ভাগ্যেে থাকলে ভালোবাসার মানুষ এভাবেই জীবনেে আসে।

নিলয় ভর্সিটির ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। বাবা-মা এর এরমাত্র ছেলে নিলয়। পড়াশোনায় খুবই মেধাবী এবং যথেষ্ট ভদ্র। ভর্সিটির অনেক মেয়েদেরই ক্রাশ ছিল, কিন্তু ও কখনো মেয়েদের পাত্তা দিত না। সারাদিন বন্ধু এবং ক্রিকেট খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসায়ে সাহায্য করত। এভাবেই চলছিল নিলয়ের জীবন।

কিছুদিন পর ১ম বর্ষের নবীন বরন অনুষ্ঠান চলে এলো। নিলয় সহ তার ডিপার্টমেন্টের অনেক বন্ধুদের কাধে আসলো সেই দায়িত্ব। যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নবীনদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানোর পালা। ফুল দেয়ার একটা পর্যায়ে নিলয়ের চোখ এক জায়গায় আটকে গেল। কালো বোরকা পরিহিত একটা মেয়ে, যার চোখদুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। সেদিন অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটির সম্পর্কে আর কিছুই জানতে পারলো না নিলয়।

প্রায় এক সপ্তাহ পর, ক্যাম্পাসে সেই মেয়েটির সাথে নিলয়ের দেখা হলো। সিনিয়র ভাই হিসেবে নিলয় মেয়েটি কে ডাক দিল এবং নাম জিজ্ঞেস করলো। বাসার ঠিকানাটা পর্যন্ত নিয়ে নিল। মেয়েটির নাম ছিল আসমানী।

ভার্সিটির অনেক ছেলেদেরই নজর ছিল আসমানীর উপর। এদের বেশির ভাগেরই আগ্রহ ছিল আসমানীকে দেখার। কেননা আসমানী সবসময় মুখ ঢেকে রাখতো,শুধু তাই নয় সে হাত মোজা পা মোজা পরিধান করতো। এজন্যই আসমানী কে নিলয়ের এতো ভালো লাগে।

প্রায় প্রতিদিনই নির্ণয় ক্যাম্পাসে ওয়েট করতো আসমানীকে দেখার জন্য, কিন্তু আসমানীর সাথে কখনো কথা বলতো না। খুব ইতস্তত বোধ করতো। কিছুদিনের ভিতর নিলয়ের বন্ধুরা এই ব্যাপারটা নোটিশ করতে থাকলো এবং এটা নিয়ে নিলয় কে পেইন দেয়া শুরু করলো। হারামি বন্ধু থাকলে যা হয়😇

নিলয়ের বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলয় এর পক্ষ থেকে আসমানীকে তার ভালবাসার কথা জানাবে। কিন্তু আসমানি কিছুদিন যাবত ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিল। কারণ জানার জন্য তার বাসার ঠিকানায় ওদের ডিপার্টমেন্টের দুটি মেয়ে কে পাঠালো। খোজ নিয়ে তারা জানতে পারলো আসমানীরা ওদের গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে নিলয়ের লাইফস্টাইলই চেঞ্জ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ তার মাথায় শুধু আসমানী কে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা। পড়াশোনা কিংবা বন্ধুদের আড্ডা, কোনটাতেই তাকে আগের মতো পাওয়া যায় না। নিলয়ের বাবা-মা বিষয় টি নোটিশ করার পর সিদ্ধান্ত নিলো ব্যবসায়ের সকল দায়িত্ব নিলয়কে বুঝিয়ে দিবে, যাতে সে নরমাল লাইফে ফিরে আসতে পারে।

মালেয়শিয়াতে তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য তাকে বলা হলো। যেই কথা সেই কাজ, কেননা নিলয় কখনো তার বাবা-মা এর বিরুদ্ধে যায় নি এবং এরকম কিছু করেও নি। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে জানতো তার বাবা-মা সবসময় তাকে বেস্ট জিনিসটাই দিবে।

বাবা-মা তার কাঁধে ব্যবসায়ের দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি,তাকে বিয়ের জন্যও ফোর্স করা হচ্ছে। জোরাজোরির এক পর্যায় নিলয় রাজি হয়, কিন্তু একটা শর্তে। সে পুরোপুরি প্রতিস্ঠিত হওয়ার আগে তার স্ত্রীর মুখ দেখবে না। তার বাবা-মা বিষয় টি ততো সিরিয়াল ভাবে নেয়নি। তারা ভাবছে নিলয় হয়তো অভিমান থেকেই এ কথাগুলো বলছে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। একমাত্র ছেলের বিয়েতে তেমন বড়ো কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি। মেয়ের পক্ষ চেয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান ঘরোয়া ভাবে হউক, আর নিলয়ও। বিয়ের দিনও নববধূ বোরকা পড়েছিল এবং শ্বশুর বাড়িতেও বোরকা পড়ে এসেছে। নিলয় তার স্ত্রীর দিকে ফিরেও তাকায় নি। তার সকল ভাবনা জুড়ে শুধু আসমানী।

রাত প্রায় একটা বাজতে চললো কিন্তু নিলয় এখনো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার বন্ধুরা একপর্যায় জোর করেই তাকে রুমে পাঠায় এবং বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। ফুলসজ্জার খাটের এক কোনে নিলয়ের স্ত্রী জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে, নিলয়ের কোনো আগ্রহই নেই তার উপর। সে তার স্ত্রী কে, আসমানী সম্পর্কে সব বললো। সাথে এটাও বললো, সে যেন কখনোই নিলয়ের কাছে স্বামীর অধিকার না চায়। নিলয় শুধু আসমানী কে ভালোবাসে। তার জীবনে অন্য কোনো মেয়ের স্থান নেই। নিলয় এটাও বললো তার স্ত্রীর সকল দায়িত্ব সে নিতে রাজি আছে এবং তারা সারাজীবন বন্ধু হয়ে থাকবে।

সবকিছু শোনার পর নিলযের স্ত্রী বললো, ঠিক আছে আপনি যেরকম টা চান এরকমই হবে,কিন্তু এ বাড়ি থেকে আমাকে কখনো তাড়িয়ে দিয়েন না, আর আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিন প্লিজ। নিলয় তাকে আস্বস্ত করে বললো, আপনার ক্ষতি কিংবা অসম্মান হবে এমন কোন কাজ আমি করবো না।

বিয়ের তৃতীয় দিন ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে মালেশিয়া চলে গেল নিলয়। নিলয়ের স্ত্রীর সাথে সপ্তাহে দু-এক মিনিট কথা হতো। সপ্তাহে একদিন কল করে স্ত্রীর খোঁজখবর নিত। কিন্তু এ বিষয় গুলো তাদের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাহির থেকে কারো বোঝার উপায় নেই ওদের সম্পর্কটা কোন পর্যায়ের। এমনকি নিলয়ের বাবা-মাও বুঝতে পারেনি।

দেখতে দেখতে সারে তিন বছর কেটে গেল। নিলয়ের স্ত্রী একটু একটু করে নিলয়কে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু প্রাকাশ করতে পারছেনা নিলয়ও বিষয়টা বুঝতে পেরেছে কিন্তু সে না বুঝার মতোই ব্যবহার করছে। কেননা সে আসমানী কে ভালোবাসে।

একটা পর্যায়ে এসে নিলয়ের স্ত্রী তাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করতে থাকে,যাতে তার ফাইনাল এক্সাম এর সময় নিলয় আসে। বাবা-মা এবং স্ত্রীর জোড়াজুড়ি তে নিলয় আসে, কিন্তু তার স্ত্রী কে এক্সাম হলে নিয়ে যায় নি। তাকে বলছে এক্সাম শেষ হলে তাকে নিতে আসবে।

যেই কথা সেই কাজ। নিলয় ক্যাম্পাসে ঢুকেই আসমানী কে দেখতে পেল, যেখানে আগে আসমানী কে দেখার জন্য নিলয় অপেক্ষা করতো। নিলয় তার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। মুহূর্তের ভিতর সে সবকিছু ভুলে গেল এমনকি তার স্ত্রীর এক্সামের কথাও। দৌড়ে সে আসমানীর কাছে গেল এবং সরাসরি তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করলো। সাথে অনুরোধ করলো আসমানীর মুখ টা খোলার জন্য। প্রত্যুত্তরে আসমানী বললো আপনি তো বিবাহিত, আপনার স্ত্রী এসব জানতে পারলে কষ্ট পাবে। নিলয় কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে আসমানীর ব্যাগ কেড়ে নিয়ে মোবাইল বের করলো। নিলয়ের নাম্বার ডায়াল করতেই সেভ করা নাম ভেসে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ধমকে গেল।

নিলয়ের ব্রেইন কোনো কাজ করছেনা। এটা কিভাবে সম্ভব? তার কোথাও ভুল হচ্ছে নাতো। এসব ভাবতেই নিলয় আবার নাম্বার উঠিয়ে কল দিল, এবারও নাম্বার টা মাই হাসব্যন্ড নামে ভেসে উঠলো। নিলয়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না, তার স্ত্রী আর কেউ নয়। তার ভালোবাসার আসমানী।।

 

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন