সেই ক্লাস সেভেন থেকে মূলত আমার ভেতর মুভিপোকা ডুকে বলা যায় , আগে তো শুধু আমি বিটিভিতে হওয়া বাংলা মুভিগুলোই দেখতাম কিন্তু যত বড় হয়েছি বাইরের দেশের মুভি দেখার প্রতি আগ্ৰহ বেড়েই গেছে।এখন হিন্দি, উর্দু, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম থেকে শুরু করে হলিউড আর কোরিয়ান, চায়নিজ,রাশিয়ান তুর্কি মুভিও দেখি বলা চলে।
এখন আমাদের এমন এক সময় চলছে যখন, আমরা সবাই গৃহবন্দি। সময় আমাদের অনুকূলে নেই কারণ সারাবিশ্ব এখন স্থবির করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। কিন্তু এই সময়ে আমরা বই পড়ার পাশাপাশি কিছু ভালো মুভি দেখতে পারি ,এতে করে আমাদের সময় ও কাটবে, পাশাপাশি আমার কিছু শিখতে ও পারবো।
তবে আজকে আমি যে মুভিটি নিয়ে রিভিউ লেখছি আশা করি সকলের এই দুঃসময়ের দিনে এই মুভিটা দেখে মানসিক ধৈর্য বাড়বে এবং চাপ কমবে। অনেক এই হয়তো মুভিটা দেখেছি , আবার অনেকেই দেখিনি।
মুভির নাম: The Martian
IMDb Rating:8/10
Personal Rating:9/10
Genre: Sci-Fi/Drama
Director: Ridley Scott
Initial release: September 24, 2015 (London)
মুভি প্লট সম্পর্কে লেখার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে নেই মুভির ডাইরেক্টর Ridley Scott সম্পর্কে যিনি কিনা সায়েন্টিফিক হরর মুভি বানিয়েছেন ক্যারিয়ার এর শুরু থেকেই। The Martian তার সেরা কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা যায়। মূলত মুভিটা নির্মাণ করা হয়েছে Andey Weir এর The Martian , উপন্যাস অবলম্বনে।
মুভি প্লট:
সায়েন্স ফিকশন ধর্মী এই মুভির শুরুতেই দেখা যায়,মঙগলগ্ৰহে আরেস (|||)মিশনের ১৮ তম দিনে মিশনের ক্রুর সদস্যরা সম্মুখীন হয় মারাত্মক ধূলিঝড় এর ।নাসা থেকে মিশন স্টপ করে তাদের কে ফিরে আসতে বলা হয় কিন্তু এমন সময় ক্রুর এক সদস্য নভোচারী মার্ক ওয়াটনী ঐ ধূলিঝড়ে দূরে ছিটকে পড়ে হারিয়ে যান । ওয়াটনীকে রেখেই ক্রুর বাকি সদস্যদের রওনা দিতে হয় কারণ ধারণা করা হয় ওয়াটনী মারা গেছে। ঝড়ের পর ওয়াটনী জাগ্ৰত হয় ,তখন তার অক্সিজেন ও কম এবং সে বুঝতে পারে তার এই মিশনের বাকি সদস্যরা তাকে মঙগলগ্ৰহে একা ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।ওয়াটনী ক্রুদের জন্য তৈরি হাবে ফিরে আসেন এবং বুঝতে পারেন এখানে হয়তো তিনি একত্রিশ দিন এর বেশি বাঁচবেন না কারণ হাব এভাবেই তৈরি।
সুস্থ হওয়ার পর ওয়াটনী সিদ্ধান্ত নেন ,এই মঙগলগ্ৰহে তিনি বেঁচে থাকার লড়াই করবেন এবং হেরে যাবেন না কোনোভাবেই। কিন্তু তিনি জানতেন কারণ এই লড়াই অদ্ভুত এক কঠিন লড়াই যেখানে তার বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ। যদি কোনোভাবে নাসার সাথে যোগাযোগ করেও ফেলে তবুও তার এখান থেকে যেতে সময় লাগবে চার বছর 😑। কিন্তু এতদিন কিভাবে তার খাবার আর পানির ই বা যোগাড় হবে। মার্ক তার বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে হাবের ভিতর চাষ করেন আলু এবং পানির ও ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি তার নাসার সাথে যোগাযোগ করার প্রচেষ্টা ও চলতে থাকে।
মার্ক বেঁচে জানার পর , তাকে ফিরিয়ে আনা এক অসম্ভব বিষয় মনে করেন নাসার বিজ্ঞানীরাও।
কিন্তু তারাও শুরু করেন মার্ক কে ফিরিয়ে আনার মিশন, যার জন্য মঙগলগ্ৰহের মিশনের পরিচালক ভিনসেন্ট কাপুর এবং জেপিএল এর পরিচালক ব্রুস মিলে একটি আইরিস স্পেস প্রোব তৈরি করে রাতে করে তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে ওয়াটনী বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু এটির ও বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে মার্ক কে ফিরিয়ে আনার মিশন আরো কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে মার্ক এর সাথে থাকা বাকি সদস্যরা যখন জানতে পারে ওয়াটনী জীবিত আছে তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াটনীকে তারা ফিরিয়ে আনার কঠিন যুদ্ধে যাবে।
শেষ পর্যন্ত কি মার্ক ওয়াটনী পৃথিবীতে ফিরে আসতে পেরেছিলো নাকি মৃত্যু হয়েছিলো তা দেখতে মুভিটা দেখে ফেলতে হবে চটপট করে ।
মুভির অনেক গুলো সিন অত্যন্ত পছন্দের তবে প্রচন্ড ঝড়ে হাবের ভিতর করা আলুর বাগান নষ্ট হওয়ার পর ও হতাশ না হওয়া কিংবা মিশনের শেষ মুহূর্তে ঘরে ফিরবে কিনা মার্ক ওয়াটনী অন্যরকম দাগ কেটে আছে এখনো।
কি শিখলাম এবং কেনো দেখবো :
ম্যাট ডেমন এর মার্ক ওয়াটনী চরিত্রটি এতটাই বাস্তব মনে হয়েছে যে ২ ঘন্টা আমি সব কিছু ভুলে মুভির ভেতরে ডুবে ছিলাম। পৃথিবী থেকে দূরে যেখানে বেঁচে থাকার কোনো লড়াই ই সম্ভব নয় সেখানে ও নিজস্ব মনোবল নিয়ে টানা লড়াই করে ভাগ্যকে জয় করা সম্ভব এই মুভি অত্যন্ত তাই বলে।
আমাদের জীবনের ছোট ছোট সমস্যা গুলো আমরা খুব সহজেই সমাধান করতে পারি কিন্তু আমরা বলে ফেলি ভাগ্য খারাপ আমার, কিন্তু আসলে পরিশ্রম ও ধৈর্য দ্বারা ভাগ্যের মোড় ঘুরানো অসম্ভব কিছু নয়,চাবি কিন্তু আমাদের কাছেই ।
মূল কথা হচ্ছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় ইচ্ছা আর ধৈর্য শক্তি থাকলে নিজের কাছে।
হ্যাপি ওয়াচিং😊।