যখনই আমরা বিজ্ঞান নিয়ে ভাবি বা কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে কথা বলি ; তখন আমাদের মাথায় বড় বড় বিজ্ঞানী যেমন আইনস্টাইন, নিউটনের কথা মাথায় আসে। আসলে বিজ্ঞান আমাদের চারপাশেই রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠা হতে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ কর্মই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যার তথ্য-উপাত্ত কোন চমৎকার’এর চাইতে কম নয়। উদাহরণস্বরূপ যদি আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে ক্যামেরার মত হিসেব করা হয় এবং কোন মোবাইলের ক্যামেরার জায়গায় আমাদের চোখ লাগিয়ে দেওয়া যায় তবে সেটার রেজুলেশন হবে প্রায় ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। সাধারণত আমরা চাই দেখি তা সবই উল্টো দেখি। আমাদের মস্তিষ্ক সেটিকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সোজা করে চিত্র দেখায়। গবেষণায় জানা গেছে যে, মানুষ না খেয়ে অনেক দিন বাঁচতে পারলেও না ঘুমিয়ে ততদিন বাঁচতে পারে না। এই ধরনের অনেক তথ্য আমাদের অনেকেরই অজানা।আজকে আপনাদের “বিজ্ঞানের সব আকর্ষণীয় তথ্য পর্ব-২”এ জানাবো বিজ্ঞানের এমনই সব মজার তথ্য যা আমাদের হতভম্ব করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
(১) আমরা সকলেই স্টারডাস্ট বা তারার ধুলো দিয়ে তৈরি। যখন কোন তারা ধ্বংসের মুখে পৌঁছায় তখন সেটি বিরাট বিস্ফোরণের মাধ্যমে ছোট ছোট কণায় পরিণত হয় এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিস্ফোরণকেই আমরা “সুপারনোভা” হিসেবে জানি। যে ছোট ছোট কণাগুলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছড়িয়ে পড়ে; সেগুলোই হল স্টারডাস্ট বা তারার ধুলো। এই স্টারডাস্টগুলি পরবর্তীতে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে একত্রিত হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করে। অর্থাৎ গ্রহ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের কলম পর্যন্ত স্টারডাস্ট দিয়ে তৈরি। এবং আমাদের মানব শরীরও স্টারডাস্ট দিয়ে গঠিত। যদি এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কোটি কোটি বছর সময় লাগে।
(২) আমাদের শরীরের ৯৯ শতাংশ জায়গায়ই খালি। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সমস্ত জিনিস এই পরমাণু দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ মানব শরীর অসংখ্য পরমাণু দিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি পরমাণুর মাত্র ১ শতাংশ জায়গাতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন থাকে, অর্থাৎ বাকি ৯৯ শতাংশ জায়গায়ই ফাঁকা পড়ে থাকে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের শরীর থেকে যদি খালি জায়গা বের করে দেওয়া যায়, তাহলে মানব শরীর একটি ছোট্ট চিনির দানার সমান আকৃতিতে পরিণত হবে। তাহলে ভাবুন আমাদের শরীরকে আমরা যা ভাবি তা আসলে আমাদের ভুল মাত্র।
(৩) আমাদের মস্তিষ্ক প্রকৃতপক্ষে একটি ব্রহ্মান্ডের মতই। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে কোটি কোটি ছায়াপথ আছে এবং প্রত্যেকটি ছায়াপথে কোটি কোটি নক্ষত্র আছে। তাহলে ভাবতে পারছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কত নক্ষত্র রয়েছে। প্রকৃতিও মানুষকে একটি শক্তিশালী ও সক্ষম মস্তিষ্ক দ্বারা তৈরি করেছে। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন আছে। যেমন আকাশগঙ্গাতে কোটি কোটি তারা আছে; তেমনই মানব মস্তিষ্কেও কোটি কোটি নিউরন আছে। মস্তিষ্কে যে কোন একটি নিউরন মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম এবং তড়িৎ ক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্দীপনা গ্রহণ ও সঞ্চালনের ব্যাপারে প্রত্যেকটি নিউরনের সক্ষমতা রয়েছে। বার্তা সঞ্চারের সময় এর প্রত্যেকটি কোষ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে; যেমনভাবে রাতের আকাশে তারা চকমক করে, ঠিক সেইভাবে। এমনও হতে পারে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিশাল কোন জীবের মস্তিষ্ক।
(৪) পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষ এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার আগে অনেক প্রজাতির জীব পৃথিবীতে ছিল। মানুষ মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে থেকে এই পৃথিবীর বাসিন্দা। প্রকৃতপক্ষে আগের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যদি বিলুপ্ত না হতো, তাহলে এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব হত। পৃথিবীতে এক প্রকারের প্রজাতির অস্তিত্বের ধ্বংস এবং নতুন এক প্রকার প্রাণী সৃষ্টি বহু বছর ধরেই হয়ে এসেছে। হয়তো এভাবেই মানব জাতির অস্তিত্ব এ পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানপ্রেমীদের কাছে “বিজ্ঞানের সব আকর্ষণীয় তথ্য পর্ব-২” পর্বটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তী পর্বে আপনাদের জন্য বিজ্ঞানের আরো মজার মজার অনেক তথ্য নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ সবাইকে।
আগের আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন।
“হলিউড ও হলিউড অভিনেতাদের নিয়ে সব চমকপ্রদ তথ্য” আর্টিকেল ২ টি পড়তে ক্লিক করুন।