বিজনেসে লস! কি করবেন বস?

আমরা অনেকেই বিজনেস করি। বিজনেসের প্রচুর লাভ আছে। বলতে গেলে চাকরি থেকে বিজনেস অনেক উত্তম। তাড়াতাড়ি সফলতা লাভের এটি একটি সঠিক গাইডলাইন। কিন্তু তারপরও আমরা অনেকে ব্যবসা করতে ভয় পাই। আমরা ভয় পাই ইনভেস্ট করতে। কি কি কারণে আমরা মানসিকভাবে ব্যবসা করতে ভয় পাই? প্রতিটা জিনিসের ই লাভ এবং লস দুটোই আছে। কোথায় আছে যেখানে লাভ নেই সেখানে লস ও নেই। লাভ লস দুই ভাইয়ের মতো।

একটি থাকলে অন্য কেউ থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। নতুন বিজনেস যারা শুরু করতে চান , তারা সর্বপ্রথম লসের দিকটা চিন্তা ভাবনা করেন। এটি সত্যিকার অর্থেই খুব ভালো কথা। তবে আপনি সর্বপ্রথম লস এর চিন্তা না করে এই ব্যবসার সফলতার দিকগুলো খুঁজে বের করুন। কিভাবে আপনি একই জিনিস ভিন্নভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন সেই চিন্তাটা করুন। আবার অনেকে আছে যারা একবার লস করলে দ্বিতীয়বার আর ব্যবসার উৎসাহটা হারিয়ে ফেলে। এটা মোটেই একজন বিজনেসম্যান এর সংখ্যা হতে পারে না।

মনে রাখবেন যেখানে লস আছে সেখানে অবশ্যই লাভ লুকিয়ে আছে। আপনাকে শুধু ধৈর্য ধরতে হবে। দেখবেন একটা সময় আছে সফলতা খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছেন। আপনি হয়তো মনে করছেন, ব্যবসায় লস করা শুধু আপনার সমস্যা। আসলে সেটি সঠিক নয়। মনে রাখবেন আপনি যখন লস করছেন, তাহলে সামগ্রিক বিজনেস এখন মন্দা চলছে। কারন আপনার মত একই ব্যবসা অনেকেই করেন। তাদের যদি লাভ হয় তবে আপনারা লাভ হতো। এটাই স্বাভাবিক। এখন মনে করুন তো আপনি হয়তো, বিজনেস বাদ দিবেন।তাই বলে কি অন্য যারা বিজনেস করে তারা কি বিজনেস ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা যদি টিকে থাকতে পারে তবে আপনি কেন পারবেন না? নিজেকে প্রশ্ন করুন/মনে রাখবেন হতাশাই মানুষকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে যায়/যেটা চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে ভাবার দরকার নাই/অন্য কিছু করে সেই ক্ষতি গুলো বুঝিয়ে দিন। তবেই তো আপনি হতে পারবেন একজন ব্যতিক্রমী বিজনেসম্যান।

এবার দেখে নেওয়া যাক কি কি কারণে আমরা লস করি:

