ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার আগে জেনে নিন এই বিষয়গুলি

বর্তমানে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক বিভিন্ন প্রয়োজনেই ওয়েবসাইট (Website) তৈরী করার প্রয়োজন হয়। আর ওয়েবসাইট তৈরী করার জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত যে হারে ডোমেইন ও হোস্টিং প্রভাইডার কোম্পানি তৈরি হচ্ছে তাতে করে সঠিক ডোমেইন ও হোস্টিং সার্ভিস বাছাই করা সবার জন্য সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য কারো কাছ থেকে হুটহাট করে ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।

ডোমেইন (Domain) কেনার আগে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে:

  1. আপনি কি ধরনের ওয়েবসাইট (Website) তৈরি করতে চাচ্ছেন সেটা আগে সঠিক ভাবে চিন্তা করুন।
  2. আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক হবে এমন একটা ডোমেইন নেম বাছাই করুন।
  3. ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের জন্য .com ডোমেইন, নেটওয়ার্কিং বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য .net, অলাভজনক ওয়েবসাইটের জন্য .org ইত্যাদি এক্সটেনশন যুক্ত টপ লেভেল ডোমেইন গুলোই ভালো।
  4. ওয়েবসাইটের ভিজিটররা যাতে আপনার ওয়েবসাইটের নামটি সহজে মনে রাখতে পারে সেজন্য ডোমেইন নেমটি ছোট ও অর্থপূর্ণ রাখার চেষ্টা করুন।
  5. ডোমেইন নেমকে ইউনিক রাখার চেষ্টা করুন। অন্য কোনো সাইটের সাথে অনেকটা মিলে যায় এমন কোনো ডোমেইন নেম বাছাই না করাই উত্তম।

হোস্টিং (Hosting) কেনার আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহঃ

ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন ক্রয়ের পূর্বে হোস্টিং ক্রয় করা বেশি জরুরী। কারণ হোস্টিং ছাড়া শুধু ডোমেইন দিয়ে একটি ওয়েবসাইট সরাসরি চালু করা সম্ভব নয়। সকল কোম্পানির ডোমেইন সার্ভিস (Domain Service) প্রায় একই ধরনের। কিন্তু হোস্টিং সার্ভিসের (Hosting Service) ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করে। এজন্য সঠিক হোস্টিং প্যাকেজ নির্বাচনের আগে নিম্নের বিষয়গুলো ভালভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত।

  1. ডোমেইন ও হোস্টিং এর জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করুন। হোস্টিং এর জন্য ভালো বাজেট রাখুন। আপনার সাইটটি কি ধরনের সাইট, ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ভিজিটর (Visitor) সংখ্যা কেমন থাকবে এই বিষয় গুলোর উপর ভিত্তি করেই হোস্টিং এর বাজেট ঠিক করতে হবে।
  2. আপনি যে বাজেট এর মধ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাচ্ছেন সে বাজেটে ভালো মানের হোস্টিং যে কোম্পানি প্রদান করবে তার কাছ থেকেই নেয়ার চেষ্টা করুন।
  3. আপনার সাইটের জন্য কত স্পেস বা জায়গার প্রয়োজন সে বিষয় লক্ষ্য রেখে হোস্টিং প্লান (Hosting Plan) সিলেক্ট করুন।
  4. একটি ওয়েবসাইটে যে পরিমান ডাটা বা ফাইল থাকে এবং যে পরিমান ভিজিটর আসে তার উপর ব্যান্ডউইথ খরচ হয়। প্রতিটি ভিজিটর ও প্রতি পেইজ ভিউ অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ (Band width) খরচ হয়। ১ জিবি ব্যান্ডউইথ-এ ১০০০ জন যদি আপনার ওয়েবসাইটে আসতে পারে। তাহলে আপনার সাইট এর ভিজিটর অনুযায়ী আপনার ব্যান্ডউইথ নিতে হবে। আপনি চাইলে আপনার বাজেটের মধ্যে যত ইচ্ছা ব্যান্ডউইথ নিতে পারেন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথও নিতে পারেন।
  5. এবার আলোচনা করা যাক হোস্টিং আপটাইম (Hosting Uptime) নিয়ে। ওয়েবসাইট-র হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপটাইম একটি খুবই গুরুত্বর্পূন বিষয়। একটি সাইট হোস্টিং আপটাইম অনুযায়ী লাইভ থাকে। ৯৯.৯% এবং ১০০% আপটাইম দেখে আপিনি হোস্টিং নির্বাচন করতে হবে। অনেক কোম্পনী আছে যারা বলে যে তারা ৯৯.৯% আপটাইম দিবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা পাওয়া যায় না। এজন্য হোস্টিং ক্রয়ের পূর্বে হোস্টিং আপটাইম চেক করে নিতে হবে। হোস্টিং আপটাইম চেক করার জন্য সেই কোম্পানীর ইউজেস পলিসি (Usage Policy) পেজ ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।
  6. হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানিব্যাক গ্যারান্টি। আনেক ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানি আছে যারা ৩০ দিন মানি ব্যক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এটা আছে কিনা দেখে নিবেন। সাধারনত মানিব্যাক গ্যারান্টি দেয়া কোম্পানীগুলোর সার্ভিস ভালো হয়ে থাকে।
  7. হোস্টিং ক্রয়ের পূর্বে সেই কোম্পানির সম্পর্কে জানুন। কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে কথা বলুন। তাদের সার্ভিসের রিভিউ (Review) দেখুন। তাদের সার্ভারের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হন। সবকিছু দেখে ঠিক থাকলে আপনার প্যাকেজটি অর্ডার করুন।
  8. ডোমেইন ও হোস্টিং এর জন্য সাপোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডোমেইন কিংবা হোস্টিং এ যেকোনো প্রকারের সমস্যা দেখা দিলে ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানির সাপোর্ট (Support) আপনাকে নিতে হবে। সাপোর্ট পেতে যদি বেশি দেরি হয় তবে আপনি আপনার সাইটের অনেক ভিজিটর হারাতে পারেন, যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের বিশাল পরিমাণের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য যাদের থেকে হোস্টিং নিবেন তাদের সাপোর্ট সিস্টেম কেমন তা যাচাই করে নিন।
  9. আপনার ওয়েবসাইট কি ধরনের এবং সে সাইট-এ কোন ধরনের হোস্টিং প্রয়োজন সে অনুযায়ী অর্ডার করুন। উইন্ডোজ এবং লিনাক্স হোস্টিং এর মধ্যে আপনার কাজের জন্য কোনটি প্রয়োজন তা জেনে নিন অর্ডার করার আগে। হোস্টিং কেনার আগে ভালোভাবে দেখে নিন কি কি ফিচারসমূহ রয়েছে। আপনার যেমন ফিচার প্রয়োজন তেমন ফিচার সম্বলিত প্যাকেজটি ক্রয় করুন।
  10. আপনি প্যাকেজের পরিমাণ যদি ছোট হয় তবে প্যাকেজটিতে সকল লিমিটেশন উল্লেখ থাকবে। কিন্তু যদি আনলিমিটেড প্যাকেজ নেন তাহলে আপনাকে সকল লিমিটেশন জানতে হবে। কারণ সবসময় আনলিমিটেড মানে যত খুশি তত নয়।
  11. শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting) কেনার পূর্বে সার্ভার কনফিগারেশন ও সার্ভার লোড সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। সার্ভার (Server) যদি ওভারলোড হয় তবে আপনার ওয়েবসাইট লোড হতে অনেক সময় লাগবে।

Related Posts

22 Comments

মন্তব্য করুন