বিকাশ সেবা ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যেগুলো জানা অত্যাবশ্যকীয় যে ভুলগুলোর কারনে ব্যাহত হতে পারে আপনার বিকাশ সেবা আপনি পড়তে পারেন মহা সমস্যায়।

বিকাশ সেবা ব্যবহারক
আসসালামু আলাইকুম।প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই।আশা করি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন।সবাইকে ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা
ঈদ মোবারক।

বর্তমান সময়ে দ্রুত লেনদেনের একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিকাশ।ব্রাক ব্যাংকের এই প্রতিষ্ঠান টি গত ৯ বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের জুলাই মাসের দিক থেকে আমাদের সেবা প্রদান করে আসছে।আমরা প্রায় ক্ষেত্রে বর্তমানে বিকাশে লেনদেনে খুবই অভস্ত্য হয়ে উঠেছি।টাকা পাঠানো,টাকা উঠানো,কেনাকাটা সহ প্রায় সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকাশ দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।তো আজকে আমরা জানব ঠিক কি কি কারনে ব্যাহত হতে পারে আপনার আমার বিকাশ লেনদেন।

১➤সেন্ড মানি ও ট্রান্সফার মানিঃবিকাশের সেন্ড মানির জন্য রয়েছে কিছু শর্ত।যেগুলো না মানলে ব্যাহত হতে পারে সেন্ড মানি লেনদেন।

২➤লিমিটঃবাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক প্রদত্ত লিমিট অনুযায়ী একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ বারে ২৫ হাজার ও প্রতিমাসে ১০০ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন।এক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিলে গ্রাহক অ্যাপ থেকে তার লিমিট অপশন চেক করে নিবেন।নির্ধারিত সংখ্যা বা নির্ধারিত কোটার যেকোন একটি পূর্ন হয়ে গেলে গ্রাহক আর সেন্ড মানি করতে পারবেন না।কেবল যে নিজের ক্ষেত্রে তা নয় যাকে টাকা পাঠাচ্ছেন তার লিমিট টা ও খতিয়ে দেখবেন।এখন বিকাশ থেকে ব্রাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন।সেক্ষেত্রে সেন্ড মানি ও ট্রান্সফার লিমিট মিলিয়ে হিসেব করতে হবে।

৩➤অ্যাকাউন্টের ধরনঃবিকাশের এজেন্ট বা মার্চেন্ট একাউন্টে সেন্ড মানি করা যায় না সেক্ষেত্রে একাউন্টের ধরন যাচাই করে নিবেন।কিছুদিন আগে যেসব নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট নেই সেসব নাম্বারে ও সেন্ড মানি করার অপশন চালু হয়েছে।তাই এখন যেকোন নাম্বারে সেন্ড মানি করা যায়।

৪➤ক্যাশ ইন ও অ্যাড মানিঃএই দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত লিমিট আছে।প্রতিদিন একটি একাউন্টে ৫ বারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা এবং মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সংযোজন করার সুযোগ আছে।ক্যাশ ইনে সমস্যা হলে শুরুতে অবশ্যই দৈনিক ও মাসিক লিমিট চেক করতে পারেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার ফরমে ও জাতীয় পরিচয় পত্রে প্রদত্ত গ্রাহকদের কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়।অনেক গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য না দেয়া থাকার কারনে ক্যাশইন সেবা বন্ধ থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে কাষ্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে তথ্য আপডেট করলে চালু হয়ে যাবে।অনলাইন ব্যাংকি ও ব্যাংকের অ্যাপ থেকে বিকাশে অ্যাড মানি করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।অনলাইন ব্যাংকি এবং ব্যাংক অ্যাপের ক্ষেত্রে ক্যাশ ইন না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।গ্রাহক যে নির্দিষ্ট ব্যাংকের সেবা গ্রহন করেন তার পদ্ধতি জানা থাকলে অ্যাড মানি সেবাটি গ্রহন খুবই সহজ ও ঝামেলাহীন

কার্ড টু বিকাশ সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে কতগুলো বিষয় জানার প্রয়োজন।যেমন যেসব কার্ডে ই-কমার্স পেমেন্ট অপশন চালু নেই সেগুলো থেকে অ্যাড মানি হয় না।সেক্ষেত্রে ব্যাংকে যোগাযোগ করে ই-কমার্স পেমেন্ট অপশন চালু করে নিতে হবে।