  1. বিজনেসে লস হওয়ার সম্ভাবনা কিংবা কারণ একটি। আর তা হলো আপনার অসচেতনতা। আপনি যদি অসচেতন হন।তবে আপনি যতই ভালো ব্যাবসা বোঝেন না কেন আপনি নাচ করবেন। সব সময় সচেতন থাকুন।
  2. বাজার সম্পর্কে ধারনা: আপনার যদি বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকবে তবে আপনি অবশ্যই লস করবেন।কারন বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে আপনি সঠিকভাবে সঠিক জিনিসটিকে নিয়ে সঠিকভাবে কি করতে হবে তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। এখন যদি আপনি, সঠিক বাজারদরের চাইতে বেশি দামে কিনে ফেললেন,তবে মনে রাখবেন আপনি সেই জিনিস বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন না। এজন্য বাজার সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকা চাই।
  3. আবেগী হওয়া: মনে রাখবেন বিজনেস করতে গেলে কখনই আপনার আবেগ দিয়ে, ব্যবসা করতে যাবেন না। কারন বিজনেসে আবেগের কোন মূল্য নেই। মনে রাখবেন আপনি এখানে টাকা ইনকাম করতে আসছেন। হাজী মোহাম্মদ মহসীন হতে নয়। কবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা একটু মানবিক হন। তবে নতুন অবস্থায় আপনার আবেগী হওয়া টা বিজনেসে লস করার একটি লক্ষণ।
  4. টাইমিং: বিজনেস এর টাইমিং একটি মেজর ফ্যাক্ট। সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটি সঠিক সময়ে ক্রয় কিংবা বিক্রয় করাটা আবশ্যক। এজন্য আপনাকে টাইমিং সম্পর্কে খুব ভালো খোঁজখবর নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, টাইমিং সম্পর্কে যদি আপনি অবগত না থাকেন তবে আপনার বিজনেসে লস হবে। এটা কনফার্ম।
  5. উপস্থিতি, জ্ঞান: যে কোন বিষয়ে আপনার উপস্থিত জ্ঞান আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। আপনার সঠিক সময়ে সঠিক ডিসিশনটা নিতে সহায়তা করবে।অনেক সময় উপস্থিত জ্ঞানের অভাবে আমরা বিজনেসে লস করে থাকি।
  6. অস্থিরতা: মনে রাখবেন কোন কিছু নেই অস্থির হবার কিছু নেই। খুব তাড়াহুড়ো করবেন না। আস্তে-ধীরে সিদ্ধান্ত নিন। সব সময় অস্থিরতা, আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিতে পারে। দেখা যাবে আপনি সহজ কাজটুকুও অনেক কঠিন করে ফেলেছেন। তাই অস্থির না হয় এক ব্যবসায়ী মনোযোগ দিয়ে, কিভাবে লাভ করা যায় সেই চিন্তা করুন।
  7. কাস্টমের রেলেশন: কাস্টমারদের সাথে আপনার সম্পর্ক বন্ধুদের মত হওয়া চাই। আপনি কাদের সাথে যত বেশি রিলেশন বিনিয়োগ করতে পারবেন, আপনার ব্যবসায় মুনাফার হার পেরে যাবে। যতটা সম্ভব কাস্টমার রিলেশন বারান।কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে কাস্টমারদের সাথে রিলেশন খারাপ হওয়ার কারণে, ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। অন্যতম কারণ, বিজনেসে লস হবার।
  8. বিনিয়োগের দুর্বলতা: আমি আছি আমরা বিনিয়োগ করতে ভয় পাই/দেখা যায় বিনিয়োগের দুর্বলতার কারণে যেখানে লাভ হওয়ার কথা ছিল সে জায়গা অন্য লস করছি/এই দুর্বলতা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে/মনে রাখতে হবে ব্যবসা করতে গেলে টাকা লাগবেই/আর সেই টাকাটা সঠিক ব্যবহার সঠিক সময় সঠিক টাইমে করতে হবে/তবে আপনার সেখান থেকে মুনাফা অর্জন করা একদম সহজ হয়ে যাবে/তাই বিনিয়োগের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠুন/মনকে বড় করুন ব্যবসা বড় হয়ে যাবে।
  9. তথ্য ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান: বর্তমান বিশ্বে আপনাকে ভালো একজন ব্যবসায়ী হতে গেলে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। সঠিক তথ্য না পেলে আপনি বিজনেস করতে পারবেন না। কারন একটি সঠিক তথ্য ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবসা উন্নতি অন্যতম হাতিয়ার। তাই এসব বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করুন।
  10. পজিটিভ চিন্তা: আমাদের দেশে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ/অনেকেই আছে আমরা বিজনেস করি/পাশের বিজনেসে লস করলে আমরা অনেক নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করি/এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে/আপনি যখন ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করবেন তখন অন্যজন আপনাকে ঠকানোর চিন্তা-ভাবনা করবে/সুতরাং সব সময় পজিটিভ চিন্তা ভাবনা করুন/পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা বিজনেস এর সফলতা এনে দেয়/এক গবেষণায় দেখা গেছে’পজিটিভ চিন্তাভাবনা মানুষরা অন্যদের থেকে 80 পার্সেন্ট এগিয়ে থাকে/তাই একবার লস করলেও হতাশায় ডুবে না গিয়ে অন্য অন্য ভাবে অন্য কোন উপায় বের করে সেখান থেকে ইনকাম করার চেষ্টা করুন/দেখবেন আপনার লসটা উঠে যাবে নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া পেয়ে যাবেন/সুতরাং সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন পজিটিভ ভাবো/একটা সময় আপনি একজন সফল বিজনেসম্যান হয়ে যাবেন।

বিজনেসে লস করার আরও নানাবিধ কারণ থাকে।উল্লেখিত কয়েকটি কারণ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সেগুলো শেয়ার করলাম।এছাড়াও অন্যান্য আরো নিয়ম-কানুন ও অনেক প্রসেস রয়েছে যেগুলো আমরা, নিজেরাই খুঁজে বের করতে পারি। মনে রাখবেন একবার লস মানেই, আপনি সারাজীবন লস করবেন এমন কোন কথা নেই। সফলতার দ্বারপ্রান্তে যেতে হলে আপনাকে লস গুলো পজিটিভ ভাবে মেনে নিতে হবে।

মনে রাখবেন আপনি যেই ব্যবসায় লস করেছেন সে ব্যবসা আরো অনেক লোকই করে। সুতরাং তারা যদি বিজনেস করতে পারে আপনি কেন করতে পারবেন না। সব সময় উৎসাহ মূলক উদ্দীপনামূলক চিন্তা ভাবনা করুন। পৃথিবীতে সফলতা নির্ভর করে আপনার মনের উপর। আপনি যেমন চাইবেন আপনার ব্রেইন আপনার দেহকে ঠিক সেভাবে পরিচালিত করবে।

আর আপনার ব্রেইন এবং দেহ যখন সে ভাবে পরিচালিত হবে তখন আপনার মনও সেই দিকে ধাবিত হয়ে যাবে। তাই বিজনেস করতে গেলে লস মেনে নিয়েই করতে হবে। এখন ভেবে দেখুন, বিজনেসে লস! তাহলে এখন কি করবেন বস? উত্তরটি এখন আপনারা নিজেরাই ঠিক করুন।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন