সর্বজনগ্রাহ্য হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা সম্পর্কিত কিছু তথ্য

হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসার ভাষা বলা হয়। একটি আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত সকল লেনদেন এবং আর্থিক ঘটনাসমূহকে মালিক, ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষ এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীদের নিকট বোধগম্য কিন্তু সংখিপ্তরূপে (Informative but summarized) উপস্থাপন করতে হয়। এজন্য হিসাববিজ্ঞান পেশার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা IASC এবং FASB কর্তৃক কিছু সর্বজনগ্রাহ দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয় যা বিশ্বের সকল দেশের হিসাববিজ্ঞানিরা অনুসরণ করে থাকেন। এইসব দিক নির্দেশনাকে Generally Accpted Accounting Principles(GAAP) বলা হয়।
নিচে GAAP এর বিভিন্ন অংশ সংখেপে আলোচনা করা হলোঃ-(ক) মৌলিক ধারণাসমূহ=
(১)ব্যবসায়ীক সওা ধারণা(Business entity concept)= এই ধারণা অনুযায়ী সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে পৃথক হিসাবের বই সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠান এবং মালিক আলাদা দুজন ব্যক্তির মতন। এ কারণে প্রতিষ্ঠান এবং মালিকের সম্পওি, দায় এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ পৃথকভাবে হিসাবভূক্ত করা হয়। মালিক কর্তৃক বিনিয়োগ তার নিকট ব্যবসার দায় বৃদ্ধি এবং মালিক কর্তৃক উওোলনকে দায় হ্রাস হিসেবে দেখানো হয়। এমনকি একই মালিকের মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের হিসাবও পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
(২) চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা (Going concern concept)=প্রতিষ্ঠানের  হিসাবসমূহ এই অনুমান অনুযায়ী এমন ভাবে প্রস্তুত করা হয় যেন তা অনাদিকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এই অনুমান অনুসারে প্রতিষ্ঠানের সম্পওি, দশায় সমূহকে চলতি, স্থায়ী বা স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদী  ইত্যাদি ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কাল অনুমানের সময় ধরে নেয়া হয় সম্পত্তির ব্যবহার যোগ্যতা ফুরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠান তারপরও টিকে থাকে।
(৩)অর্থে অংকে পরিমাপ ধারণা(Monetary unit measurement concept) =এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী শুধুমাএ অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য ঘটনাকে হিসাবের খাতায় লেখা হয়। অনার্থিক ঘটনা প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের উপর যতই প্রভাব সৃষ্টিকারী হউক পরিমাপযোগ্যতা না থাকলে তা হিসাবভূক্ত করা হবে না। এবং এই নিতী অনুযায়ী একটি মূদ্রাকে লেনদেন লিপিবদ্ধ করার ভিত্তি হিসেবে গন্য করা হয়।
(৪) হিসাবকাল ধারণা (Periodity concept)=হিসাবের স্বার্থে যেহেতু ধরে নেয়া হয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনাদিকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের সচ্ছলতা, মুনাফাযোগ্যতা, ভবিষ্যৎ স্ভাবনা যাচাই এর জন্য নির্দিষ্ট সময়কাল অন্তর আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। প্রতিষ্ঠানের ধরন আইনি বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি কারণে এই সময়কাল এক বছর, ছয় মাস, বা তিন মাস হতে পারে। প্রতিষ্ঠান অন্তবর্তীকালীন মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে এই সময়কালের আরো ভিন্নতা ঘটাতে পারে। যদিও অধিকাংশ দেশে আইন অনুযায়ী এক বছর অন্তর আর্থিক বিবরণী তৈরী বাদ্ধতামূলক।
(খ)মৌলিক নীতি সমূহ =
(১) ঐতিহাসিক ব্যয় নীতি(Historial cost principle)=এই নীতি অনুযায়ী কোন সম্পত্তি যতদিন প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন থাকবে ততদিন পর্যন্ত সম্পত্তি অর্জনের সময়ের বিনিময় মূল্যে হিসাবে প্রদর্শন করতে হয়। সময়ের সাথেসাথে কোন সম্পত্তি যেমন ভূমি বা দালানকোঠা ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও হিসাব বিবরণীতে তাকে ক্রয়মূল্যে উপস্থাপন করতে হয়।
(২)মিলকরণ নীতি(Matching principle)= এ নীতি অনুযায়ী কোন সময়কালের ব্যবসার খরচকে উক্ত সময়কালের আয়ের বিপরীতেই সমন্বয় করতে হবে তা নির্দেশ করে। উক্ত ব্যয়কে বিক্রয় মূল্য অর্জনের খরচ হিসেবে গন্য করতে হবে।
(গ)সীমাবদ্ধতা সমূহ = অনেক সময় হিসাবতথ্য ব্যবহারকারী হিসাবতথ্যকে ব্যয়শূন্য মনে করেন। তবে হিসাব তথ্যের প্রস্তুত এবং সরবরাহকারীগণ জানেন যে এটা সত্য নয়। প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে তথয় প্রদানের খরচ এবং সম্ভাব্য সুবিধা তুলনা করে তবেই উক্ত তথ্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Related Posts