নতুন ব্যবসা শুরু করার নিয়ম, ব্যবসা শুরুর আগে করণীয়

আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমি আপনাদেরকে বলতে যাচ্ছি নতুন ব্যবসা শুরু করার নিয়ম, ব্যবসা শুরুর আগে করণীয়। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

পেশা বেচে নিতে অনেকেরই প্রথম পছন্দ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়া। ব্যবসা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের চোখের সামনে যে সমস্যা ভেসে ওঠে তা হলো পূজি। অর্থাৎ ৫-১০ লক্ষ টাকা হয়ে গেলেই একটা ছোট খাটো ব্যাবসা দাড় করানো যাবে। কিন্তু আমাদের আশেপাশে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে যে, পর্যাপ্ত পুজি থাকার পরও সফল হতে পারেন নি।

ব্যবসাতে সফল না হবার অনেক কারণ আপনি বইপত্রে খোজে পাবেন। আমার ক্ষুদ্র ঞ্জানের দ্বারা আমার আশে পাশের বাজার গবেষণা করে কিছু কারণ পেয়েছি। তার মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরছি।

নতুন ব্যবসা শুরু করার নিয়ম, ব্যবসা শুরুর আগে করণীয়

১. অভিজ্ঞতাঃ ব্যবসা করতে গেলে পূজির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হলো অভিজ্ঞতা। আপনি দেখবেন যারা অনেকদিন কোন দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করেছে এবং পরবর্তি সময়ে কোনরকম দার-দেনা করে দোকান দিয়েছে তারাই বেশিরভাগ সফল হচ্ছে।

কারণ ক্রেতা সম্পর্কে তারা ভালো একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। যেমন ধরেন আপনি কাপড়ের ব্যবসা করতে চান। এখন আপনার বাজারে কি ধরণের কাপড়, কেমন দামের কাপড় ক্রেতারা চায় তা আপনার জানা থাকতে হবে। লোকাল বাজারে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যভিত্ত ক্রেতা বেশি থাকে এখন যদি ঐ বাজারে আপনার পূজি আছে দেখে ভালো মানের বেশি দামের কাপড় তোলেন তাহলে সেই কাপড় চলবে না।

আবার কম দামের কাপড় আনতে গিয়ে একেবারে নিম্নরমানের কাপড় আনলে সেটাও চলবে না অর্থাৎ বিক্রি হবে না। আপনাকে তখন কম দামের মধ্যে রুচিশীল কাপড় আনতে হবে, বাজারে আপনার আশে পাশের ব্যবসায়ীরা কোন কাপড় কি দামে বিক্রি করে সেটা জানতে হবে। সেই কাপড়ের ভালো পাইকারি বাজার কোথায় আছে, কম দামে কোথায় পাওয়া যায় তা জানতে হবে। অন্যান্য পণ্যের বেলায়ও প্রায় একই কথা।

২. স্থান নির্বাচনঃ স্থান নির্বাচন ব্যবসায়ের সাফল্যের একটি বড় দিক। যেখানে মানুষ যায় না বা জনসমাগম নেই সেখানে যদি আপনি দোকান দিয়ে বসেন তাহলে চলবে না।

আপনাকে এমন স্থানে দোকান দিতে হবে যেখানে জনসমাগম আছে এবং একই জাতীয় পণ্যের আরো দোকান আছে। তবে বিশেষ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে বা সেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় দোকান একটু ভেতরে বা কম জনসমাগমের স্থানেও চলে। এক্ষেত্রে যেসব পণ্য বা সেবার বিকল্প ঐ বাজারে নেই অথবা বিক্রেতা বহুল পরিচিত সেক্ষেত্রে ব্যবসা বাজারের যে কোন একটা স্থানে হলেও চলে।

৩. পণ্য নির্বাচনঃ ব্যবসায়ে সফলতার জন্য পণ্য নির্বাচন আবশ্যক। আপনার বাজারে কোন কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটা নির্ণয় করতে হবে।

চাহিদা নির্ণয় করতে গিয়ে যদি দেখেন আপনার লোকাল বাজারে টিভি-ফ্রিজ, এসি’র দোকান নেই তাই আপনি হোট করে এসির দোকান দিয়ে বসলেন তাহলে আপনি নিশ্চিত ব্যর্থ হবেনই! কারণ এসি কিনতে হলে মানুষ বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরে বেশি যায়।

তবে অনেক জায়গায় লোকাল বাজারেও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিক্রি হচ্ছে কারণ সেই বাজার থেকে জেলা শহর অনেক দূরে, অথবা যাতায়াত খরচ বেশি। সেক্ষেত্রে আপনার পূজি বেশি থাকতে হবে দৈর্য্য ধরে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এক জাতীয় পণ্যের দোকান যেখানে বেশি সেখানে সাধারণত ঐ পণ্যই বেশি চলে।

৪. দাম নির্ধারণঃ পণ্যের দাম নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনাকে এমন একটা দাম নির্ধারণ করতে হবে, যে দামে সাধারণত ক্রেতা ঐ পণ্য কিনতে চান।

দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ দোকানিরা কিছু কৌশল অবলম্ভন করেন, যেমন কোন কোন ক্রেতা কিছু পণ্য কিনতে এসে ঐ পণ্যের সাথে আরো কিছু সহযোগী পণ্য কিনেন। ক্রেতার ফোকাস যে পণ্যের দিকে সেই পণ্যের দাম কিছুটা কমিয়ে সহযোগী পণ্যে সেটা পুষিয়ে নেন যা ক্রেতার অগোচরেই থেকে যায়।

যেমন ধরেন একজন ক্রেতা একটি ফ্যান কিনলেন, সাথে কিনলেন ক্যাবল, চুইস, স্পীড কন্ট্রোলার এখন ক্রেতার ফোকাস যেহেতু ফ্যানের দিকে তাই বিক্রেতা ফ্যানের দাম অন্য দোকানির থেকে ১০০ টাকা কমিয়ে ক্যাবল ও স্পীড কন্ট্রোলারে সেটা পুসিয়ে নিলেন।

৫. দোকানের নাম, সাইনবোর্ড/প্রচারঃ একটা কথা প্রচলিত আছে যে, প্রচারেই প্রসার। দোকানের ধরনের উপর বিবেচনা করে সুন্দর, সহজ ও প্রচলিত একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে।

এক জায়গায় দেখলাম এক দোকানের নাম ‘মোল্লার দোকান’ উনি শুরুতে একটি নাম দিয়েছিলেন কিন্তু দোকানি হুজুর টাইপের হওয়াতে সবাই তার দোকানকে মোল্লার দোকান বলে। শেষ পর্যন্ত উনি ‘মোল্লার দোকান’ নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন এবং তার দোকান ভালই চলছে।

আবার আরেক জায়গায় রেস্টুরেন্টের নাম দেখলাম টানাটানি রেস্টুরেন্ট! অর্থাৎ তার রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ বেশি ও দাম কম থাকায় তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টের খাবার শেষ হয়ে যায়। খাবার নিয়ে টানাটানি শুরু হয় বলে নাম দেওয়া হয়েছে টানাটানি রেস্টুরেন্ট!

এছাড়াও আপনার ব্যক্তিগত পরিচিত, ভালো ব্যবহার, ক্লিন ইমেজ, সততা ও আচার ব্যবহারের উপর ব্যবসায়ের সফলতা নির্ভ র করে। এখানে অনেকগুলো কারণের মধ্যে আমি মাত্র ৫ টি কারণ লিখলাম কারণ আমার লেখাটি ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে লেখা। আশাকরি ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে এই পরামর্শ কাজে লাগবে।

পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর Facebook Group এর সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

5 Comments

মন্তব্য করুন