জমি খারিজ করার নিয়ম , মিউটেশন কি ?

নামজারি কি এবং কিভাবে করতে হয়ঃ- ধরুন, বরুন জাহিদের কাছ থেকে একটি জমি ক্রয় করে এবং উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেয় । এখন বরুন চাচ্ছে উক্ত ক্রয়কৃত জমিটি তাঁর নিজের নামে নামজারি করাতে । কিন্তু নামজারি সম্পর্কে তাঁর কোন ধারনা নেই । এক দালাল তাকে উক্ত জমিটি নামজারি করিয়ে দিবে বলে ১ লক্ষ টাকা চাইল । কিন্তু বরুন উক্ত ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে পারছে না । নামজারি সম্পর্কে জানতে সে গেল তাঁর এক পরিচিত এক আইনজিবীর কাছে । ভূমি ব্যবস্থাপনায় নামজারি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নামজারি বলতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে বুঝায় । অর্থাৎ কোন কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করানোকে মিউটেশন বা নামজারি বলে । দেশের ভূমি ব্যবস্থার অতন্ত্য গুরুত্ব পূর্ন এই খাতটি কিছু দালালের হাতে জিম্মি । আর এই দালালদের তালিকায় ভূমি অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তাও জরিত আছে । যেখানে একটি নামজারি করতে মাত্র ২ হাজার টাকা লাগার কথা সেখানে তারা সাধারন মানুষকে অযথা হয়রানি করে প্রচুর টাকা কামিয়ে নেয় ।

যাই হোক, আপনি যদি নিজেই জানেন কিভাবে নামজারি জন্য আবেদন করতে হয় এবং কি পরিমান খরচ লাগতে পারে তবে আপনি ৮০% হয়রানি থেকে বাচতে পারবেন ।

নামজারি না করলে কি সমস্যা হতে পারে ।

জমি কেনার পর অথবা ওয়ারিশ সুত্রে জমি পাওয়ার পর অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ কাজ হল উক্ত জমিটি আপনার নামে নামজারি করানো । নামজারি না করলে পরবর্তীতে জমিটি বিক্রয়, রেজিস্ট্রেশন এবং খাজনা প্রদান সহ নানা ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে । তাই জমি হস্তান্তর হওয়ার পর নামজারি করা অনেকটাই বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়িয়েছে ।

নামজারির জন্য আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র

১। ক্রয়সূত্রে মালিক হলে উক্ত দলিলের সার্টিফায়েড কপি।

২। ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদ ।

৩। বায়া দলিলের ফটোকপি

৪। জমির সবগুলো খতিয়ানের ফটোকপি ।

৫। ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।

৬। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত নাগরিকত্বের সনদ ।

৬। ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা রসিদ ।

কোথায় নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে?

উপজেলা ভূমি অফিসে অথবা আমরা যাকে এসি ল্যান্ড অফিস নামে জানি সেখানে নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে ।

কিভাবে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়?

প্রথম ধাপ” প্রথমে নামজারি করার জন্য  নিদিষ্ঠ একটি ফর্ম আছে যা আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে ।

দ্বিতীয় ধাপ’

উক্ত ফর্মটি সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন অথবা ইনন্টারনেট থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন  ।  উক্ত ফরমটি নির্ভুলভবে পূরন করতে হবে । এতে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নাম্বার ও সাল , BS, ES, SA  খতিয়ান নাম্বর ও দাগ নাম্বর ইত্যাদি তথ্য স্পষ্টভাবে দিতে হবে । আবেদন পত্রের একেবারে শেষে নিজের নাম ও মোবাইল নাম্বারটি দিতে হবে । এবার আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি আবেদন পত্রের উপর সংযুক্ত করতে হবে এবং অন্য সকল কাগজপত্র একত্রে সংযুক্ত করে হেল্পডেক্স –এ জমা দিতে হবে । সেখান থেকে আপনাকে একটি রসিদ দেওয়া হবে এবং পরবর্তী সাক্ষাতের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে ।

তৃতীয় ধাপ

“ আপনার আবেদন প্রেরণের সাধারনত ২০ কার্যদিবসের মধ্যে এসিল্যান্ড অফসে আপনি বা আপনার উপযুক্ত প্রতিনিধিকে ডাকবে । সেখানে আপনার আবেদনের সাথে যে সমস্ত কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন তাঁর মূল কপি ভূমি কর্মকর্তার নিকট প্রদর্শন করতে হবে ।

চতুর্থ ধাপ’

এ পর্যায়ে আপনার আবেদন প্রাথমিকভাবে যথার্থ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য পক্ষদেরকে আপত্তি দাখিলের জন্য নোটিশ করা হয় এবং শুনানীর দিন ধার্য করে দেওয়া হয় । অর্থাৎ সকল কাগজ পত্র ঠিক থাকলে এসি ল্যান্ড এই জমির সাথে সম্পৃত্য কোন পক্ষের এই নামজারি সম্পর্কে কোন আপত্তি আছে কিনা তা জানতে তাদের একটি নোটিশ করবে । এখানে পক্ষ গুলো হতে পারে জমির বিক্রেতা ওয়ারিশি সম্পত্তি হলে অন্যান্য ওয়ারিশ আছে কিনা ইত্যাদি ।

পঞ্চম ধাপ’

শুনানীর দিন কোন আপত্তি পাওয়া গেলে এসি ল্যান্ড উভয় পক্ষের আপত্তি শুনবেন এক্ষেত্রে এসিল্যান্ডে নামজারির আবেদন অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন । শুনানীর দিন কোন আপত্তি না পাওয়া গেলে সর্বশেষ এসিল্যান্ডে নামজারির জন্য চুড়ান্ত অনুমোদন করে থাকেন । আপনার নামজারির আবেদনটি চুড়ান্ত হয়ে গেলে আপনাকে মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে জানানো হবে । এ পর্যায়ে আপনি এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে নামজারির ফি পরিশোধ করে নতুন খতিয়ানটি সংগ্রহ করতে পারবেন । এভাবেই নামজারির প্রকৃয়া সম্পন্ন হয় ।

নামজারি সম্পন্ন হতে কতদিন সময় লাগতে পারে ?

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০  কর্মদিবসে এবং মহানগরের বাহিরের এলাকাগুলোতে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারির- প্রকৃয়া সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়েছে ।

Related Posts