সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজ আমি আপনাদের কে এক অদম্য মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের বাস্তব গল্প ও সাফল্য গাঁথা স্বপ্নজয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা শুনাতে আসলাম। আমি আশা ও বিশ্বাস করছি, তার অদম্য সাহস ও দরিদ্রতার সাথে যুদ্ধ বিজয় করে স্বপ্ন পূরণের বাস্তব গল্পটি সকল পাঠকবৃন্দের হৃদয়ের মণিকোঠায় প্রস্তর আঘাত করবে। গল্পটি বর্তমান সমাজের অজস্র দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে চলার পথে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবন যুদ্ধে সাফল্য অর্জনে বদ্ধপরিকর ও অকুতোভয় এক শিক্ষার্থীর নাম ছিলো “ইদ্রিস”। অন্যান্যা শিক্ষার্থীদের ন্যায় তারও ছিলো আশা, আকাংখা, প্রত্যাশা ও বিনোদন পাওয়ার অধিকার কিন্তু পৃথিবীর রঙমঞ্চে তার পরিচয় ছিলো সে এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই দারিদ্র্যতার শৃঙ্খলে বাধা জীবনে ছিলো না কোন সাধ, ছিলোনা কোন আমোদ – প্রমোদ বা চাহিদা পুরণের অর্থনৈতিক উপকরণ।
তার বেড়ে উঠা যশোর জেলার শার্শা থানার এক দূর্গম গ্রামে। বাবা ছিলো একজন সামান্য মুটে মজুর রিকশা চালক। সে ছিলো ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মধ্যে পরিবারের ২য় সন্তান। দারিদ্র্যের যাতাকলে পিষ্ট পরিবারে বাবা যে উপার্জন করত তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলতো। অনেকটা দিনে আনে দিনে খাওয়ার মতো। তাই উক্ত পরিবারের কোন সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া বাবার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিলো। বড় ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ আরও অনেক আগেই। ইদ্রিস এরও লেখাপড়া না করার জন্য পরিবার প্রধানের পক্ষ থেকে আসলো অশুভ চাপ ও প্রস্তাব।
ইদ্রিস তখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রাঙ্গনে পা রাখার সমধুর স্বপ্নে বিভোর ইদ্রিস পরিবারের পক্ষ থেকে শুনলো পড়ালেখা বন্ধ করার অশুভ ইঙ্গিত।
ইচ্ছা যদি প্রখর হয় এবং স্বপ্নকে যদি সঠিকভাবে হৃদয়ে লালন করা যায় তাহলে কোন বাধা বিপত্তিই শিক্ষার আলো থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না। পরিবার প্রধানের অশুভ ইঙ্গিত ইদ্রিস কে দমাতে পারি নি। সুশিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত বাবা বললো পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমার সাথে উপার্জন করতে হবে না হলে আমার পরিবারে থাকতে দেওতা হবে না। কোমলমতি ইদ্রিস এর হৃদয়ে তখন পড়ালেখা না করতে পারার বিষবাষ্প দহন করছিলো এবং নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করে বাবাকে বললো হা আমি তোমার শর্তে রাজি তোমার সাথে উপার্জন করবো তবে সপ্তাহে ১ দিন।
সপ্তাহের শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে সেই দিন ইদ্রিস রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করতো তার মধ্য থেকে কৌশলে কিছু টাকা নিজ লেখাপড়া চালানোর জন্য রাখত এবং বাকী টাকা বাবার হাতে তুলে দিত।
এভাবে সুদীর্ঘ ৪ বছর রিকসা চালিয়ে এস এস সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফাস্টক্লাস অর্জন করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়।
এবার আসলো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের সময় যেখানে তাকে কলেজে ভর্তির জন্য বেশ কিছু টাকা লাগবে। ঐ সময় যে ভর্তির টাকা দরকার হবে সে আগে থেকেই জানতো তাই এস এস সি পরীক্ষার পর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো বিনোদন বা ঘোরাঘুরির সুযোগ না নিয়ে সে রাজমিস্ত্রি কাজের হেল্পার হিসেবে কাজ করে টাকা জোগাড় করে রাখলো।
ভর্তির সময় কিছু টাকা ঘাটতি ছিলো যেটা তার মা ও বড় ভাই মিলে ব্যবস্থা করে দিল। কলেজে ভর্তি হলো বিজ্ঞান বিভাগে, নিয়মিত সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস করে কিন্তু পড়ালেখার চাপে আর উপার্জন করতে পার না। এমনকি কলেজ থেকে শিক্ষকেরা বলল প্রাইভেট পড়তে হবে সবাইকে। ইদ্রিস দরিদ্র পরিবারের সন্তান তার পক্ষে প্রাইভেট পড়ার টাকা যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। তারপরও সে তার দারিদ্যতার বিষয়টি সকল শিক্ষককে অবহিত করে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পদার্থ ও গনিত বিষয়ের শিক্ষক তাকে ৫০% ছাড়ে পড়ানোর জন্য রাজি হলো। রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক তো মুখের উপর বলেই দিলো তোমার টাকা নেই তো সাইন্স কেন পড়তে আসলে, টাকা না দিতে পারলে প্রাইভেট পড়ার দরকার নেই। অনেক কষ্ট ও অন্তর ভরা ব্যাথা নিয়ে ইদ্রিস প্রতিজ্ঞা করলো হা সে প্রাইভেট পড়বে না। শুধুমাত্র রসায়ন ক্লাসেই শিখতো।
এভাবে অনেক বাধা বিপত্তি চরাই উতরাই পেরিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষা দিলো এবং সেক্ষেত্রেও কলেজ সেরা রেজাল্ট তৈরি করে ফাস্ট ক্লাস অর্জন করে সবাইকে চমকে দিলো।
পরে আসলো ইউনিভার্সিটি ভর্তির সময়। মায়ের কাছ থেকে হাস মুরগীর ডিম বিক্রির টাকা নিয়ে নিজের জেলা” যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ” একটি ফরম তুললো। পরীক্ষা দিলো মেধাক্রমে ৫১ তম স্থান অর্জন করে ভর্তি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসময় তার টাকা দিলো তার বড় ভাই ও তার মা মানুষের কাছ থেকে ধার করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের ব্যয়ভার সে টিউশনি করে শেষ করলো এবং ফাস্ট ক্লাস অর্জন করে সম্মানের সাথে অনার্স ও মাস্টর্স ড্রিগ্রী অর্জন করলো।
ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো শিক্ষকতা। আল্লাহ্ তার স্বপ্নকে পূরণ করেছেন। সে এখন দেশ সেরা এক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছে।
এই ছিলো অদম্য মেধাবী এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইদ্রিসের স্বপ্ন জয়ের কাহিনী।
বর্তমান সমাজে জয়ের মালা নেই
Nice
helpfull post
wow
ভালো লাগলো…
Nice story ❤️
Nice
kob sondor
nice
Nice initiative
অনেক সুন্দর গল্প। পড়ে অনেক ভাল লাগলো।
nyc
Tnx
hum
অসাধারণ
Good enough…
nice
Best Story.
সত্যি ই অসাধারন…একজন পরিশ্রমী ও সহনশীল মানুষের গল্প
so nice
fine
দারুণ
good
good post
Nice
gd
❤️
ভালো