হারিয়ে যাওয়া তাজমহলের নকশাকার!

এতো বড় এক নির্মাণ যাকে বলা যায় স্থাপত্যশিল্পের এক অভাবনীয় সৃষ্টি। অথচ এর নকশাকার কে বা কারা ছিলেন তা সম্পর্কে কেউ জানে না! বলা হচ্ছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি তাজমহলের কথা।

ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত এই হেরিটেজ সাইটটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে। তথ্যমতে, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য-এর লিস্টে এই তাজমহলই সবচেয়ে নতুনতম সৃষ্টি। স্বাভাবিকভাবেই, এই সৃষ্টির পেছনে সব তথ্যই জানা থাকার কথা ইতিহাসবিদদের। অথচ অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, কেউ এর নকশাকারের নাম জানেনা!    

চেঙ্গিস খান ও তামেরলেনের বংশধর হিসেবে মোঘলরা নিজেদের দাবি করলেও নিজেদেরকে বৈচিত্র্যময় ও ধর্মীয়ভাবে সহনশীল সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আর সেকারনেই মোঘলদের ঐ সময়কে ভারতের শেষ স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত করা হয়ে থাকে। মোঘলদের তৈরি করা তাজমহল স্থাপত্যকর্মটিও তাদের এই নিজস্ব পরিচয় বহন করে। 

মোঘল সাম্রাজ্যের এই অভিনব স্থাপত্যকর্মটি ভারতীয়, পার্সিয়ান এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের মিশেলে তৈরি করা। মোঘলরা যদিও তাদের পার্সিয়ান এবং তৈমুরি শিকড়ের জন্য গর্বিত, কিন্তু তাজমহলের নকশা থেকে বোঝা যায় যে তারা তাদের মুসলিম ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে নিজেদেরকে ভারতীয় হিসাবেই প্রকাশ করতে চেয়েছে।

আর এর নিদর্শন ফুটে উঠে তাজমহলের নকশায়।  ১৭ শতকের মোঘল সাম্রাজ্যের দর্শন ও চিন্তায় এর যাজকতন্ত্রের প্রভাব ছিল লক্ষ্যনীয়। তাজমহলের স্থাপত্যকর্মেও এই বিষয়টিকে মূল ধরে এর নকশা করা হয়।  

মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতি ধরে রাখতে নির্মাণ করেন এই তাজমহল। স্থাপত্যকর্ম নির্মাণের সময় এর নকশাসহ যাবতীয় দিক তিনিই তদারক করতেন। ইতিহাসবিদদের দেওয়া তথ্য মতে, স্থাপত্যবিদ্যায় শাহজাহনের আগ্রহ থাকলেও তিনি আদতে তাজমহলের নকশা নির্মাণের কাজে ছিলেন না।

এর নকশার কাজে নিয়োগ দেওয়া হয় একদল বিশ্বখ্যাত নকশাকার ও স্থাপত্যশিল্পী। স্বজ্ঞানে শাহজাহান এই নকশাকারদের নাম সবার সামনে আনতে চাইছিলেন না। তিনি চেয়েছেন, মোঘল সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য ও তার স্ত্রী’র নামই উঠে আসুক এই সৃষ্টির মধ্যদিয়ে।     

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ৩৭ জন নকশাকার ও স্থাপত্যশিল্পী নিয়োগ দেন শাহজাহান এই অসাধারন স্থাপত্যটি তৈরি করতে। ধারণা করা হয়, এই দলটির শীর্ষ স্থপতি ছিলেন তৎকালীন লাহোরের অধিবাসী উস্তাদ আহমেদ। পার্সিয়ান ভারতীয় এই স্থপতি দিল্লীর লাল দুর্গ তৈরির কাজেও নিয়োজিত ছিলেন।

অবশ্য বর্তমান সময়ের ইতিহাসবিদদের মতে, কোন এক বা দুইজন নয়, এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় স্বমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। যেমনঃ বিখ্যাত তুর্কি  গম্বুজ-নির্মাতা ইসমাইলি আফান্দি ছিলেন এই দলে। সাথে আরও শোনা যায় মাস্টার ক্যালিগ্রাফার আমানত খানের কথা, যার অবদান রয়েছে তাজমহলের প্রবেশদ্বার নির্মাণে।   

এই পুরো দলটিকে নির্দেশনা দিতেন সম্রাট শাহজাহান। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত যেমনঃ ইউরোপ, ইন্ডিয়া, পার্সিয়া, অটোম্যান সাম্রাজ্য থেকে আসা ২০,০০০ শ্রমিক যুক্ত হয় এই নির্মাণ কাজে। সাথে যুক্ত হয় ১০০০ টি হাতি, যাদের দিয়ে ভারী জিনিসপত্র উঠানো নামানোর কাজ করানো হয়।

বিচ্ছিন্নভাবে অনেকের নাম আসলেও কেউ আসলে স্থাপনাটির নকশাকার ও এই স্থপতি দলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। আদৌ এর কোন নকশাকার ছিলো কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরও তাই হারিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। 

Related Posts