দিবাস্বপ্ন দূর করার সাতটি নিয়ম জেনে নিন

যদি মনে করেন আপনি বেশি বেশি দিবাস্বপ্ন দেখছেন এবং সেটা কাজের খুব ব্যঘাত ঘটাচ্ছে।তাহলে বুঝতে হবে এখন সময় দিবাস্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করার। প্রথমে জানি দিবাস্বপ্ন কি?

দিবাস্বপ্ন আসলে কি?

দিবাস্বপ্ন হল চেতনার প্রবাহ যা বর্তমান, বাহ্যিক কাজগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যখন মনোযোগ আরও ব্যক্তিগত এবং অভ্যন্তরীণ দিকে চলে যায়। এই ঘটনাটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি স্বাভাবিক বিষয়।গবেষণায় দেখানো হয়েছে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ঘুম থেকে ওঠার সময় গড়ে ৪৭% দিবাস্বপ্ন দেখে ব্যয় করে। এই ঘটনার বিভিন্ন নাম রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে মনের বিচরণ, ফ্যান্টাসি, স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তাভাবনা ইত্যাদি। বেশিরভাগ দিবাস্বপ্ন আনন্দদায়ক হয়ে থাকে।  কিছু  দিবা স্বপ্ন মানুষকে নতুন পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।

দিবাস্বপ্ন দূর করার সাতটি উপায় নিচে দেয়া হল।

১.আপনার দিবাস্বপ্ন প্যাটার্ন বিশ্লেষণ

কেন আপনি দিবাস্বপ্ন  দেখছেন শনাক্ত করুন। কিছু ঘটতে বাধা দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হল কেন এটি প্রথম স্থানে ঘটছে তা বোঝা।কেন কল্পনা আসে তা নির্নয় করতে হবে।  কিছু লোক বেদনাদায়ক চিন্তাভাবনা বা অনুভূতি এড়াতে দিবাস্বপ্ন দেখে। উদ্বেগ বা নিরাপত্তাহীনতায় ভগার কারনে একটি নিখুঁত বিশ্বের কল্পনায় জড়িয়ে পড়ে। আপনি প্রায়শই কী সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন এবং সেই পরিস্থিতিটি আপনাকে চেক আউট করার কারণ কী তা সনাক্ত করার চেষ্টা করুন। তারপরে, আপনি সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য কাজ করতে পারেন এবং এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আপনার পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন।

২.আপনার দিবাস্বপ্নের ধরণ জানুন

আপনার মন কখন প্রবাহিত হওয়ার তাগিদ পায় এবং সেই আকাঙ্ক্ষার কারণ কী তা লক্ষ্য করা শুরু করুন। আপনি  ট্রিগারগুলি অর্থাৎযে ক্রিয়া বা ঘটনাগুলি আপনাকে দিবাস্বপ্ন দেখায় সেগুলো কোন  সনাক্ত করতে পারেন।আপনি সেগুলির জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন৷ আপনি কি কেবল তখনই কল্পনা করেন যখন আপনি বিরক্ত হন, নাকি বেশিরভাগ সময় আপনি বিরক্ত হন? একবার আপনার আচরণে একটি ধরণ চিনতে পারলে দিবাস্বপ্ন দূর করা সহজ হবে। আপনি যখন মন খারাপ করেন তখন কল্পনা করলে,  আবেগের সাথে মানিয়ে নেওয়ার বিকল্প উপায়গুলির একটি তালিকা সহ পরের বার সেইরকম অনুভব করার জন্য একটি পরিকল্পনা করতে পারেন।

৩.মনকে ব্যস্ত রাখুন

বিশেষ করে আপনি যখন বিরক্ত হয়ে কল্পনা করেন, আপনার মনকে ব্যস্ত রাখা একটি ফলদায়ক উপায় হতে পারে। আপনার যা করতে হবে সেগুলির লিখে রাখতে পারেন। যখন মন অন্যদিকে যেতে চাইবে তখন লিস্ট অনুযায়ি আবার কাজ শুরু করতে পারেন। 

৪.ধ্যান করুন

ধ্যান হল আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চূড়ান্ত ব্যায়াম।যদিও প্রথমে এটি কঠিন বিষয় মনে হবে।তবে ধীরে ধীরে মনের নিয়ন্ত্রণ আপনি নিজে নিয়ে নিতে পারবেন। তখন একধারে কাজ করা খুব সহজ হবে। ধ্যানের বিভিন্ন কৌশল আছে। কোয়ান্টাম মেথড তারমধ্যে একটি।

৫. নিজেকে বর্তমানের মধ্যে স্থির করুন

নিজেক চারপাশের পরিবেশের মধ্যে স্থির করে দিবাস্বপ্নে যাওয়ার  প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারেন। গ্রাউন্ডিং কৌশলগুলি ব্যবহার করে নিজেকে আরও প্রায়শই উপস্থিত থাকতে প্রশিক্ষণ দিন:আপনি যে ঘরে আছেন তার কিছু বস্তুর নাম উচ্চারণ করুন এবং শনাক্ত করুন বা আপনি সেখানে করতে পারেন এমন কিছু বাস্তব কার্যকলাপের উপর ফোকাস করুন। আপনি আপনার শ্বাস এবং শ্বাসের মেকানিক্সের উপরও ফোকাস করতে পারেন। এই কর্মগুলি আপনাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে; আপনি যদি অনুভব করেন যে আপনি আবার কল্পনায় চলে যাচ্ছেন  তবে কাজ বাদ দিয়ে কিছু ফিজিক্যাল ব্যায়াম করা শুরু করতে পারেন। 

৬. নিজেকে বোঝান এগুলো স্বপ্ন

যখন দিবাস্বপ্ন আসবে তখন চিন্তা করতে পারেন এগুল শুধুমাত্র স্বপ্ন। এমন কি “এগুল স্বপ্ন” এই কথটি বার বার উচ্চারণ করতে পারেন। যদি স্বপ্ন না হয় তা হলে দেখি বাস্তবে সম্ভব কিনা ? যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনাকে কি করতে হবে সেটা চিন্তা করতে পারেন।

৭. বাস্তবতা মেনে নেয়া শিখতে পারেন

দিবাস্বপ্ন বেশির ভাগ আসে যখন মন খারাপ হয় অথবা বাস্তবতা  ভালো লাগে না। কিন্তু যদি বাস্তবতা মেনে নিতে  শিখতে পারেন তবে সেটা দূর হয়ে যাবে।কারণ বাস্তবতা যতই  কঠিন হোক না কেন দিবাস্বপ্ন সেটা সহজ করে দিতে পারবে না। আরও জটিল হয়ে যেতে পারে জীবন যদি আপনি সপ্নে ডুবে থাকতে পছন্দ করেন।

Related Posts

13 Comments

  1. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি আমার মনের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। আমার মধ্যে এই রোগটি আছে। রাত-দিন ২৪ ঘন্টা দিবাস্বপ্নে ভোগী। কিন্তু কাউকে বুঝাতে পারিনা যে আমার মনে কি চলছে। বাস্তব দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি। ফলে কাজ-কর্মে মনোযোগ দিতে পারি না। পদে পদে ভুল করি। এর জন্য খুব তারাতাড়ি কোনো বিষয় ভুলে যাই। আমি এ থেকে মুক্ত হতে চাই। বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাই।

  2. দিবা স্বপ্ন থেকে মুক্তি লাভ করতে চাই না। এগুলো আমাকে অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণা জোগায়। নিমিষেই ঘুরে আসতে পারি সারা পৃথিবী। নতুন নতুন অনেক পরিকল্পনাগুলো সেখান থেকে আসে।তাই আমি বিভাস আপনাকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসি। আমি কখনই এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে চাই না।

মন্তব্য করুন