাম।

এই মানুষগুলোই স্বীয় মানবিক মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুতে বৈশিষ্ট্যে নিজেদেরকে লালিত করছে।  আমাদের সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে এরকম অহরহ অসৎ পন্থায় অর্থ উপার্জনকারী মানুষ দেখতে পাবো। আবার বড় বড় চেয়ারে অধিষ্ঠিত সরকারি বা বেসরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা যারা অনেক সময় ঘুষ গ্রহণ করে নিজস্ব ক্ষমতা বলে অনেক অযোগ্য মানুষকে চাকরি দিয়ে থাকেন।  এরাই নিজস্ব মনুষ্যত্ব হারিয়ে বিবেকবর্জিত এক নিকৃষ্ট মানব এ পরিণত হয়েছে, যদিও তার কথিত শিক্ষা আছে কিন্তু সুশিক্ষা নেই।

যদিও তার পতিপত্তি আছে কিন্তু তার নৈতিকতা,  সুচরিত্র নেই। এরা শিক্ষিতের পোশাক পরিধান করে মানুষের কাছ থেকে যুগ যুগ ধরেই সম্মান আদায় করে নিচ্ছে। আমি বলি সম্মান পাওয়ার যোগ‍্য নয় বরং এরা সবচেয়ে মূর্খ, চরিত্রহীন লম্পট, বেয়াদব তাই এই সমস্ত ব্যক্তিদের থেকে ভালো কিছু শিক্ষা আশা করা যায় না।

পৃথিবীতে হালাল এবং হারাম উভয় উপায়েই অর্থ উপার্জন করা যায়। এজন্য মানুষ হিসেবে অর্থাৎ মানবিক গুণাবলী, মনুষ্যত্বের অধিকারী, মানবিক মূল্যবোধ চর্চাকারী একজন যোগ্য উপযুক্ত  মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে আমাকে আপনাকে সৎ পন্থায় অর্জন করতে হবে।

অসৎ পন্থা বর্জন করতে হবে এজন্যই আমি উক্ত টাইটেল এর শিরোনামে সকল অর্জনকে গ্রহণ করতে বলি নাই বরং কিছু কিছু অর্জন কে বর্জন করার জন্য পাঠক সম্প্রদায় কে পরামর্শ দিয়েছি। বিশেষভাবে সবিনয় অনুরোধ করছি অর্থ উপার্জন করুন তবে বৈধ পন্থায়। মনে রাখবেন অর্থ প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে না। নিজের  সততা দিয়ে অর্জিত অর্থ এবং  নিজের মানবতা বা মানবিক মূল্যবোধ চর্চা এগুলো আপনাকে বড় করবে, এগুলো আপনাকে শান্তিতে রাখবে।

এই জন্য সকল অর্জনকে গ্রহণ না করে আমরা কিছু কিছু অর্জন কে বর্জন করে সঠিক পন্থায় উপার্জন করে আমাদের জীবনকে পরিচালিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পন্থায় অর্জন বা উপার্জন কাজ করার তৌফিক দান করুন আমিন।।

Related Posts

20 Comments

মন্তব্য করুন