বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?আশা করি ভালই আছেন।আজকে আপনাদের জন্য ব্যতীক্রমধর্মী একটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি।টাইটেল দেখেই হয়ত বুঝে গিয়েছেন।হ্যা,আজকে সনেট নিয়ে কথা বলব।চলুন জেনে নেই
১৪ টি অক্ষর ও ১৪ টি লাইন বিশিষ্ট অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত কবিতাকে সনেট বলা হয়।এটি খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম পরিচিতি পেয়েছিল।সনেটের জনক হলেন ইতালিও কবি পের্ত্রাক।সনেটের দুটি অংশ আছে।একটি হলো অষ্টক অপরটি হল ষষ্ঠক।সনেটে অষ্টক মূল ও ষষ্ঠক হল উপসংহার।অষ্টকে ভাবের প্রবর্তনা এবং ষষ্ঠকে ভাবের পরিণতি প্রকাশ পায়।অর্থাৎ অষ্টক বা আট চরণে একটা ভাব প্রকাশ পায় এবং পরবর্তী ছয় চরণে তার বিশ্লেষণ থাকে।পের্ত্রাক সনেটের প্রবর্তক হলেও সনেটের নিয়মকানুন প্রবর্তন করেন সিসিলিও কবি সুইডেন।তিনিই সনেটকে অষ্টক এবং ষষ্ঠকে ভাগ করেন।Sonnet (সনেট) একটি ইংরেজি শব্দ।এটি এসেছে ইতালিও শব্দ Sonetto থেকে।সনেট তিন প্রকার।
যথাঃ
১।। পের্ত্রাকিও সনেটঃএখানে অষ্টকের বিন্যাস হল কখ খক,কখ খক এবং ষষ্ঠকের বিন্যাস হল গঘঙ,গঘঙ বা গঘগ,ঘগঘ বা গঘঙ,ঘগঙ।
২।। শেক্সপীরিও সনেটঃএখানে তিনটি চতুষ্ক ও একটি সমিল দ্বিপদিকা দিয়ে গঠিত।যেমনঃ কখ কখ,গঘ গঘ,ঙচ ঙচ,ছছ।
৩।। ফরাসি সনেটঃএখানে অষ্টকের বিন্যাস হয় কখ কখ,কখ কখ এবং ষষ্ঠকের মিল বিন্যাস হয় গঘ,কগ খঘ।
মাইকেল মধুসদন দত্ত বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনার কৃতিত্ব অর্জন করেন।১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে থাকাকালীন সময় ইতালিও কবি পের্ত্রাকের সনেট থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হন।এরপর তিনি সনেট রচনা শুরু করেন এবং সনেটকে চতুর্দশপদী কবিতা নামে আখ্যায়িত করেন.১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে তার চতুর্দশপদী কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়।পরবর্তীতে শামসুল ইসলাম,ফররুখ আহমেদ,রবীন্দ্রণাথ ঠাকুরসহ আরো অনেকেই কিছু সনেট রচনা করেন।মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি বিখ্যাত সনেটের নাম “কপোতাক্ষ নদ”।কবিতাটি নিম্নরূপঃ
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া- মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা?- যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি-রুপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে
বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে।
সনেট বিশ্ব সাহিত্যের ধারাকে বিকশিত করেছে।এই ধরনের কবিতায় দেশের প্রতি ভালবাসা,প্রেম ও আবেগকে সুচারুরূপে ফুটিয়ে তোলা হয়।তাই সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে সনেট অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।সনেট বাংলা সাহিত্যকে এনে দিয়েছে সুশৃঙ্খল ও সুনিপুণ সৌন্দর্যের ছোয়া।এজন্য সাহিত্যে সনেটের পদচারণা হল ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ এবং এটি সাহিত্যের নতুন দিক উন্মোচিত করতে পুরোপুরি সক্ষম।
তো আজ এখানেই ইতি টানছি।আবারো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে উপস্থিত হবো,ইনশাআল্লাহ।সবাই ভাল থাকবেন।