৫➤মোবাইল রিচার্জঃমোবাইল অপারেটরেরা গ্রাহকের সুবিধার জন্য বিভিন্ন সুযোগ দিয়ে থাকে।ধরুন,আপনাকে ৪৯ টাকায় ১ জিবির একটি প্যাকেজ দেয়া হল।কিন্ত আপনি জানেন না।সেক্ষেত্রে আপনি যদি অই পরিমান রিচার্জ করেন তাহলে আপনার ডাটা প্যাক টি চালু হয়ে যাবে।কিন্ত আপনার মূল অ্যাকাউন্ট এ রিচার্জ কৃত টাকা জমা হবে না।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে রিচার্জ এর ক্ষেত্রে গ্রাহক তিন ধরনের সুবিধা নিতে পারে।
নিজের প্রয়োজনীয় টাকা কোন প্যাকেজ ছাড়াই রিচার্জ করতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনি ইন্টারনেট প্যাকেজ এবং টকটাইম এর সমন্বয়ে বান্ডেল কেনার সুযোগ ও নিতে পারেন।রিচার্জ করার সময় এই জরুরি বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন।একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ বারে ১০,০০০ টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ১৫০০ বারে ১,০০০০০ লাখ টাকা রিচার্জ করার সুযোগ পেতে পারেন।

গ্রাহক এই সীমার মধ্যে যেকোন প্রি-পেইড অথবা পোস্ট-পেইড অথবা নিজের বা প্রিয়জনের মোবাইল রিচার্জের সুবিধা নিতে পারেন।

৬➤পে বিলঃআপনি কোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কেমন গ্রাহক তা বিল পরিশোধের সময় জানা অত্যাবশ্যকীয়।আপনি যদি পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহক হয়ে ডেসকো’র বিল পরিশোধ করতে চেষ্টা করেন তবে তা ব্যার্থ হবে।বিল পরিশোধের সময় একটি নির্দিষ্ট আইডি নাম্বার ব্যবহার করতে হয়।বিল প্রদানে ব্যার্থ হলে আইডি টি মিলিয়ে দেখুন।এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জেনে তারপর চেষ্টা করুন।

কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির কিছু প্রিপেইড মিটার আছে যেগুলো পুরোপুরিভাবে স্মার্ট মিটার নয়।পুরোনো প্রযুক্তির কারনে এমন কিছু মিটার আছে যেগুলোতে রিচার্জ করা যায় না।সেক্ষেত্রে আপনার মিটার টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপর রিচার্জ করুন।

বিল প্রদানে কোন লিমিট প্রযোজ্য নয়।

৭➤ক্যাশ আউটঃবিকাশ থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৫ বারে ২৫,০০০ টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে ১,৫০০০০ টাকা ক্যাশ আউট করা যায়।এজেন্ট অথবা এটিএম বুথ থেকে ক্যাশ আউট করা যায়।
ক্যাশ আউট না হলে লিমিট চেক করা জরুরী।
যখন আপনি ক্যাশ আউট করেন তখন আপনার একাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত চার্জ কেটে নেয়া হয়।অ্যাপের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকায় ১৭.৫০ এবং ইউএসডি চ্যানেলের মাধ্যমে ১০০০ টাকায় ১৮.৫০ টাকা।এর বাইরে আপনাকে এজেন্ট কে বাড়তি কোন চার্জ দিতে হবে না।

৮➤রেমিট্যান্সঃএকটি বিকাশ একাউন্টে দিনে সর্বোচ্চ ১০ বারে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ৫০ বারে সর্বোচ্চ ৪লাখ ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসতে পারবে।লিমিট না থাকলে রেমিট্যান্স আসবে না।সেক্ষেত্রে প্রেরন ও গ্রহনকারী উভয়ের লিমিট আছে কিনা সেটা দেখে নিন।

৯➤পেমেন্টঃবিকাশ দিয়ে পন্য বা সেবা কেনার ক্ষেত্রে কোন লিমিট নেই।তবে অনেকে পন্য কেনার পরে পেমেন্ট না করে অজ্ঞতাবশত সেন্ড মানি করে।ফলে পেমেন্ট হয় না তাই পেমেন্ট অপশন থেকে পেমেন্ট করতে হবে।আর এক্ষেত্রে সব থেকে উত্তম পদ্ধতি হল কিউ আর কোডের মাধ্যমে স্ক্যান করে পেমেন্ট করা।

১০➤ভুল পিনঃকয়েক বার ভুল পিন দিয়ে বিকাশ একাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তার স্বার্থে একাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক হয়ে যায়।এমন হলে কাষ্টমার কেয়ার সার্ভিস এ ফোন করে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পিন রিসেট করে নেওয়া যায়।

প্রায় সব মোবাইলে বাংলা কিবোর্ড থাকায় অনেক সময় সঠিক পিন নাম্বার ব্যবহার করলেও পিন নাম্বার ভুল দেখায়।এক্ষেত্রে কিবোর্ড সিলেকশন পাল্টাতে হবে।

সুতরাং সঠিক নিয়ম মেনে এখন থেকে নিশ্চিন্তে নিরাপদে লেনদেন করুন।

আপনাদের জন্য কষ্ট করে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে লেখা এই আর্টিকেল টি।

ভাল লাগলে শেয়ার করে অন্যকে জানিয়ে দিন।

আজ এ পর্যন্ত।
সবাই ভাল থাকুন।
সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন