আজকের পোস্টে আমরা চোখের জন্য কোন লেন্স ভালো, চোখের লেন্সের মূল্য তালিকা, আমেরিকান চোখের লেন্সের দাম কত, চোখের লেন্সের মূল্য তালিকা ২০২৩, ইন্ডিয়ান চোখের লেন্সের দাম নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো শুরু করা যাক।
কন্টাক্ট লেন্স আসলে কি?
যে লেন্সটি সরাসরি চোখের কন্টাক্টে থাকে অর্থাৎ চোখের মনিতে বসানো হয় তাকে কন্টাক্ট লেন্স বলে। চোখের ছানি পড়লে অনেক সময় অপারেশন করে পার্মানেন্ট লেন্স বসানো হয় অথবা চোখের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য অনেকে টেম্পোরারি লেন্স পরে থাকে। তবে লেন্স পরার কিছু নিয়ম আছে।
তার সাথে মেনে চলতে হবে কিছু শর্ত। যেমন: কোনো অবস্থাতেই চব্বিশ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে লেন্স পরা যাবে না। রাতে শোবার আগে অবশ্যই লেন্স খুলে শুতে হবে। আর কোনো অবস্থাতেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর সেই লেন্স ব্যবহার করা যাবে না। এতে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
চোখে লেন্স লাগালে কি ক্ষতি হয় | চোখের লেন্স নিয়ে বিস্তারিত
কন্টাক্ট লেন্স মূলত চার ধরণের হয়। ১.হার্ড, ২.সেমি সফট ৩.সফট ৪.ডিসপোজ্যাবল। চোখের সৌন্দর্য্য বাড়াতে আজকাল সবাই লেন্স পরে চোখে। বিশেষ করে কোনো অনুষ্ঠানে অথবা বিয়েতে বউ যখন পার্লারে সাজে তখন লেন্স পরে চোখে।
লেন্স পরলে চোখের রং পাল্টে যায়। সধারণত বিড়াল চোখ অথবা নীল অথবা সবুজ রঙের লেন্সের কদরই বেশি। তবে আজকাল ঘরোয়া সাজেও কেউ কেউ লেন্স পরে থাকেন।
এখন জেনে আসি লেন্সের প্রচলন কবে থেকে শুরু?
লেন্সের প্রচলন মূলত বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু। তবে কালভেদে লেন্সের ব্যবহার যেমন বেড়েছে তেমনি গুণগত মানে পরিবর্তন এসেছে। আপনার আলগা কন্টাক্ট লেন্সের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন যেতে পারে না। তাই চোখ চুলকায়। কখনো কখনো পানি পড়ে। আবার দীর্ঘসময় চোখে লেন্স পরে থাকলে হয়তো আপনি চোখে দেখতেও পাবেন না।
কারণ কন্টাক্ট লেন্স শুকিয়ে যায় আর চোখের সাথে শক্ত হয়ে লেগে যায়। তখন হয়তো আপনার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে বা আপনি হয়তো চোখে কিছু দেখতে পাবেন না। এমন অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
এবার জেনে নেয়া যাক লেন্স ব্যবহারের পূর্বে কি কি নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে।
মনে রাখবেন, চোখ হচ্ছে আল্লাহর দান। যে চোখে দেখতে পায় না তার জন্য পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকার। তাই সাময়িক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে চোখে লেন্স পরলেও সঠিক নিয়ম মেনে পরতে হবে।
১. লেন্স পরার আগে চোখ এবং হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. এপ্লিকেটর ব্যবহার করে চোখে লেন্স পরা ভালো।
ঘরে থাকা উপকরণ দিয়েই চোখের নিচের কালো দাগ দুরিকরণ
৩. লেন্স সবসময় সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আর একদিন পর পর সলিউশন বদলে দিতে হবে।
৪. অনেকদিন লেন্স অযত্নে পড়ে থাকলে সেই লেন্স আর ব্যবহার না করাই ভালো।
৫. কোনো অবস্থাতেই লেন্স পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন না।
৬. চোখ চুলকালে বা লাল হয়ে গেলে লেন্স খুলে ফেলুন।
৭. নিয়মিত লেন্স না পরাই ভালো। মাঝে মাঝে চোখকে বিশ্রাম দিন।
৮. লেন্স পরে কখনোই ঘুমাতে যাবেন না।
এবার আসি কারা লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
১. যাদের চোখে সমস্যা আছে বা অনবরত পানি পড়ে তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করাই ভালো।
২. যাদের ডাক্তার বারণ করেছে তারা লেন্স ব্যবহার করবেন না।
৩. যাদের লেন্সের এবং চোখের যত্ন নেবার মতো সময় নেই তারা লেন্স ব্যবহার করবেন না।
এবার জেনে নেই লেন্স পরার সঠিক উপায়। প্রথমে দুইহাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নেই। এবার হাতের মধ্যমায় লেন্সটির উল্টোপাশ উপরে রেখে উঠিয়ে নেই। চোখের পাতা নিচের দিকে টেনে ধরতে হবে। এরপর লেন্স চোখে বসাতে হবে। যদি ঠিকঠাক মতো না বসে তাহলে চোখের মনি ঘুরিয়ে লেন্স মাঝ বরাবর আনতে হবে।
চাইলে লেন্স এপ্লিকেটরের সাহায্যেও পরা যাবে। তবে সলিউশনের মাত্রা বেশি হলে লেন্স পরার আগেই কমিয়ে নিতে হবে। আর লেন্স পরার পর চোখ দিয়ে পানি পরা স্বাভাবিক। ঐটুকু সময় চোখকে দিতে হবে। এরপরই লেন্স সেট হয়ে যাবে।
চোখের এলার্জি দূর করার ছয়টি উপায়
আর লেন্স পরার পর যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
১. কোনো অবস্থাতেই চোখের ভেতর হাত দেয়া যাবে না।
২.চোখ ডলা বা ঘষাঘষি করা যাবে না। চোখ জ্বালাপোড়া করলে লেন্স খুলে ফেলাটাই ভালো।
৩. কোনো অবস্থাতেই চোখে পানি দেয়া যাবে না।
৪. লেন্সের কোণা যাতে সূচালো না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এবার আলোচনা করবো লেন্স খুলে ফেলার নিয়ম সম্পর্কে। লেন্স খোলার জন্য চোখের পাতা টেনে ধরতে হবে। এরপর দুই আঙ্গুল দিয়ে চিমটার মতো করে বানিয়ে লেন্স বের করে আনতে হবে। দুই চোখ থেকেই লেন্স খুলে ফেলার পর তা সঠিকভাবে সলিউশনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন: লেন্স পরে আগুনের কাছে যাওয়া যাবে না। এতে লেন্স গলে যাবে। অতিরিক্ত ধুলাবালিতে থাকা যাবে না। এতে চোখে ইনফেকশন হতে পারে। আবার লেন্সের সলিউশন বদলানোর আগে দেখে নিতে হবে লেন্সে ফাঙ্গাস জমেছে কিনা। নাকি লেন্স ব্যবহার উপযোগী আছে। তবে কোনো অবস্থাতেই লেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর চোখে পরা যাবে না। এছাড়া প্রতিবছর লেন্স পরিবর্তন করা উচিত।
আর যদি আপনার চোখে চশমা পরতে হয় তাহলে সেই অনুযায়ী লেন্সের পাওয়ার সেট করে নিন। সাধারণত লেন্সের পাওয়ার চশমার পাওয়ার থেকে কিছুটা কম রাখা হয় যাতে চোখে এডজাস্ট হতে পারে। আর বয়স আঠারো হবার আগে ডাক্তারদের মতে লেন্স ব্যবহার না করাই ভালো। আর লেন্স ব্যবহারে চোখে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেই। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
চোখের জন্য কোন লেন্স ভালো, চোখের লেন্সের মূল্য তালিকা, আমেরিকান চোখের লেন্সের দাম কত, চোখের লেন্সের মূল্য তালিকা ২০২৩, ইন্ডিয়ান চোখের লেন্সের দাম
এবার জেনে নেয়া যাক, লেন্সের দাম কেমন। তাহলে লেন্স কিনতে গেলে পরবর্তীতে আপনাকে ঠকতে হবে না।
বাংলাদেশের বাজারে লেন্সের দাম ৭০০ টাকা থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। আজকাল চশমার দোকানে এবং প্রসাধনীর দোকানগুলোতে লেন্স বিক্রি হয়। সফট লেন্সগুলো ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় পাওয়া যায় যেগুলোর মেয়াদ থাকে একবছর।
এছাড়াও আরেকটু বেশি দামে ৩০০০- ৭০০০ টাকায় পাওয়া যায় ডিজপোজ্যাবল লেন্স। আর কালরড লেন্সের দাম একটু বেশি। চার থেকে আট হাজার টাকায় কালারড লেন্স বিক্রি হয়। আর যদি সস্তায় কিনতে চান কেবলমাত্র একবার পরার জন্য তাহলে ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে ৩৫০- ৭০০ টাকায় পেয়ে যাবেন।
চোখের যত্নে খুঁটিনাটি (Eye Care Solution)
যেগুলোর মেয়াদ এক সপ্তাহ থাকে। তবে চেষ্টা করবেন একবার পরার পর সেই লেন্স আর না পরতে। তবে ব্র্যান্ডের লেন্সগুলোর দাম বেশি। ১৪২৫ টাকা থেকে ১৪ হাজার ৬২৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তবে চোখে ছানি পরার যে লেন্স সেগুলো লোকাল মার্কেটে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে আনতে হয়। সার্জারির মাল্টিফোকাল লেন্সগুলো যুক্তরাষ্ট্র অথবা যুক্তরাজ্য থেকে আনালে দাম পড়ে বাংলাদেশি টাকায় ৭০- ৮০ হাজার। অন্যদিকে অপারেশনের জন্য ঐ লেন্স ইন্ডিয়া থেকে আনালে দাম পড়ে ২০-৩০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ।
তো পোস্টটি (চোখের জন্য কোন লেন্স ভালো | লেন্সের মূল্য তালিকা) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।