গ্রাফিক ডিজাইনের জনপ্রিয় ও কার্যকরী টিপস।

আপনি যদি ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইন এডস এর জন্য ডিজাইন তৈরি করতে চান সেক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইনে আপনার ডিগ্রির দরকার হবে না। আপনার শুধু আপনার ব্রেইনকে কিছু সর্বোত্তম ডিজাইন চর্চা দ্বারা মুড়িয়ে ফেলতে হবে।

আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনে বিগিনার হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই এমন কিছু উচ্চ প্রভাবের টিপস খুঁজছেন যা আপনাকে এই ফিল্ডে দ্রুত উন্নতি করতে এবং এই ফিল্ডে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।ডিজাইনাররা সাধারণত ব্র্যান্ড, বিজ্ঞাপন, পুস্তিকা, ফিজিকাল স্পেইস, ডিজিটাল স্পেইস, এনিমেশন ইত্যাদি ডিজাইন তৈরি করে। ডিজাইন অনেকাংশে আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে এবং একটি সুন্দর বিশ্ব গঠনেও ভূমিকা রাখে।

এখন হয়তো আপনি ভাবতে পারেন, কীভাবে আপনি একটি ভালো ডিজাইন বানাতে পারেন? কিংবা একজন বিগিনার হিসেবে কীভাবে এটি অর্জন করবেন? দাড়ান! গ্রাফিক ডিজাইন কঠিন কোনো বিষয় নয়! যদি আপনি একবার এটি ক্যাচ করে ফেলতে পারেন তাহলে আপনাকে ঠেকায় কে? যাই হোক, সুখবর হচ্ছে যে গ্রাফিক ডিজাইন এর প্রত্যেকটা ধাপই খুব সহজ যদি আপনি এটাকে সহজভাবে নেন। আপনি বিগিনার হলে প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইনের সাথে আন্ডারস্টেন্ডিং ভালো করতে হবে তারপর প্রাকটিস আর প্রাকটিস। আর তারপর?

তারপর আর কী? হয়ে উঠুন একজন ভালো মানের প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনার! এই আর্টিকেলে আমি কিছু টিপস রেখেছি যা সকল নন-ডিজাইনারদের জানা দরকার। আপনি যদি এগুলো অনুসরণ করেন, ভালো ছাড়া মন্দ কিছু হবেনা আশা করি।

  • একটি পরিকল্পনা

ডিজাইন করা বা ডিজাইনে ঢুকার আগে, ডিজাইনের ধরণ নিয়ে পরিকল্পনা করা আবশ্যক। যদি আপনি একজন ভালো মানের গ্রাফিক ডিজাইনার হতে চান।আপনি আপনার ভিওয়ারস দের আপনার ডিজাইনে কী দেখাতে চান, আপনার ডিজাইনটি কতটা অসাধারণ হবে বা কতটা ইউনিক হবে ইত্যাদি এগুলোর রোড ম্যাপ বা প্লান ঠিক ডিজাইনিং শুরু করার আগ মুহূর্তে আপনাকে বানাতে হবে। আপনি যেই ডিজাইনটি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন সেটির উপর যথাযথ রিসার্চ করে আপনি একটি ভালো মানের প্লান তৈরি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে গুগল বা ইউটিউভ বা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে পারেন। তবে গুগল আর ইউটিউভই বেস্ট।

  • একটি ভালো মানের কালার পেলেট দিয়ে শুরু করা।

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, সেরা ডিজাইনগুলোর কালার সেরা হয়ে থাকে? ভালো মানের কালার পেলেট পছন্দ করা ভালো মানের ডিজাইনের চাবিকাঠি। বিশ্বাস করেন কিংবা না! অনেকাংশে একটি নিম্ন মানের ডিজাইন আর উচ্চমানের ডিজাইনের পার্থক্য কালার পেলেট দ্বারা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, নিম্নমানের ডিজাইনটির কালার পেলেট স্বচ্ছ কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয় না। যা উচ্চমানের ডিজাইনটির কালার পেলেটের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। গুগলে একটি ডিজাইনের জন্য কালার পেলেটের অসংখ্য রিসোর্স পাবেন। তার মধ্যে আছে –

“Pigment by Shapefactory”,

“Coolors”,

“Adobe Color” ইত্যাদি।

তবে একটি ডিজাইনের জন্য একটি ভালো মানের কালার পেলেট নির্বাচন করা সবসময় সহজ হয়ে উঠেনা। এক্ষেত্রে সলিউশান হচ্ছে যথেষ্ট রিসার্চ আর গুগল থেকে ভালো মানের রিসোর্স বের করা।

  • ফন্ট সংখ্যার ব্যবহার লিমিটের মধ্যে রাখা।

উচ্চমানের প্রফেশনাল ডিজাইনার হতে চাইলে কিছু সংখ্যক ফন্টের ভেতরে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কারণ আপনার কাছে ফন্টের অপশান থাকবে মিলিয়ন প্লাস। তাই, আপনি যদি একটা ডিজাইনের ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক ফন্টের ভেতর নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারেন তাহলে ওই মিলিয়ন প্লাস ফন্ট নিয়ে বোর হওয়ার পাশাপাশি দুর্বিপাকে পড়তে পারেন। আবার ডিজাইন করার ক্ষেত্রে উদাসীনতাও চলে আসতে পারে।

অনেক এক্সপেরিয়েঞ্চেড ডিজাইনাররা একেকটি ডিজাইনে ভিন্ন ভিন্ন ফন্ট ব্যবহার করার কথা বললেও ফন্টের বিপুল সংখ্যক সমাহার নিয়ে বোর না হওয়ার কথাটিও বলেছেন।

তাই, সবসময়ই মন চাইলেও ওই মিলিয়ন প্লাস ফন্টের দুনিয়ায় না ঢোকার চেষ্টা করবেন।

  • সিম্পল রাখা।

মানসম্মত গ্রাফিক ডিজাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি টিপস হচ্ছে ডিজাইনটিকে সিম্পল রাখা। একটি এলোমেলো বা অগোছালো ডিজাইনের চাইতে খারাপ আর কী হতে পারে? যা কি-না বুঝা এবং দেখা উভয় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

একটি ডিজাইনকে উচ্চ মান কিন্তু সিম্পল রাখার অনেক উপায় রয়েছে। তার মধ্যে কিছু হলো-

  • টেক্সট আর ফন্টের ব্যবহার মিনিমাম রাখা,
  • ডিসপ্লে, কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যালেন্স বজায় রাখা,
  • ইলিমেন্টসের সংখ্যা কম রাখা,
  • ডিজাইনের মূল বার্তাটি পরিষ্কার রাখা,
  • ভিওয়ারস দের চোখের জন্য ক্ষতিকর এমন কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড বর্জন করা।

এছাড়াও সিম্পল ডিজাইনের অনেক স্যাম্পল গুগল/ইউটিউভে পাওয়া যাবে। আপনি সঠিকভাবে একটু রিসার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

  • এলাইন।

ডিজাইন এর ক্ষেত্রে এলাইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। টেক্সট এর সঠিক এলাইন নির্বাচন ডিজাইনকে পরিপূর্ণ করে।

সঠিক এলাইনমেন্ট এর ব্যবহার হচ্ছে ডিজাইনের প্রফেশনাল এবং স্ট্যান্ডার্ড লুকিং এর অন্যতম একটি সহজ পন্থা।

একটি টাইটেলের ফন্ট যদি আপনি সার্কেলে না রেখে লিফট বা রাইটে রাখেন তাহলে অবশ্যই সেটি মানসম্মত হওয়ার কথা না।

তাই, এলাইনের সঠিক ব্যবহারের উপর যথেষ্ট ধারণা রাখার চেষ্টা করবেন।

  • নিজস্ব ডিজাইন-নিয়ম অনুসরণ করা।

নিয়ম? সেটা আবার কী? একটি পথ, যা আপনি নিজের জন্য নিজেই সেট করেন।

একজন প্রফেশনাল এবং ভালো মানের গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব ডিজাইন-নিয়ম অনুসরণ করা আবশ্যিক। অন্যের কাছ থেকে বড়জোড় ধারণা নিতে পারেন কিন্তু ডিজাইন প্লান নিজস্ব হতে হবে।   

আপনি যদি যথাযথ রিসার্চ করার পরে সেই রিসার্চগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনার নিজের একটা প্লান তৈরি করতে পারেন তারপর সেই প্লান  অনুযায়ী ডিজাইন বানাতে পারেন তাহলে সেটা বেশি মানসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য হবে।

সেক্ষেত্রে, কপি করা বর্জন করতে হবে।

  • টাইপিং সহজ রাখুন।

ডিজাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহনি হচ্ছে স্বচ্ছতা। আপনাদের ডিজাইনে যখন স্বচ্ছতা থাকবে তখন সেটা দর্শককে বেশি আকর্ষিত করবে।

ডিজাইনের মূল ম্যাসেজ কিংবা অন্যান্য ম্যাসেজগুলোতে যখন স্বচ্ছতা থাকবে তখন সেটা বেশি প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে টাইপোগ্রাফির ক্ষেত্রে!

সেক্ষেত্রে ফন্টের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখা, সিংগেল ফন্ট ফ্যামিলি ব্যবহার করার চেষ্টা করা। তবে সে ক্ষেত্রে, উইট এবং স্টাইলের দিকে বিশেষ নজর রাখা।

গ্রাফিক ডিজাইনের কিছু ভালো টিপস গ্রাফিক ডিজাইন ফিল্ডের সকল বিগিনারদের জন্য আশানুরূপ কিছু।

নন-ডিজাইনার হিসেবে আপনার বানানো ডিজাইনটি হয়তোবা পলিশ কিংবা প্রফেশনাল হয়ে উঠেনা যেমনটি আপনি আশা করেন।

কিন্তু, চিন্তা করবেন না! ……

বর্তমান এই ডিজিটাল জেনারেশনে আপনি ইচ্ছে করলে অবিশ্বাস্য জিনিসগুলোও আপনার হাতের মুঠোয় পেয়ে যেতে পারেন আর সেখানে একটি স্কিল অর্জন করা সহজ কিছুর মধ্যেই পড়ে যদি আপনার মধ্যে যথেষ্ট  আগ্রহ, ডেডিকেশন, কঠোর পরিশ্রম এবং লেগে থাকার মতো মেন্টালিটি থাকে।

Related Posts