কোন দুর্র্ঘটনা বা আঘাতের পর তাৎক্ষানিকভাবে রোগীর পরিচর্যা করাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যই একজন আহত ব্যক্তির জীবন অনেক বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাই আমাদের সাবাইকে বিভিন্ন দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারনা থাকা একান্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । আমাদের আশেপাশের পরিবেশে প্রায় ঘটে থাকে এমন তিনটি অতি পরিচিত দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে উল্লেখ করবো।
মাথায় আঘাত বা যখম :
মাথা আমাদের শরীরের প্রধান একটি অঙ্গ এবং এই মাথায় আঘাত পেলে আমরা অনেক বেশি আহত হয়ে যায়। মাথার প্রাথমিক চিকিৎসা জটিল ও কষ্টসাধ্য। কোন কারনে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে, মাথার ত্বক কেটে ছিড়ে গেলে, রক্তক্ষরণ হলে বিলম্ব না করে তাৎক্ষনিক প্রাথমিক চিকিৎসা করে রোগীকে অতিদ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
মাথা যখমের প্রাথমিক চিকিৎসা নিন্মলিখিত ধাপে সম্পন্ন করতে হবে।
১। ভালোভাবে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
২। সম্ভব হলে ক্ষতস্থানে ব্যন্ডেজ বেধে দিতে হবে।
৩। চিকিৎসকের পরমর্শ ছাড়া বা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে মাথায় কোন ওষুধ ব্যবহারের চেষ্টা করা যাবে না।
৪। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
৫। মনে রাখতে হবে মাথায় আঘাত খুবই মারাক্তক। তাই খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা সামান্য ভুলেও মারাক্তক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আগুনে পোড়া :
আমাদের বাসগৃহে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা আগুনের ব্যবহার করে থাকি। এই আগুনের স্পর্শ লাগলেই আমাদের শরীরের সে অংশ পুড়ে বা ঝলসে যাবে। আর শরীরের কোন অঙ্গ যদি পুড়ে যায় তবে কতটা গুরুত্বর তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করতে হবে।
১। কারো কাপড়ে আগুন ধরে গেলে লোকটিকে সত্বর মাটিতে সুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে অথবা একটা কম্বল বা মোটা কাঁথা জরিয়ে ধরতে হবে।
২। শরীরের কোন অংশ এসিডে পুড়ে গেলে সেখানে প্রচুর পরিমান পানি ঢালতে হবে। এতে এসিডের ঘনত্ব হ্রাস পাবে এবং ক্ষতর পরিমানও কমবে।
৩। অতঃপর পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত কাপড় দিয়ে ক্ষত স্থানটি ব্যান্ডেজ করতে হবে। ৪। ফেসকা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তা না গালানোই উচিত হবে।
৫। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
পনিতে ডোবা :
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে শিশুদের ক্ষেত্রে এই দুর্ঘটনাটি প্রায় ঘটে থাকে। শিশুরা পানির কাছে যেতে পছন্দ করে আর অসাবধানতার কারনেই পানিতে ডুবে যায়। পানিতে ডুবে গেলে শ্বাস নালিতে পানি ডুকে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। দুই থেকে তিন মিনিট শ্বাসক্রিয়া বন্ধ থাকলে মস্তিস্কে বড় ধরণের ক্ষতি সাধিত হয়। আর শ্বাসক্রিয়া চার মিনিট বন্ধ থাকলে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
পানিতে ডোবা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিন্ম লিখিত পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে।
১। রোগীকে পানি থেকে তুলে আগে নিশ্চিত হতে হবে যে রোগীর হৃদয়স্পন্দন আছে কিনা কিংবা রোগী শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা।
২। রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস না থাকলে রোগীকে দ্রুত এদিক ওদিক কাত করে, প্রয়োজনে মাথা হালকা নিচে এবং পা উপরের দিকে দিয়ে পিঠে জোরে চাপর দিতে হবে যেন ফুসফুসের পানি বেরিয়ে আসে।
৩। এরপর কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।