মাত্র ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা বিনিয়োগে সফলভাবে কবুতরের ব্যবসা শুরু করুন। (সম্পূর্ণ পোস্ট)

সসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আমার ভাই/বোনেরা? আশা করি আমার সাথে সাথে আপনারাও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো আছেন। আমি আপনাদেরই অনুজ মারুফ আহমেদ, আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম একটি চমৎকার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, যেটা স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়। যেটাতে উদ্যমী হয়ে লেগে থাকলে ভবিষ্যতে আপনি বড় একজন ব্যবসায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

র্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় ব্যবসা কবুতর পালন। অনেকে শখের বসে পালন করেন, আবার অনেকে ব্যবসায়িকভাবে। কবুতরের পালনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ এবং নিয়মিত ভালোমানের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারলে কবুতরের বৃৃদ্ধি খুব তাড়াতাড়ি হয়। ফলে এর ব্যবসাও ভালোভাবে করতে পারা যায়।
আসুন জেনে নিই, এই ব্যবসা করতে আমাদের কি কি প্রয়োজন হবে এবং কিভাবে আমরা সফল হতে পারবো?

যা যা প্রয়োজন:

১. আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন একটি ফাঁকা জায়গা দরকার। যেমনঃ বাড়ির ছাদ, বাড়ির বাহিরের ফাঁকা জায়গা। (৪মি দৈর্ঘ্য ও ২/৩মি প্রস্থ)

২. প্রতি জোড়া কবুতরের জন্য দুইটি করে কবুতরের বাসা/খোপ লাগবে(প্রতিটি খোপ হবে ১৪” দৈর্ঘ্য, ১২” প্রস্থ ও ১২” উচ্চতাবিশিষ্ট)

৩. কয়েক জোড়া কবুতর লাগবে। (দেশী/গিরিবাজ প্রজাতির)

৪. প্রতিটি ঘরে একটি করে খাবার পাত্র এবং পানির পাত্র লাগবে। (পাত্রগুলো আমাদের ঘরে লবণ রাখার ছোট পাত্রের সাইজের সমান হতে হবে)

৫. কবুতরের গোসল করার জন্য বাজার হতে একটি মোটামুটি প্রশস্ত ও একদম অগভীর একটা পাত্র আনতে পারেন।

৬. কবুতরের ডিম পাড়া ও তাতে তাপ দেওয়ার সুবিধার্থে; কবুতরের বাসা যতটি, ততটি মাঝারি সাইজের মাটির পাত্র লাগবে।

৭. কবুতরের সার্বিক সুরক্ষায় ফাঁকা জায়গার চারিদিকে প্লাস্টিকের নেট/জাল লাগিয়ো দিতে পারেন।

যেভাবে শুরু করবেন:

. প্রথমেই একটা পরিস্কার জায়গা নির্বাচন করবেন। যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং পানি উঠেনা। বিড়াল, ইঁদুর ও কাকের আক্রমণ হতে রক্ষায় জায়গার কর্ণারে ১/২ টা গুলতি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। (গুলতি হচ্ছে V -আকৃতির কাঠ নিয়ে সেটার মাথায় মোটা ও লম্বা রাবার লাগিয়ে তাতে পাথরকণা ব্যবহার করে পাখি ও কাঠবিড়ালি মারার পদ্ধতি)

২. কবুতরের বাসা বানাতে আপনার প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। দেখেশুনে বাসাগুলো বানাতে দিবেন, যাতে করে সেগুলোতে বড় কোন ফাঁক ফোঁকর না থাকে। তবে ছোট ছোট ফাঁক রাখলে ভালো। এতে করে অল্প বাতাস চলাচল করতে পারে।

৩. নির্বাচিত জায়গায় বাসাগুলো ১.৫ থেকে ২ মিটার উচ্চতায় লাগিয়ে দিন। কবুতরের বাসার সাথে পানি ও খাবারের পাত্রগুলো লাগিয়ে দিন। ডিমে তাপ দেওয়ার জন্য যে মাটির পাত্রগুলো কিনেছেন, সেগুলো বাসার ভেতরের একটু আড়াল অংশে ঢুকিয়ে দিন।

৪. এরপর বাসার সামনে কবুতরের বিচরণের জন্য কিছু জায়গা খালি রেখে চারিদিকে নেট/জাল লাগিয়ে দিন। এতে করে আপনার কবুতর বহিরাগত জীবজন্তু দ্বারা কোন ক্ষতির স্বীকার হবেনা।

৫. উপরের সবকিছু করা হয়ে গেলে আপনি এবার কবুতর ক্রয়ের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।
কবুতর ভালো চিনে, এমন কাউকে বাজারে নিয়ে গিয়ে কতগুলো দেশী ও গিরিবাজ জাতের কবুতরের জোড়া কিনে আনুন। আপনি যদি চিনেন, তাহলে তো ভালোই। আর কোন উপায় না থাকলে আপনি সরাসরি কোন কবুতর পালকের ফার্ম থেকে বুঝে শুনে কবুতর কিনে আনতে পারেন। প্রতি জোড়া ৬৫০ টাকা করে হলে আপনি ২,০০০ টাকার মধ্যে প্রায় তিন জোড়া অত্যন্ত ভালো মানের দেশী কবুতরের জোড়া পেয়ে যাবেন। কবুতর কেনা হয়ে গেলে সেগুলোর পাখায় টেপ বাঁধা আছে কিনা দেখুন। না থাকলে প্রতিটি পাখা হতে প্রথম ৬টি পালক ধরে সেখানে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে টেপ লাগিয়ে দিন।

৬. এখন বাজার থেকে খাদ্য হিসেবে একটু সাদা টাইপের গম কেনার চেষ্টা করুন। চনা/বুটের ডাল ও কালো রঙয়ের সরিষা কবুতরের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। আপনি চাইলে সেখান থেকেও কিছু কিনে আনতে পারেন। কয়েক কেজি গম, ডাল ও আধা কেজি পরিমাণ কালো সরিষা কিনে নিন।

৭. ব্যাস.. কবুতর পালনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আপনার সকল প্রসেস এখন সম্পূর্ণ। এখন সর্বশেষ কাজ হচ্ছে কবুতরগুলো জোড়ায় জোড়ায় তাদের বাসায় ঢোকান। একটি বাসায় এক জোড়া রাখলে পরের বাসাটি খালি রাখুন। এরপরের বাসায় আরেক জোড়া কবুতর ঢোকালে তারপরের বাসাটি খালি রাখুন। এভাবে কবুতরগুলোকে বাসায় ঢোকান ও বাসার দরজা বন্ধ করে দিন। বাসায় রাখার ১/২ ঘন্টা পর বাসার দরজা খুলে দিন এবং পাত্রগুলোতে কিছু খাবার ও পানি রাখুন।। দুইদিন পর্যন্ত টেপবাঁধা অবস্থায় কবুতরগুলোকে রাখুন। দুইদিন পর চাইলে টেপ খুলে দিতে পারেন

মাত্র ৬/৭ হাজার টাকার বিনিয়োগ এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে আপনি একটা নতুন লাইফস্টাইলে চলে এসেছেন। এখন আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছে এই কবুতরগুলো। সকালে ও বিকালে দুইবার তাদেরকে খাবার দিবেন। পানি দিবেন। সাধারণত কবুতর কেনার ১০/১৫ দিনের মধ্যে তারা ডিম দেওয়া শুরু করে। আর মান ভালো হলে কবুতর ৫ থেকে ৮ দিনের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করবে। তারা প্রতিবার দু’টো করে ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার ১৯ থেকে ২১ দিনের মাথায় তারা বাচ্চা ফোটাবে। সেই বাচ্চা খাওয়ার কিংবা বাজারজাত করার উপযোগী হবে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই। অর্থাৎ, কবুতর পালনের দুইমাসের মাথায় আপনি বিক্রয় করার মতো কবুতরের বাচ্চা পেয়ে যাবেন।

পরবর্তী পোস্টে আমি বলবো, কিভাবে আপনি কবুতরের বাচ্চা বাজারজাত করবেন ও ব্যবসায় লাভবান হবেন। এটা কিন্তু মোটেও হাস্যকর বা লজ্জার কোন বিষয় নয়। আপনি যখন উদ্যোগী, তখন আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কোথায় কি করতে হবে। আমি আপনাদের অবস্থান বিশেষে পণ্য বাজারজাতের বিষয়টি শেয়ার করবো। ঘাবড়ানোর প্রয়োজন নেই। কমেন্ট করে আপনার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি শেয়ার করতে ভুলবেননা..

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন