গরুর আঠালি দূর করার উপায় | করণীয় কি?

আজকের পোস্টে আমরা গরুর একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা আটালি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। আটালি কি, গরুর আটালি কেন হয়, গরুর আঠালি দূর করার উপায় নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি।

আটালি আসলে কি?

আটালি আসলে কি

যেসকল প্রাণী অন্য কোনো প্রাণীর ভিতরে বা উপরে আশ্রয় নেয় ও উক্ত প্রাণীর মাধ্যমেই বেঁচে থাকে তাদেরকে পরজীবী বলে। যেসকল পরজীবী কোনো জীবের দেহের বাহিরের অংশে লেগে তার পুষ্টি শোষণ করে বেঁচে থাকে সে পরজীবীগুলোকে বহি:পরজীবী বলে। আটালি হলো বহি:পরজীবী।

কারণ আটালি সাধারণত গরুর চামড়ার সাথে লেগে থাকে এবং তার রক্ত শোষণ করে থাকে। আটালি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন: শক্ত আটালি ও নরম আটালি। আবার পোষকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করেও আটালি দুই প্রকার যা হলো একক পোষক আটালি ও বহু পোষক আটালি।

গরুর আটালি কেন হয়?

গরুর আটালি কেন হয়

আমাদের দেশে গরু সহ প্রায় সব গবাদিপশু যেমন: ছাগল, ভেড়া, হাস-মুরগি ইত্যাদিও আটালি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের দেশে মূলত গ্রীষ্মকালে গবাদি পশুরা আটালি রোগে আক্রান্ত হয়। কিছু কিছু আটালি অনেক বড় হয়ে থাকে আবার কিছু রয়েছে যা অনেক ছোট।

আটালির শক্ত একটি আবরণ থাকায় সাধারণত এরা কীটনাশক দিলে মারা যায় না। আটালি প্রাণীর কান, পা, তলপেট, মলদ্বারের পাশে, পায়ের কুঁকচির মধ্যে ও লেজের মাথায় বেশি দেখা দেয়। এরা সাধারণত সবসময় পোষক বা গরুর গায়ে লেগে থাকে না।

দিনের বেলায় রক্ত খেয়ে পরে রাতের দিকে শরীর থেকে নেমে ময়লা-আবর্জনা, ছোট গর্ত, বেড়ার ফাঁক ইত্যাদি স্থানে অবস্থান করে। শোষণকৃত রক্ত যখন শেষ হয়ে যায় তখন তারা আবার বের হয়ে পোষকের গায়ে লেগে রক্ত শোষণ করা আরম্ভ করে। ও মাঝে মাঝে পোষকের গায়ে বা চামড়ায় ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি করে।

গরুর আটালি হলে কি হয়?

গরুর আঠালি দূর করার উপায় | গরুর আটালি হলে কি হয়

আটালি গরুর রক্ত থেকে রক্ত শোষণ করে। এর ফলে গরুর চুলকানি বা এলার্জি হতে পারে। এর ফলে গরু সবসময় অস্বস্তি ও অস্থির বোধ করে। খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলতে থাকে। এবং খাবার কম গ্রহণের জন্য ধীরে ধোরে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে।

আটালির কামড়ের জন্য প্রাণী বিভিন্ন বস্তু যেমন দেয়াল, ইট বা কাঠের সাথে শরীর ঘষে ফলশ্রুতিতে চামড়া ও শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়। আটালি যেহেতু রক্ত শোষণ করে কাজেই গরুর রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে তাই গরু দুর্বল বোধ করে।

গরুর আঠালি দূর করার উপায় | গরুর আঠালি

নবজাতক বাছুর আটালি দ্বারা আক্রান্ত হলে বাছুর রক্তশূণ্য হয়ে মৃত্যুবরণও করতে পারে। বিশেষ প্রজাতির আটালির লালাগ্রন্থি থেকে বিশেষ এক ধরণের পদার্থ নি:সরণ করে যা পোষক প্রাণীটিকে দুর্বল বা অবসাদগ্রস্ত করে ফেলে। আটালির দ্বারা অন্যান্য নানা রোগের সংক্রমণও ঘটতে পারে।

এতাহিমোপ্রোটিয়াস, লিউকোসাইটেজুন, অনকোসারকা, মানসোনেলা প্রভৃতি ভয়াবহ অন্ত: পরজীবী ছড়াতে পারে। গরু দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ও না খাওয়ার ফলে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে। যাতে আপনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

গরুর আঠালি দূর করার উপায়

গরুর আঠালি দূর করার উপায় | গরুর আঠালি দূর করার উপায় 2

গরু আটালি দ্বারা আক্রান্ত হলে সাধারণ কীটনাশক ব্যবহার করে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাদের জন্য বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। আর এ বিশেষ কীটনাশক শুধুমাত্র আক্রান্ত প্রাণীকে দিলে হবে না, খামারের সকল প্রাণীকে দিতে হবে। কেননা কিছু আটালি রয়েছে যা সংক্রামক ও বহু পোষক।

প্রতি ৫০ কেজির জন্য ১ মিলি Inj. Ivertin/Ivermactin চামড়ার নিচে বা Ivermactin Pour on মেরুদন্ডের ওপর ফোঁটা ফোঁটা করে প্রয়োগ করতে হবে। Cypermethrin/ Pyremethrin/ Bifenthrin/ Carbaryl/Negutox প্রস্তুতকারী কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।

গরুর আঠালি দূর করার উপায় | গরুর আটালি

প্রয়োজনে প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। খামারে যে ঘরে গরু রাখেন সে ঘর ভালোমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন ঝোপঝাড় বা স্যাতস্যাতে কোনো স্থান যেন ঘরে না থাকলে। যদি সেডে কোনো আবর্জনা বা স্যাতস্যাতে স্থান না থাকে তাহলে আটালি থাকার কোনো স্থান পাবে না ফলে আটালি অনেকটাই প্রতিরোধ হবে।

গ্রীষ্মকালে আটালির আক্রমণ বেশি হয় তাই এসময় বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গোবরের স্তূপ সেড থেকে দূরে করতে হবে। যদি কোনো প্রাণী আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয় কিংবা আপনার যদি মনে হয় যে আটালির আক্রমণ শুরু হয়েছে তাহে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এর ফলে আপনি ব্যাপক বড় মানের অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

গরুর আরও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতির রোগ:

গরুর আঠালি দূর করার উপায় | গরুর আরও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতির রোগ

গরু বা অন্য যেকোনো গবাদিপশু আটালি ছাড়াও নানা ধরণের পরজীবী বা কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া মাছি বা উকুনের দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। এর পাশাপশি মশার জ্বালাও রয়েছে। মশার হাত থেকে কিভাবে বাঁচতে হবে তা নিয়ে একটি আর্টিকেল রয়েছে। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। এর পাশাপাশি গরু নানা ধরণের মৌসুমী রোগ যেমন জ্বর হতে পারে। এ ব্যতীত কিছু সাধারণ রোগের মধ্যে রয়েছে গলাফুলা, বাদলা ও ক্ষুরা রোগ।

গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা:

গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা

গরু ছোট বা বাছুর থাকা অবস্থায়ই বেশিরভাগ সাধারণ রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে। আপনি যদি কোনো রোগ বুঝতে পারেন তাহলে ওষুধ দিন। এর পাশাপাশি গরু বেশি অসস্থ হয়ে পড়লে তাকে অবশ্যই পশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা পশু হাসপাতালে নিয়ে যান। মাঝে মাঝেই হাসপাতালে চেক আপ করতে নিয়ে যান।

পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts