সচেতনতাঃ জেনে নিন হঠাৎ গ্রেফতার হলে কী করবেন।

“পুলিশ জনগণের বন্ধু”। বিশেষ করে এই করোনা মহামারীকালে পুলিশ সদস্যবৃন্দ নিজেদের জীবন বাজি রেখে সাধারণ জনগণের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তাতে করে আগে পিছে যাই ঘটুক, এখন পুলিশকে বন্ধু ভাবা যায় নির্দ্বিধায়। আশা করি আমার এই মতের সাথে কেউ দ্বিমত হবেন না।

এরপরেও যেহেতু একজন পুলিশও আমাদের মতই মানুষ। আর ভুলত্রুটি মানুষেরই হয়। সেজন্য কিছু কিছু ব্যতিক্রমী বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই পারে। আর এই ঘটনাটি যদি আপনার সাথেই ঘটে যায়, তাহলে? তাই এমন পরিস্থিতিতে কি করা যেতে পারে তার জন্য আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু আইনি পরামর্শ –

  • গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া অথবা পূর্ব নোটিশ না দিয়ে পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে না। (Cr PC act 54 ব্যতীত)
  • আপনাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ আপনাকে গ্রেফতারের কারণ, গ্রেফতারকারী অফিসারের নাম, গ্রেফতারের সময় ও স্থান সম্পর্কিত একটি মেমো আপনার পরিবারকে দিবে। এবং এটাই নিয়ম। এই মেমোটি অবশ্যই চেয়ে নেবেন। পরবর্তিতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
  • গ্রেফতার করার পরবর্তি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ আপনাকে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করবে এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত একদিনও আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না। কোনও কারনে আদালত ছুটি থাকলে সেক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের আবাসিকে আপনাকে হাজির করাতে হবে।
  • মহিলা পুলিশ ছাড়া কোনও ভাবেই কোনও মহিলাকে গ্রেফতার বা তার দেহ তল্লাশী অথবা একা মহিলা আছেন এমন বাসায় তল্লাশী চালানো যায় না।
  • আইন অনুযায়ী পুলিশ হেফাজতে আপনাকে কোনও প্রকার শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার করতে পারে না। এমনকি একটি চড় মারার অনুমতি নেই।

    এবার জেনে নিন পুলিশ আপনাকে কি কি ভাবে হয়রানি করতে পারে। আর সেক্ষেত্রে আপনি কী করবেন

  • সরকার বিরোধী, শাসক দল বিরোধী কোনও পোষ্টের জন্য পুলিশ সাধারণত কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না। কারণ, বাক স্বাধীনতার অধিকার আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। এসব ক্ষেত্রে কিন্তু পুলিশ মামলা দায়ের করে অন্য ধারায়।
  • আপনি পুলিশী হয়রানির শিকার হতে পারেন। যদি আপনি আপনার ফেসবুক পোস্টে –

১) অকথ্য বা অশ্লীল কোনো শব্দ ব্যবহার করেন
২) কারো বিরুদ্ধে বিশেষ করে ক্ষমতাসীন কারো বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও গুরুতর অভিযোগ করেন
৩) কারো চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হন।

আর তাই এই সমস্ত বিষয়গুলি সচেতনতার সাথে এড়িয়ে চলুন। স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে এমন কোন অস্ত্র তুলে দেবেন না, যাতে আপনাকে জেলে যেতে হয়।

 

কোনোও কারনে যদি গ্রেফতার হয়েই যান, সেক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে যা করতে পারেন ;

  • সাবধানতার জন্য স্থানীয় পরিচিত কোনো ক্রিমিন্যাল ল’ইয়ার, জাতীয় বা স্থানীয় কোন মানবাধিকার কর্মী অথবা মিডিয়া সংশ্লিষ্ট কারো ফোন নাম্বার হাতের কাছে রাখুন।
  • কেউ অযথা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বা হতে পারেন এমনটা জানতে পারা মাত্র তার পাশে দাঁড়ান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে খবরটি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করুন।
  • আপনার সাধ্যমত বেশি বেশি শেয়ার করে গণ সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করুন।
  • প্রয়োজনে এই বিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
  • সচেতন হউন। মনে রাখবেন, আপনার সচেতনতাই পারে আপনাকে ও আপনার আশেপাশের সবাইকে নিরাপদে রাখতে।

সতর্কীকরণঃ অতি উৎসাহী হয়ে কোনোও দাগী আসামী বা সন্ত্রাসী কিংবা দুষ্কৃতিকারীদের জন্য এই সব কাজ করতে যেয়ে নিজেকে দোষীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে যাবেন না।

সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আল্লাহ্‌ হাফিজ।

Related Posts