আজকে অন্যরকম একটা মজার টপিক নিয়ে আলোচনা করব।শিরোনাম দেখেই হয়তো অনেকটা আঁচ করতে সক্ষম হয়েছেন যে,কোন বিষয়ের উপর আজকে আমার লিখা আর্টিকেল।আর্টিকেলটি কিছুটা জ্ঞানমূলক হতে যাচ্ছে। তাই,আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে কিছুটা হলোও জানতে পারবেন।তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেল।
সবাই তো আমরা ঘড়ি ব্যবহার করি সেই ছোট কাল থেকেই।মানব বিবর্তনের মতো ঘড়িরও বিবর্তন হচ্ছে।অর্থাৎ যুগভেদে ঘড়ির ডিজাইনের মধ্যে পরিবর্তন দৃষ্টান্ত হচ্ছে।যেমন আগে ছিল অ্যনালগ ঘড়ি আর এখন ডিজিটাল ঘড়ি।তবে একটা কথা আপনারা মানবেন কিনা জানি না সেটা হচ্ছে,অ্যানালগ ঘড়িরই কদর ডিজিটাল ঘড়ি অপেক্ষা বেশী।তরুণ প্রজন্মও অ্যানালগ ঘড়িকেই প্রাধান্য দিচ্ছে যদিও নজরকাড়া ডিজিটাল ঘড়ি বাজারে এসেছে। আর আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে দামী ব্রান্ডের ঘড়ি গুলো অ্যানালগই হয়ে থাকে।অর্থাৎ ঘড়ির ক্ষেত্রেই সবাই অন্যালগ ঘড়ি পছন্দ করে।কিন্তু আসল জিনিসটা হচ্ছে যে সময় দেখা এই বিষয়টা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না।অর্থাৎ ঘড়ি বেশীরভাগই ব্যবহার করি ফ্যাশনের জন্য৷ আর সময় দেখার জন্য হাতের স্মার্টফোনটিই বেশী ব্যবহার করি ঠিক কি না?
আগে যখন এতো ডিজাইনের ঘড়ি ছিল না,স্মার্টফোন ছিল না,তখন মানুষ শুধু সময় দেখাটাকেই প্রাধান্য দিত।আর এরজন্য কত ধরণের টেকনিক যে তারা ব্যবহার করত!তো সেই টেকনিক গুলোর থেকেই একটা টেকনিক হচ্ছে জলের মাধ্যমে সময় নির্ণয় করা।এইক্ষেত্রে যেহেতু জলের মাধ্যমে সময নির্ণয় করা হয়,আর জল বা পানিকে ঘড়ি হিসেবে ব্যবহৃত করা হতো তাই এর নাম ছিল জল ঘড়ি।
জলের প্রবাহের উপর ভিত্তি করে তৈরি এক ধরনের প্রাচীন যন্ত্র যা দিয়ে সময় পরিমাপ করা হতো,সেটাই জলঘড়ি। উত্তর অামেরিকা এবং অাফ্রিকার আদিবাসীরা অবশ্য এক সময় জলপূর্ণ নৌকা দিয়ে সময় পরিমাপ করতো। নৌকায় একটা ফুটো থাকতো, ফুটো দিয়ে জল বের হতে হতে কখন নৌকাটি ডুবে যায় তারা তা দেখার জন্যই অনেক্ষণ তীক্ষ্ণ মনোভাবে অপেক্ষা করতো। তবে সবচেয়ে সাধারণ জলঘড়ি তৈরি হয় একটি জলপূর্ণ পাত্র দিয়ে। পাত্রের ছিদ্র(ছবিটার দিকে খেয়াল করুন,ছিদ্র দেখতে পারবেন) দিয়ে জল বের হতে দেয়া হয় এবং পাত্রের ভেতরের গায়ে চিহ্নিত দাগ থেকে বোঝা যায় জল কতটুকু কমছে। জলের স্তরের মাধ্যমেই সময় নির্ধারিত হয়। এর উদ্ভাবক সম্ভবত প্রাচীন মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার সুমেরীয়দের।অনেকেরই ধারণা যে, প্রাচীন মিশরে জলঘড়ি নির্মিত হতো বলে ধারণা করা হয়।
পাত্রে পানির পরিমাণ কমতে থাকলে পানি প্রবাহের গতিও কমে যায়, যে কারণে প্রাচীন জলঘড়িকে সময় পরিমাপের ধ্রুব বা আদর্শ উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতো না। তাই, পরবর্তীতে রোমানরা একটি সিলিন্ডার তথা বেলন এবং একটি বড় জলাধারের মাধ্যমে জলঘড়ি তৈরি করে। জলাধার থেকে জল বেলনে আসে। বেলনের গায়ে লাগানো কাঁটার মাধ্যমে জল কতটুকু বৃদ্ধি পাচ্ছে তা পরিমাপ করা যায়। অনেক কাজেই জলঘড়ি ব্যবহার করা হতো, উল্লেখযোগ্য একটি ব্যবহার ছিল বক্তাদের বক্তৃতার দৈর্ঘ্য পরিমাপ। এই ষোড়শ শতাব্দীতেও জলঘড়ি ব্যবহৃত হয়েছে,অর্থাৎ প্রায় কয়েকশ বছর আগেন কথা। যিনি বক্তৃতা দিচ্ছেন সেই বক্তৃতার সময় নির্ধারণ করে দিত এই জলঘড়ি, সুতরাং আগের মানুষও তখন যে স্মার্ট ছিলো তা বোঝাই যাচ্ছে।যদিও এখন অর্থাৎ এই যুগে ঘড়ির কাঁটার কাঁটায় সময় মানতে অনেকে নারাজ,কিন্তু জলঘড়ির যুগে তা হতো না,বরং মানুষ এই জলঘড়িটিকেই তখর প্রাধান্য দিত এবং এর দ্বারা যে সময় পাওয়া যেত সেটাও তারা মানত।খুবই ইন্টারেস্টিং না ব্যাপারটা?জলঘড়ি চাইলে আপনিও বানিয়ে দেখতে পারেন।অবশ্য এত এত রকমের ঘড়ি থাকতে এখন জলঘড়ি নিয়ে কেই বা মাথা ঘামাবে?তাই না?
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে জলঘড়ি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কোথাও ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখবেন,সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ।