নিয়তির খেলা (পঞ্চম_পর্ব)

নিয়তির খেলা (পঞ্চম_পর্ব)

নিয়তির খেলা (পঞ্চম_পর্ব)

যারা নতুন তারা আগের পর্বগুলো পড়ে নিন ,তাহলে বুঝতে পারবেন এই গল্পটা ।

আর ,হ্যাঁ গল্পটা কেমন লাগছে আর কোথাও কোনো সংশোধন করতে হবে কি না ,তা আপনারা কমেন্ট করে জানিয়ে দেবেন ।

আশাকরি,
এবারের পর্বের পরের পর্বে আপনারা শেষ পর্ব পেয়ে যাবেন ।

আপনারা বিনোদন নামক ক্যাটেগরি তে সকল পর্বগুলো পেয়ে যাবেন । আর যদি না পান তাহলে এটাতে যে ছবি টা দেয়া আছে সেরকম ছবিতে ক্লিক করলে পূর্বের পর্বগুলো পেয়ে যাবেন …

গত পর্বের পর –
নিনিতা জিজ্ঞেস করলো –
আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে যেতে আর কতটা সময় লাগবে

এইতো পরের স্টেশনেই আমরা নামবো।তারপর সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবো…

আমারা চলে এসেছি।

আমরা কি এখানেই নেমে যাব ?

হুম।

আমি নিনিতাকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম।এখনো ভালো করে ভোরের আলো ফোটেনি।হালকা অন্ধকার রয়ে গেছে।

– এখন কীভাবে যাবো ?

– ওটাই ভাবতেছি।

– আর কতো দূর যেতে হবে ?

– বেশি না আরও ১ কিমি এর যেতে মত হবে।

রিক্সা নিয়ে নিন।

হ্যাঁ , কিন্তু রাস্তা অনেক খারাপ আর এই শরীরে এভাবে রিক্সায় করে যেতে পারবেন ?

– মনে হয় পারবো।

– এই ভাই ! যাবেন ?

– কোথায় যাবেন স্যার ?

– এইতো সামনের হরিশপুর বাজারের কাছে সরকার বাড়িতে।

যাবো ভাই।তবে আসার সময় ফাঁকা আসতে হবে তো, তাই ভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দিয়েন।

হম বাড়িয়েই দিবো চলেন…

আমি ব্যাগ নিয়ে রিক্সাতে উঠলাম,অধের্ক রাস্তা যাওয়ার পর নিনিতা বলল,রাস্তার ঝাকুনির ফলে ওর পেট ব্যাথা করছে,ও আর রিক্সায় করে যাবে না।আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ।

আমি রিক্সা থেকে নামতেই নিনিতাও নেমে গেল।

– চলেন আমরা বাকি রাস্তাটুকু হেঁটেই যাই।আমি আর এভাবে যেতে পারবো না।

আমি রিক্সা ওয়ালাকে বললাম,আপনি ব্যাগ নিয়ে চলে যান,আমারা হেঁটে আসছি।

অবশেষে হেঁটেই ১০ মিনিট পর বাড়ী গেলাম।

বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা হল।নিনিতাকে আমার সাথে দেখে মা,বাবা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছে।

আমি নিনিতাকে বললাম আপনি একটু রেস্ট নিতে থাকুন।আমি একটু বাজারের দিকে যাচ্ছি।

বাজারে এসে এলাকার এক বড় ভাই কে নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গেলাম,সম্পর্কে উনি আমাদের চাচা।

– আসসালামু ! চাচা কেমন আছেন ?

– হ্যাঁ বাবা ভালো, ঢাকা থেকে কখন আসলে ?

– একটু আগেই এসেছি,আপনার কাছে আসলাম একটা অভিযোগ নিয়ে।

– কি অভিযোগ বাবা,,,

– আমাদের রাস্তাটার এই অবস্থা কেন ? গত দুই বছরে রাস্তার কোন কাজ হয়নি।রাস্তায় এত বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।এটা মেরামত করছেন না কেন।

– আমি কি করবো বাবা। এমপি সাহেব কে কতো বার বললাম,এই বাজেটেও মনে হয় হবে না।

– তার মানে আপনি কোন উপকার করতে পারবেন না ?

– বাবা এই রাস্তা পুনরায় মেরামত করতে প্রায় 15 লক্ষ টাকা খরচ হবে। আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।

– যদি আমি সেই রাস্তা তৈরি করে দেই।

– কি বলো ?

– হ্যাঁ।তবে একটা শর্ত আছে রাজনৈতিক কোন ঝামেলায় যেন আমাকে পরতে না হয়।

– আমি এখুনি এমপি সাহেবের সাথে কথা বলছি।

– আপনি কথা বলেন আর আমি রাস্তা মেরামতের সব ব্যাবস্থা করছি।

তারপর আমি কিছু বাজার করে বাড়ী আসলাম।বাড়িতে আসতেই নিনিতা জিগ্যেস করল,,,

– কোথায় গেছিলেন ?

– বাজার করতে আর একটু ঘুরলাম।

মায়ের সাথে দেখলাম ভালোই কথা বার্তা চলেছে নিনিতার।আর মায়ের মুখেও শুধু নিনিতা আর নিনিতা।আর এদিকে আমার মায়ের একটা মাত্র ছেলে আমি এতদিন পরে বাড়িতে এসেছি এই ব্যাপারে আমার মায়ের কোন খায়ালি নেই।এখন নিজেকেই নিজেদের বাড়িতে কেমন জানি অসহায় অসহায় লাগছে।

বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের বাড়ীতে আসলো,,,

– বাবা সুমন বাড়িতে আছো ?

– জি চাচা আসেন ভেতরে আসেন।

– এই নাও বাবা এমপি সাহেবের অনুমতি পত্র আর এটা আমার অনুমতি পত্র। আর এই ৩ জনের সাথে কথা বলে নাও, এরা তোমাকে
তোমার চাহিদা মাফিক যা চাইবা তাই দিবে।

– ধন্যবাদ চাচা। আচ্ছা এই রাস্তা করতে কয় দিন লাগতে পারে ?

– তারাতারি করে করতে চাইলে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

– কিন্তু আমার কাছে যে এতো সময় নেই।আমি বাড়িতে তিন দিন থাকবো আর এই তিন দিনের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে হবে।

– বাবা এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব ?

– টাকা থাকলে চাচা সবকিছুই সম্ভব।প্রয়োজনে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করতে হবে।

– তোমার যে ভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কাজটা করো।

চেয়ারম্যান চাচা চলে গেছে আর এদিকে আমিও কাজের অডার দিয়ে দিয়েছি তারা কাল থেকেই কাজ শুরু করবে আর যে ভাবেই হোক তিন দিনের মধ্যে তারা কাজটা শেষ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে।

পরের দিন সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম।নিনিতা এসে ঘুম থেকে ডেকে বলল,,,,

– বাড়িতে অনেক মানুষ এসে ঝড়ো হয়েছে তারা আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

– ওকে আমি গিয়ে দেখি কারা আসছে,,,

বাহিরে এসে দেখি আমার স্কুলের সব স্যারে’রা এসেছে।আমি সব স্যারদের এক সাথে দেখে একটু আবাকই হয়েছি।স্যারদের সালাম দিয়ে ভেতরের রুমে নিয়ে বসতে দিলাম।তারপর স্যারে’রা বলল,,,,

– আমরা শুনলাম তুমি নাকি আমাদের রাস্তাটা নতুন করে মেরামত করে দিচ্ছ।তাই আমরা সব স্যারে’রা মিলে একটা আবদার নিয়ে তোমার কাছে এসেছি।

কি আবদার বলেন…

– আমাদের স্কুলের সামনের যে খালি জায়গাটা ছিল সেটা এতদিন আমরা স্কুলের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে এসেছি।কিন্তু এই জায়গার মালিক জায়গায়টা বিক্রি করে দিবে।আমাদের স্কুলের যেহেতু নিজস্ব কোন মাঠ নাই তাই আমরা চাইছিলাম এই জায়গায়টা স্কুলের জন্য কিনে মাঠ হিসাবে ব্যবহার করতে।

এই ব্যাপারে আমার থেকে কি ধরনের সহযোগিতা চান আপনারা ?

– আমাদের স্কুলের ফান্ডে যে টাকা আছে তা দিয়ে জায়গাটা কিনা সম্ভব না।এখন তুমি যদি আমাদের পাশে থেকে আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করতে তাইলে আমাদের খুব উপকার হতো।

– জায়গাটার মূল্য কত ?

– জায়গার মালিক বলছে যদি স্কুল জায়গাটা নেয় সে ক্ষেত্রে 10 লক্ষ টাকায় জায়গাটা তিনি দিয়ে দিবেন।

– আপনারা ওনার সাথে কথা বলুন।আর হ্যাঁ 10 লক্ষ টাকার পুনো টাকাটাই আমি দিতে চাই।

– তুমি আমাদের অনেক উপকার করলে বাবা।আজ তাহলে আমরা আসি,,,

– আমাদের বাসায় সকালের সকালের নাস্তা করে তারপর যাবেন।

– অন্য একদিন এসে না হয় খেয়ে যাবো।আজকে স্কুলে একটু কাজ আছে তাই আজ যেতে হবে,,,,,

স্যারেরা চলে যেতেই মা এসে বলল,,,

– তুই এখানে এসে আবার কি শুরু করলি বলতো ?

– তেমন কিছু না মা ,রাস্তাটা ঠিক করতেছি আর স্কুলের জন্য জায়গা কিনে দিচ্ছি।

আজকে থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।কাজ ভালো ভাবেই হচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে তিন দিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এর মধ্যেই নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে আমরা কবে ঢাকায় ফিরবো।ওনাকে জানিয়ে দিয়েছি কালকে বিকেলে আমরা ঢাকায় ফিরবো।

সন্ধ্যায় এলাকার কয়েকজন এসে বলল তারা কালকে রাস্তা উদ্বোধনের জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেখানে আমাকে আর নিনিতাকে যেতে হবে।এর মধ্যেই তারা জেনে গেছে নিনিতার জন্যই রাস্তাটা মেরামত হয়েছে তাই তারা চাচ্ছে নিনিতাই কাল রাস্তাটা উদ্বোধন করুক।

এই প্রস্তাব শুনে আমারও খুব ভাল লেগেছে।

পরের দিন সকাল বেলা আমরা রাস্তা উদ্বোধন করতে গেছি।নিনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ও আজকে অনেক খুশি।ওর হাঁসি মাখা মুখ দেখে আমারও খুব ভাল লাগছে।

বিকেল বেলা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যখন ঐ রাস্তা দিয়ে রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম তখন নিনিতা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল।

ঢাকায় এসেই আবার ব্যস্ততার আবরনে বন্ধী হয়ে গেলাম।তবে নিনিতার সাথে আমার সম্পর্কটা আগের থেকে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।

দিন গুলি এখন ভালই যাচ্ছে।আজকে সকালে অফিসে আসার সময় দেখে আসলাম নিনিতার শরীরটা বেশি ভাল না।এই জন্য অফিসের কোন কাজেই আজ মন বসাতে পারছি না।

বিকেলের দিকে বাসার কাজের মেয়ে ফোন দিয়ে বলল নিনিতার অবস্থা বেশি ভাল না।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

খবরটা শুনে আমি অফিস থেকে ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে।ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম।

ডাক্তার বলল নিনিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই মূহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না…

চলবে…
(আগামী পর্বে শেষ হবে)

একটা সময় ছিল যখন আমি মানুষের কাছে সাহায্য চাইতাম, আর আজকে অন্যরা এসেছে আমার কাছে সাহায্য চাইতে । সময় কখন বদলায় তা বলা কষ্টের নয় ,অনেক মুশকিল । বলতে পারি, সবি কপাল ।

আপনারা কি ভাগ্য বলতে বিশ্বাস করেন ,হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি । তবে পরিশ্রমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এটাও বিশ্বাস করি ।

লেখা (Tuhin Ahamed)

 

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন