আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি সবাই ভাল আছেন। সেই কামনায় করি। আজকের এই পোস্টে আমি ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যবসায় উদ্যোগ অ্যাসাইনমেন্ট(২) এর প্রশ্ন এবং নমুনা উত্তর লিখে দিব।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।
প্রশ্ন- ‘বাংলাদেশি আরটিও সামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগ এর ভূমিকা নিরূপণ’
নমুনা উত্তর –
উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণাঃ সাধারণ অর্থে, যে কোনাে
কর্মপ্রচেষ্টাই উদ্যোগ। কোন সহৃদয় ব্যক্তি এলাকার জনসাধারণের
বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে একটি হাসপাতাল
স্থাপন করতে এগিয়ে আসেন। তিনি ব্যক্তিগত অর্থ ও সম্পদ ব্যয়
করে হাসপাতালটি স্থাপন করেন এবং ডাক্তার ও নার্স নিয়ােগ
করেন। এটি তার দৃঢ় মনােবল ও উদ্যোগ গ্রহণের ফসল। এভাবে
সকল প্রকার জনহিতকর কাজ যেমন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও
খেলাধূলার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা উদ্যোগের ফসল। ব্যবসায় স্থাপন বা
খেলাধূলার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা উদ্যোগের ফসল। ব্যবসায় স্থাপন বা
প্রতিষ্ঠাও কোন একজন ব্যক্তি বা কয়েকজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার
ফসল। একটি ব্যবসায় স্থাপনের ধারণা চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে
ব্যবসায়টি স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনাই ব্যবসায় উদ্যোগ।
অন্যভাবে বলতে গেলে, ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বােঝায় লাভবান
হওয়ার আশায় লােকসানের সম্ভাবনা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া ও সফলভাবে ব্যবসায়
পরিচালনা করা। যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায়
উদ্যোক্তা। যে ব্যক্তি দৃঢ় মনােবল ও সাহসিকতার সাথে ফলাফল
অনিশ্চিত জেনেও ব্যবসায় স্থাপন করেন ও সফলভাবে ব্যবসায়
পরিচালনা করেন তিনি ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা। ব্যবসায়
উদ্যোগ (Entrepreneurship) এবং ব্যবসায় উদ্যোক্তা
Entronronour) শব্দ দুটি একটি অন্যটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে
জড়িত। যে যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায়
উদ্যোক্তা। অন্যদিকে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে একটি ব্যবসায়
স্থাপনের ধারণা চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়টি স্থাপন ও
সফলভাবে পরিচালনাই ব্যবসায় উদ্যোগ। বিশদভাবে বলতে গেলে,
ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বুঝায়, লাভবান হওয়ার আশায় লােকসানের
সম্ভাবনা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে
যাওয়া ও সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করা।
ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ- ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে উঠার জন্য নিম্নোক্ত অনুকূল পরিবেশ থাকা উচিত –
১/আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতা -অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা যেমন ব্যবসা উদ্যোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তেমনি ভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা অর্থাৎ কর নীতিমালায় রাজস্ব নীতি মালা শিল্পনীতি বাণিজ্যনীতি বিনিয়োগ নীতি মুদ্রানীতি উন্নয়ন কে প্রভাবিত করে অন্যদিকে দেশের জনগনের রুচিবোধ মুল্যবোধ ক্রয় ক্ষমতা ইত্যাদি উদ্যোগ উন্নয়নে প্রভাব রাখে।
১/উন্নত অবকাঠামোর- ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুষাঙ্গিক কিছু সুযোগ-সুবিধা সাথে সাথে বিদ্যুৎ গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দরকার। ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এ সকল উপাদান থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেননা যখন কোন ব্যবসায় উদ্যোক্তা ব্যবসায় স্থাপন অথবা ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা করেন তখন উপরোক্ত জিনিস অত্যন্ত জরুরী। বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা যেমন রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ গ্যাস ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।
৩/ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে দেশের ব্যবসায় উদ্যোগের আরো সম্প্রসারণ সমৃদ্ধি করা যায়। কেননা সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যেমন কর্মকৌশলতা, বিনা সুদে মূলধন প্রাপ্তি। ব্যবসা উদ্যোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
৪/ অনুকূল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি -আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ব্যবসায় পরিচালনা সহজ হয়।
পর্যাপ্ত পুঁজির প্রাপ্যতাঃ যেকোনো ব্যবসায় উদ্যোগ সফল ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুঁজি বা মূলধন থাকা দরকার। অনেক ব্যবসায় পর্যাপ্ত মূলধন না থাকার কারণে সঠিকভাবে স্থাপন করা যায় না। এজন্য দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে যাতে করে উদ্যোক্তারা খুব সহজেই পুঁজি এর যোগান পেতে পারে।
প্রশিক্ষণের সুযোগ- কোন বিশেষ কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করার জন্য জ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রশিক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। অনেক উদ্যোক্তারা মধ্যে সফল উদ্যোক্তার বেশ কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু অনেক সময় উদ্যোক্তারা নিজেদের এই গুনগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব গুণ কাজে লাগানো যেতে পারে। এভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
ব্যবসা উদ্যোগের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ –
১/এটি ব্যবসায়ী স্থাপনের কর্মপ্রচেষ্টা ব্যবসায়ী স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনা করতে ব্যবসায় উদ্যোগ সাহায্য করে।
২/ব্যবসায় উদ্যোগ সঠিকভাবে ঝুঁকি পরিমাপ করতে ও পরিমিত ঝুঁকি নিতে সাহায্য করে।
৩/ ব্যবসায় উদ্যোগ ব্যবসার ধারণা কে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করে।
৪/ ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের পাশাপাশি অন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।
৫/ব্যবসায় উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভাবে অবদান রাখে।
৬/নতুন সম্পদ সৃষ্টির সাথে সাথে মূলধন গঠন ও ব্যবসায় উদ্যোগ অবদান রাখে।
৭/ব্যবসার উদ্যোগ এর সফলতা হলো একটি নতুন পণ্য আবিষ্কার।
৮/ ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সফল ভাবে পরিচালনা করা যায়।
আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগ এর গুরুত্ব –
১/সম্পদের সদ্ব্যবহার- দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় উদ্যোগ দেশে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
২/মূলধন গঠন- কোন প্রতিষ্ঠান গঠন বা নতুন কিছু উৎপাদন এ ব্যবসায় উদ্যোগ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন সঞ্চায়িত করে মূলধন গঠনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩/ জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি-
ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে মোট দেশজ উৎপাদন ও মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়।
৪/কর্মসংস্থান সৃষ্টি- বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারি কর্মসংস্থানের দায়িত্ব এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব নয়। এরূপ সহায়ক ভূমিকা পালন করে দেশে বেসরকারি মালিকানায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা ব্যবসা গড়ে ওঠে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
৫/দক্ষ মানবসম্পদ- বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অনেক অদক্ষ মানুষকে দক্ষ মানুষের পরিণত করে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করা যায়।
৬/ পরনির্ভরশীলতা- যে সকল পণ্য ও সেবা ক্রয় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করে ওই সকল পণ্য ও কারখানা স্থাপন করা যায়।
৭/ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ- তৈরি হয় যার ফলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন নতুন বিনিয়োগ করে।
৮/পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন- ব্যবসায় উদ্যোগের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে।
৯/প্রযুক্তির উন্নয়ন -প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল গবেষণার মাধ্যমে ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা ক্রমাগতভাবে সংগ্রহ ও ব্যবহারের ফলে দেশের প্রযুক্তি ও উন্নয়ন ঘটে।
নমুনা উত্তর টি হুবুহু না লিখে ধারণা নিয়ে লেখার অনুরোধ রইল।
ভুল- ত্রুটি থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।