বর্তমান সময়ে ওয়েব ব্রাউজারের দুনিয়ায় গুগল ক্রোম যে একটি বিশাল স্থান দখল করে আছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।গুগলের তৈরি এ ব্রাউজারটি ২০০৮ সালে প্রথম মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য প্রকাশিত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে এটি লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রোসহ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি হয়।২০১৯ সালের আগস্ট মাসের একটি সার্ভে তে দেখা যায় এটি পুরো ব্রাউজার মার্কেটের ৭১% দখল করে আছে,অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তমবাজার দখল করে আছে মজিলা ফায়ারফক্স যার কিনা ৯.৫২% মার্কেট শেয়ার রয়েছে।প্রদক্ত ডাটা থেকে গুগল ক্রোমের আধিপত্য সহজেই বোঝা যায়।
শুধু আধিপত্যই নয় গুগল ক্রোমের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অসুবিধা। প্রথমত এটি অতিরিক্ত রিসোর্স হ্যাভি , দ্বিতীয়ত যে বিষয়টির জন্য আমি ভয়াবহ উদ্বিগ্ন হয়েছি তা হলো প্রায়ভেসী ইশ্যু, গুগল ক্রোমো হলো বিস্তৃত ডাটা সংগ্রহের সম্ভার, এবং ইউজার হিসেবে আমরা আমাদের সমগ্র ওয়েব ডাটা গুগলে ছড়িয়ে দিচ্ছি,যদি এরকম সমস্যা আপনারা ও অনুভব করে থাকেন তবে গুগল ক্রোমো কে সুইচ করার এটাই মুখ্য সময়,এই আর্টিকেলে আমি ৫ টি চমৎকার ব্রাউজার এর গল্প করবো। আমরা আমাদের লিস্ট টি করার পূর্বে আরো একবার দেখে নেই গুগল ক্রোমের কোন কোন সমস্যার জন্য আমাদের সুইচ করা দরকার।
why we should suitch from google chrome/ গুগল ক্রোমের অসুবিধা
(১) এটি অত্যেন্ত রিসোর্স হ্যাভি, একটা ব্রাউজার হিসবে এটি আপনার কম্পিউটারের অসংখ্য রিসোর্স ব্যাবহার করে।
(২) আপনার যদি একটা budget অথবা পুরোনো device থাকে আপনি গুগল ক্রোম থেকে সুইচ করার মাধ্যমে এটিকে দ্রুততর করতে পারেন। এটি মোটেও কোন ফাস্ট ব্রাউজার নয়।
(৩)গুগল ক্রোমের একটি অটো ট্র্যাকিং ফিচার রয়েছে যা আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করে থাকে। অর্থাৎ, আপনি কি কি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, কি ধরণের কন্টেন্ট ভিউ করছেন, আপনার পছন্দ-অপছন্দসহ যাবতীয় সব ডাটাই গুগল আপনার অজান্তেই কালেকশন করে নেয়। এর জন্যে গুগল বেশ কয়েকবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে জরিমানাও দিয়েছে।
সারকথা বলতে গেলে ক্রোমো আসলে গুগলের একটি বিজ্ঞাপন সেবাপ্রদানকারী প্রোডাক্টমাত্র, এটি আমাদের প্রায়ভেসী গোপন রাখে না,,আমাদের সকল ধরনের চয়েজ কে পুজি করে তারা বিজ্ঞাপন তৈরী করে সর্বপরি বিভিন্ন কম্পানীর হয়ে কাজ করে।এই বিষয়টিই প্রধান চিন্তার কারন হয়ে দ্বাড়ায় এবং অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করার ব্যপারে এটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।সুতরাংএই আর্টিকেলের মেইন থিম এ চলে এসেছি,,৫টি ব্রাউজার সম্পর্কে বিস্তারিত লিখছি যা আপনাদের গুগল ক্রোম থেকে রিপ্লেসের ব্যাপারে সহয়তা করবে।
List of Browsers that Can Replace Google Chrome
1. Mozilla Firefox Quantum
একটা সময় পর্যন্ত গুগল ক্রোমো খুব স্পিডি ব্রাউজার ছিলো,এর কিছু ফল্ট থাকা সত্তেও অন্য কোন বিকল্প ব্রাউজার সাজেস্ট করা ডিফিকাল্ট ছিলো,কিন্তু বর্তমানে মজিলা ফায়ারফক্স এ রেকর্ড ভঙ্গ করে লাখো ইউজারের সন্তুষ্টি নিয়ে এসেছে।কারন
১- শুরু থেকেই এটি তে নতুন ও পাওয়ারফুল ইন্জিন ব্যাবহার করায় এটি খুব ফাস্ট কাজ করে এবং লোডিং টাইম ও কম নেয়।
২-আর গুগল ক্রোমো তে সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিলো যে কম্পিউটারের অধিক মেমোরি ব্যবহার করে ফায়ারফক্সের ক্ষেত্রে খুব কম পরিমান মেমোরী ইউজ করে।
৩- Mozilla firefox এ একি সময়ে ডজন খানেক ট্যাব ওপেনের ক্ষেত্রে ও কোন নোটিসিয়েবল সিস্টেম ও স্লোডাউন দেখি নাই। গুগল ক্রোমের তুলনায় এটি ৩০% কম পরিমাম মেমোরী কনজিউম করে।
৪- প্রায়ভেসী রক্ষার ক্ষেত্রে এটি প্রশংসনীয় ভুমিকা রাখে,আপনার প্রায়ভেট ব্রাউজিং এর সময় কাজ শেষ করা পর এটি শুধু আপনার সকল ডাটা ডিলিটই করে না বরং অনলাইন ট্র্যাকিং কে ব্লক করে দেয় যা কিনা আপনাকে বিজ্ঞাপনের জন্য গিনিপিগ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারতো।যদি আপনি ক্রোমের অল্টারনেট কিছু খোজেন তাইলে আমি দ্যার্থহীন ভাবে সাজেস্ট করছি একবার মজিলা ব্যবহার করুন,,আশা করি মজিলা তে আপনি মজে যাবেন সেখান থেকে ব্যাক আসবেন না।
2. Brave Browser
বর্তমানে Brave browser টি আমার প্রিয় একটি ব্রাউজার এবং আমার সকল প্রয়োজন পূরনের কাজে আমি এটা ব্যবহার করি। এটি স্পিডের দিক দিয়ে ক্রোমো এর মতই, প্রায়ভেসী রক্ষার ক্ষেত্রে ভালো। ফিচার নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে এটি গুগল ক্রোমের রেপ্লিকা, গুগল ক্রোমো যে ক্রোমিয়াম ইন্জিন ব্যবহার করে এটি ও তাই দিয়ে তৈরী।তারপরো এটি আমি রিকমেন্ড করছি কারন এর প্রায়ভেসী রক্ষার দক্ষতা বেশ সানিত।এটি ট্র্যাকিং ব্লক করে এবং HTTPS upgrader সহ তৈরী।এটি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ট্র্যাকিং পিক্সেল এবং খারাপ ধরনে ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে প্রোটেক্ট করবে।এটি মার্কেটে বর্তমান সময়কালের বেস্ট একটি ব্রাউজার।
3. Opera
এই ব্রাউজারটি ও ক্রোমিয়াম ইন্জিনের দিক থেকে ক্রোমো এর মতই। প্রারম্ভিক ফিচারগুলো বাদে এর রয়েছে নিজস্ব ফিচার সেট যা ব্রাউজারটিকে অনন্য করে তুলেছে।এতে রয়েছে আনলিমিটেড VPN টুল।আপনার IP adress তেরীর দ্বারা আপনার প্রায়ভেসী রক্ষা করে। অপেরা তে আ্যাড ব্লকার সুবিধা রয়েছে ,,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছে opera Turbo mode যা কিনা আপনার ডাটা সংকোচন কে সমর্থ করে।অর্থাৎ কম পরিমানে ডাটা ব্যাবহার করে। এছাড়া এটার ব্যাটারী সেভার মোড আছে যার ফলে অল্প ব্যটারী কনজিউম করে, ৫০% এর উপরে ব্যাটারী লাইফ দিয়ে থাকে।এতো গুলো ফিচার সমৃদ্ধ ব্রাউজারটি আপনাদের একবার ব্যবহার করতে সাজেস্ট করছি আশা করি উপকৃত হবেন।
4. Tor Browser
যদি আপনি প্রায়ভেসীকে সবার উপরে গুরুত্ব দেন তবে আপনার জন্য টর ব্রাউজার হচ্ছে সেরা সমাধান।ক্রোমো ইউজের ক্ষেত্রে ডাটা কালেকশন পলিসি নিয়ে আমি প্রচন্ড উদ্বিগ্ন ছিলাম।কিন্তু tor browser টি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার ডাটা কেউই ট্র্যাক করতে পারবে না।আপনি বেনামেই সুন্দরভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন,একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন।
5. Vivaldi
গুগল ক্রোমো কাস্টোমাইজেবল আ্যাবিলিটির একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।যদি আপনি এমন একটি ব্রাউজার চান যেখানে কিনা আপনার ইচ্ছেমত শেপে কাস্টমাইজড করা যাবে তবে অবশ্যই আপনাকে vivaldi ব্যবহার করতে পরামর্শ দেবো।এটিতে ১ টনের উপর ফিচার আছে যা কিনা আজ পর্যন্ত কোন ব্রাউজার অফার করেনাই। আপনারা মডার্ন কাস্টমাইজেবল থিম ব্যবহার করতে পারবেন।এতে আপনারা এডিটেবল সাইডবার পাবেন যা কিনা আপনাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট যুক্ত করতে আ্যলাউ করে।এ ব্রাউজারে আমার সবচেয়ে প্রিয় ফিচারটি হলো adaptive interface।আপনি যে ওয়েবসাইটটি দেখেন এটির মেইন কালারটি ই ব্রাউজারটি তুলে নেয় এবং উক্ত কালার ই এটি ইউজ করে। এ ব্রাউজারের আরেকটি ফিচার, ওপেন ট্যাব কে sessions হিসেবে সেভ করা,চমৎকার কিবোর্ড সর্টকার্ট,ও অন্যান্য আরো বিষয়াদির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া এটি এটি ব্যাবহৃত ডাটা কালেক্ট বা ট্রাকিং করে না,এক্সট্রা সিকিউরিটি প্রদান করে ।সুতরাং এই ব্রাউজারটি নিশ্চিতভাবে আপনার ব্যবাহার করা দরকার।আশা করি পোস্টটি আপনার উপকারে এসেছে,শুভকামনা সবার জন্য।