আসসালামু আলাইকুম, গল্পটি খুব ইন্টারেস্টিং না হলেও, যারা ইন্টারেস্টিং খুঁজে বেড়ান তাদেরকে বলব সব গল্পই ইন্টারেস্টিং হয় না । কিছু গল্প থাকে যা কখনো ভালো লাগেনা। এই গল্পটি ঠিক সেরকম। গল্প হলেও কিছুটা সত্যি,।
তিন তিনবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর, এবার পাশ করলো হিমেল। বাবা আনন্দ রহমান, এবার খুব খুশি। দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ছেলে তার, তাও আবার এসএসসি পাস করেছে। বাবা মায়ের গর্ভের কোন শেষ নেই। ছেলেকে নিয়ে তাদের একটু বেশী গর্ব। হিমেল ও বুঝতে পারছে না সে কিভাবে পরীক্ষায় পাশ করল! কারন সে ভালোভাবেই জানে সে যা লিখেছিল সে লেখাতে তো পাস করার কথা না! তবুও পরীক্ষার পরীক্ষার পাশের কথা শুনে তার প্রথম বিশ্বাস হচ্ছিল না। তবে হিমেলের বাবা স্কুলের নোটিশ বোর্ড টা ভালোভাবে দেখে এসেছে।
সেখানে হিমেলের রোল নাম্বার টা একদম স্পষ্ট দেখাচ্ছে। তারমানে সত্যি সত্যি হিমেল পাস করেছে।আসলে একবার না দুবার না পরপর তিনবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করার মজাটা বোধহয় যারা এরকম অবস্থা রং মধ্যে পড়েছেন তারাই বলতে পারবেন। যাইহোক বাড়িতে সবাই বেজায় খুশি। হিমেলের মামা থাকেন বগুড়ায়। মামা ও খুব খুশি হলো হিমেল এর এর পরীক্ষার রেজাল্ট এর কথা শুনে। আসলে খুশি হবার কারণ আছে বটে,হিমেল যে পরীক্ষায় পাস করবে এটা কেউ বিশ্বাসই করছিল না। যে ছেলেটি বাংলা রিডিং পড়তে দাঁত ভেঙ্গে ফেলে, তার পাশ হলে তো বিষয়টা এরকমই দাঁড়ায়। তবে ছাত্র হিসেবে খারাপ হলেও হিমেল, ছেলে হিসেবে কিন্তু একদম মন্দ নয়। উঁচা লম্বা নায়কের মত চেহারা তার। কোন দিকে তার কমতি নেই। কমতি শুধু একটাই ছিল, সেটা ছিল সে পড়াশোনায় বেশ অমনোযোগী।
তার ক্লাসমেটরা কত আগেই ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে অনেকে অনার্সে ভর্তি হয়ে গেছে। তাদের সাথে দেখা হলে তার খুব লজ্জা লাগে। তবে অসাধারণ ব্যাপারটা হলো, হিমেল নিজেকে পাল্টে ফেলেছে, কখন যে পাল্টেছে সেটা অনেকেই বুঝতে পারিনি। বিকেলবেলা হিমেল গেছে বাজারে। বাড়িতে দুই একজন আত্মীয় স্বজন এসেছে। হিমেলদের আত্মীয়-স্বজনরা একটু ঘন ঘনই বাড়িতে আসেন। তার বাবা রিলেটিভ দের সাথে খুব ভালো আচরণ করেন। আজ তার বাবা খুব খুশী,। একমাত্র ছেলে বলে কথা। এতদিন তার বন্ধু বান্ধব দের কাছে সে খুব ছোট হয়ে থাকতো। তাদের ছেলেরা সবাই ভাল ছাত্র। তার ছেলেটা পাশে করতে পারত না। জিনিসটা তাকে খুব কষ্ট দিত।
আজ হয়তো সেই কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করল। ছেলের এমন কীর্তি দেখে কোন বাবা খুশি না হয়ে কি থাকতে পারে। হিমেলের বেলায় ঠিক এরকমই ঘটেছিল। রাত্রিবেলা খুব ভালো খাওয়া দাওয়া হল। এখন খাবার টেবিলে সবাই বলাবলি করতে লাগল, হিমেল কি কলেজে ভর্তি হবে? সবাই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলো। হিমেল এবার বিছানায় শুয়ে আছে। আজ তার ঘুম হচ্ছে না। মাথার ভিতরে কি সব যেন চিন্তা চেতনা চলে আসছে। হয়তো বেশি খুশিতে মানুষ এরকমই হয়। বারবার লোপার কথাটা মনে আসছে। হত লোপা তাকে উৎসাহ না দিলে সে পাশ করতে পারত না। আসলে ঘটনাটা ঠিক তাই। লোপা তার এলাকার একটি মেয়ে। একই এলাকায় বাড়ি তাদের। মেয়েটিঃ ইন্টারমিডিয়েটে পাশ করেছে। একসময় হিমেলের ক্লাসমেট ছিল। হিমেলকে সেই মোটিভিকেশন করেছে। কি কারনে করেছে, ব্যাপারটি একটু ভাববার বিষয়। হিমেল ছোটবেলা থেকেই খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে ছিল। বলতে গেলে ডানপিটে। কারো কথা শুনতো না সে।
মনে যা চাই তো তাই সে করে বেড়াতো। কখনো ক্রিকেট মাঠে, কখনো বা আবার বিজয় মিছিলে। এলাকায় হিমেল কে চেনে না এমন কোন লোক নেই। লোপা খুব বুদ্ধিমতি একটি মেয়ে। কৈশোরের গণ্ডি না পেরোতেই মনের অজান্তে মন দিয়ে ফেলেছি হিমেল কে। প্রথম প্রথম অবশ্য হিমেল তেমন কোনো পাত্তা দিত না। কিন্তু লোপা নাছোড়বান্দা। আসলে মেয়ে মানুষ বোধহয় এরকমই হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন মিল ছিল না। লোপা ছিল খুব বুদ্ধিমতি একটি মেয়ে, পরীক্ষায় রেজাল্ট তার ভালো। ভালো রেজাল্ট নিয়ে সে পাশ করেছে। কেউ কখনো ভাবতেই পারিনি এমন একটি স্ট্যান্ড করা মেয়ে হিমেল এর মত ছেলেকে পছন্দ করবে। যেদিন প্রথম হিমেলকে সে বলেছিল, তার জন্য তার খুব চিন্তা হয়। সেদিনই হিমেল বুঝতে পেরেছিল। তাকে নিয়ে ভাবার মতো পৃথিবীতে কেউ একজন আছে। প্রথম প্রথম দুজনের তেমন কোনো কথা হতো না।
কিন্তু গত বছর থেকে তাদের কথা অনেক দূর এগিয়েছে। হিমেলকে সে প্রায়ই বলতো সে যদি তাকে পেতে চায়, অবশ্যই তাকে মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। হিমেল অবুঝ শিশুর মতো লোপার সেই কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।লোপার জন্যই হয়তো সে আজ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পেরেছে। কিছুদিন পরের কথা,। হিমেলএখন কলেজের ছাত্র। খুব ভাল ছাত্র না হওয়াতে, সকলের পরামর্শ নিয়ে সে মানবিকে ভর্তি হয়েছে। অবশ্য এজন্য লোপা তাকে বারবার সাজেশন দিয়েছে। এখন সে নিয়মিত কলেজে যাওয়া আসা করে। হিমেল আছো কলেজের দিকে যাচ্ছে। রাস্তার মাঝে লোপার সাথে দেখা হল। লোপার মুখটা একদম শুকনো। হিমেল তাকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার? মন খারাপ দেখছি। লোপা কোন কথা না বাড়িয়ে, হিমেল কে বললো চলো আজ অন্য কোথাও যাই। অবশ্যই অন্য কোথাও যাওয়ার কথাটা হেমেল লোপাকে বহুবার বলেছে। কিন্তু তখন লোপা শুধু এড়িয়ে গেছে। তার একটি কথা এখনো সময় হয়নি। যেদিন সময় হবে সেদিন আমি তোমাকে কথাটি বলবো। কিন্তু জানিনা আজকে সেই সময়টা এসেছে। হিমেল মনে-মনে ভাবছে।
কথা না বাড়িয়ে দুজনে চলে গেল মেঘাই নদীর ঘাটে। অবশ্য এখানে হিমেল বহু বার এসেছে। লোপাকে নিয়ে এই প্রথম সেখানে এসেছে। অবশ্য তাদের মনের ভিতর একটু ভয় ভয় করছিল, কেউ যদি দেখে ফেলে। তবুও কথায় আছে না ভালোবাসায় ভয় নেই। সবার অগোচরে তারা চলে এসেছে নদীর ঘাটে। নদীর ঘাটে খুব সুন্দর সুন্দর দেখার অনেক কিছু আছে। অবশ্য আগে এমন ছিলনা। এখন সব কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। খুব সুন্দর করে ঘাটতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে বসার জায়গা আছে। কিছু দূরে দূরে কিছু দোকানপাট খোলা হয়েছে, নিয়মিতই এখানে পর্যটকদের আসা যাওয়া শুরু হয়েছে। তারা দুজনে একটি যাত্রী ছাউনীর নিচে বসলো। উপরে ছাতা দেওয়া আছে। রোদের লেশমাত্র নেই। নদীর হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চারিদিকে নিরবতার এক সৌন্দর্য তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। নদীর দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় কিছু ছোট ছোট নৌকা। তারা বিশাল নদীর মাঝে নিজেদের এঁকে ফেলেছে ক্যানভাসের রঙের তুলিতে।
দেখতে অপরুপ লাগে। হিমেল দূরের দিকে তাকিয়ে লোপাকে বলছে, দেখো লোপা দেখো কি সুন্দর দেখাচ্ছে। নৌকায় চরবা তুমি? লোপার মুখটা গম্ভীর। সে শুধু হিমেলের দু চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হিমেল আবার বলে উঠলো! কি ব্যাপার তুমি কিছু বলছো না যে। কথোপকথন শুরুর আগেই সেখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে প্রবেশ করল এক বাদামওয়ালা। তাদেরকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে প্রেমিকযুগল।বাদাম ওয়ালার অবশ্য এদেরকে খুব ভালোভাবে চিনতে পারে। হিমেল 20 টাকার বাদাম কিনে নিল। কিন্তু সেই বাদাম লোপা হাতে নিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে হিমেল বাদামগুলো ছিঁড়তে লাগল। হিমেল একটি একটি করে বাদাম ছিড়ছে, আর লোপাকে খাইয়ে দিচ্ছে। লোপা লক্ষী মেয়ের মত, হিমেলের এই অতি বাড়াবাড়ি টা সহ্য করে যাচ্ছে। এবার হিমেল মাটির দিকে তাকিয়ে, রুপা কে জিগ্যেস করল, আচ্ছা এখন বল ঘটনাটা কি। আমি জানি তুমি আমাকে এমনি এমনি এখানে নিয়ে আসো নি। কোন কিছু একটা ব্যাপার আছে। এবার বল।
লোপা অবাক দৃষ্টিতে হিমেলের দিকে তাকালো। আচ্ছা তুমি জানো আমি তোমাকে কিছু একটা বলব?। কি ? আমি কি করে জানব তুমি আমাকে কী বলবা। তবে তোমার হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে তুমি কিছু একটা বলবা, এখন হেঁয়ালি না করে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো কি বলবা। লোপা এবার আস্তে আস্তে বলতে শুরু করল, গতকাল পাত্রপক্ষ এসেছিল দেখতে! কথাটি শুনে হিমেল হো হো করে হেসে উঠলো। হিমেলের হাসাটা দেখিয়ে লোপাট ভীষণ রাগ করলো। আমি এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললাম আর তুমি হেসে উঠলা। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো। সব মেয়েদেরই এমন হয়। তোমাকে দেখতে আসলো আর বিয়ে হয়ে গেল। ওই বেটা তোমার হবে না। আমি থাকতে তোমাকে অন্য কেউ বিয়ে করতে পারবে না। নিশ্চিন্তে থাকো। লোপা আমার খুব ভয় হয়। বাবা বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে । যে ছেলেটি দেখে গেছে, পাত্র হিসেবে সে একদম মন্দ নয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছেন। বাবার একটি কথা, এমন শিক্ষিত ছেলে পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া ছেলেপক্ষ আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। হিমেল এবার চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো।
তোমার কি পছন্দ হয়েছে। লোপা কোন কথা বলল না। শুধু চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। হিমেল এবার আকাশের দিকে তাকালো। লোপা তুমি হয়তো জানো না তুমি কাকে ভালবেসেছ। জীবনে যা কিছু চেয়েছি তার সবকিছুই পেয়েছি। শুধু তোমাকে রেখেছি যত্ন করে। একদিন ঘরে তুলে নিব খুব আপন করে। পৃথিবীর যত বাধা আসুক না আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা। আমি জীবনের পরীক্ষায় ফেল করতে চাইনা। লোপা আবার হাসতে হাসতে ফেটে পড়ার মত অবস্থা। তুমি হাসছো কেন? মাধ্যমিকের পরীক্ষা টা তিনবার করে দিয়েছো। আবার বলছে জীবনের পরীক্ষা! কি তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তো। তোমার আমার প্রেম টা ঠিক ওই নদীতে চলা নৌকোর মত। তুমি বলতে পারবে এখানে যে ক’টি নৌকা আছে, তার কোটি ঘাটে ফিরবে, আর কয়টি ঘাটে ফিরবে না। লোপার উত্তর জানিনা! দেখো আমার কিছু ভালো লাগছেনা। আমিও তোমাকে ছাড়া অসহায়। জীবনে একটি মাত্র ভুল আমি করেছি তাহলে তোমাকে ভালোবেসে।আচ্ছা আমি কি বোকা তোমার মতো একটি ছেলেকে আমি কি দেখি ভালোবাসলাম। তোমার মাঝে কি আছে?
হিমেল এবার লোপার দিকে তাকালো। আচ্ছা বলতো তোমার সামনে যে নদীটা দেখতে পাচ্ছ, সেই নদীর ভিতরে কি আছে? খুব সোজা’নদীর ভিতর মাছ আছে। এবার দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। চলো ফিরে যাওয়া যাক অনেক দেরি হয়ে গেছে। চলো দুজনে তারা বাড়ি ফিরে চলে এলো। রাত্রিতে হিমেলের ঘুম আসছে না। লোপার কথা চিন্তা হচ্ছে তার। লোপার সাথে ফোনে কথা বলা সম্ভব না।বাবা ডিজিটাল যুগের মানুষ হয়েও এখনো মেয়েকে এনালক রোগী করে গেছে। তার বাবার মতে ফোন-টোন নাকি ভালো না। মেয়ে মানুষ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সে লোপাকে এখনো ফোন কিনে দেন নি। হিমেলের মনে হচ্ছিল লোকটাকে একটা ঘুসি মেরে না,থাক হাজার হলেও তো লোপার বাবা। আচ্ছা আবার সত্যি সত্যি লোপার বিয়ে হয়ে যাবে নাতো। নানান চিন্তায় চিন্তায় হিমেলের ঘুম আর আসছে না। তবে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ইদানিং সে ঘুমোলে ঘুমের মধ্যে কি সব জানি দেখে। কখনো সাপ কখনও কুমিরের কখনো বা কোন হিংস্র প্রাণী।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দাদীর কাছে জিজ্ঞেস করতেই, দাদি আরো ভয় ধরিয়ে দেন। উনি উনি বলেন আমার নাকি সামনে অনেক বিপদ। দাদীর কাছে শুনতে আসা মানেই তিনি নতুন আরেক চিন্তা ধরিয়ে দেন।আবার মাঝে মাঝে মনে হয় যদি কথাগুলো সত্যি হয়। কাল তো বিপদ আরো বেশি। যাইহোক কিছুদিন কেটে গেল। কিন্তু হিমেল পড়ে গেল নতুন এক চিন্তায়। কদিন হলো লোপাকে সে দেখতে পাচ্ছে না। ওর ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া যাবে। ওর এক চাচাতো ভাই আছে হিমেলের বন্ধু। তার কাছ থেকে শোনা গেল লোপা খালার বাড়িতে গিয়েছে। তার খালার বাড়ি চালিতাডাঙ্গা। অন্য থানায়, হিমেল কখনো যায়নি সেখানে। কি করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ভাবতে লাগলো সে। এই যুগে কেউ ফোন ছাড়া থাকে। হিমেলের খুব রাগ হতে লাগলো। আজ মানুষ গ্রামে বসে থেকে দুবাইতে মানুষ খুঁজে বেড়ায়। আসে তার একমাত্র প্রেমিকাকে খুঁজে পাচ্ছে না। খুব অসহায় অসহায় মনে হতে লাগলো তাঁর নিজেকে। কয়েক দিন কেটে গেল। না লোপার কোনো খোঁজই নেই। যে মেয়েটার সাথে একদিন দেখা না হলে সে নিজেই রাগ করত। আজ কয়েকদিন হয়ে গেল তার কোন খবর নেই। বিষয়টা খুব একটা ভালো লাগছে না। হিমেল কথাগুলো ভাবছে, নিজের অজান্তেই। এমন তো হবার কথা নয়। একটু চিন্তা করার বিষয়। যাইহোক কয়েক দিন কেটে গেল। হিমেল গঞ্জে থেকে ফিরছিল। তার গঞ্জে থেকে ফিরতে ফিরতে রাত্রি অনেক হয়ে গিয়েছে। রাত্রিবেলা বাসায় ফিরে আর খাওয়া-দাওয়া করেনি সে। খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলো। অন্যান্য দিন হয়তো একটু দেরি করে উঠে সে। কিন্তু আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল।
রাত্রিতে ভালো ঘুম হয়নি তাঁর। যদিও শরীরটা অনেক ক্লান্ত। তবু ভাবছিল সকালবেলার আবহাওয়াটা শরীরের জন্য ভালো। হিমেল হাঁটতে হাঁটতে তিন রাস্তার মোড়ে চলে এলো। এখনো কোন দোকানপাট খোলেনি। শীতের শুরু হওয়ায় একটু একটু কুয়াশা দেখা গেল চারিদিকে। মিষ্টি মিষ্টি শীতে আবহাওয়াটা বেশ ভালই লাগছিল তার। তবে চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। মনে মনে ভাবছিল একটু হেঁটে বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমাবো। রাস্তার ও প্রান্ত থেকে কেউ একজন হেঁটে আসছে। একটু কাছে আসতেপরিষ্কার হয়ে গেল চেহারাটা। ও এ তো দেখছি লোপার সেই চাচাতো ভাই টা। আসসালামু আলাইকুম। সালাম দিতেই সে থমকে দাঁড়ালো।হিমেল তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল ভাই এত সকালবেলা কই যান?, সে-জে জবাবটি দিল সে জবাব শোনার জন্য সে কখনোই প্রস্তুত ছিল না। ভাই বইলেন না কাজ আছে। আমাকে খুব তারাতারি যেতে হবে। হিমেইল জিজ্ঞেস করল কোথায়? সে উত্তর দিল চালিতাডাঙ্গা। চালিতাডাঙ্গা কথাটি শুনে হিমেল একটু থমকে চোখ দুটো চকচক করে উঠলো । এমনিতেই চোখ জোড়া লাল হয়ে গেছে তার। কেন? আজ লোপার বিয়ে! সে আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালো না। সে চলে গেল।হিমেল অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার চলে যাবার দৃশ্যটি দেখতে লাগলো। এতে প্রকোপটা খুব বেশি না হলেও হালকা হালকা শীত পড়েছে। কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারিদিক।