আপনি বাড়ি বা ফ্যাক্টরি ভবন অথবা যে কোনও ধরনের নির্মান কাজ করবেন আর স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা – কর্মীদের দৌরাত্মের শিকার হবেন না। এমনটা আশা করা চরম বোকামি। সেটা বাংলাদেশের যে এলাকাতেই হোক না কেন। আর চাঁদা দিয়ে সমস্যা মিট করবেন? তাও কিন্তু সম্ভব না! টাকা দিয়ে কুল করতে পারবেন না। ওদের একটার পর একটা বাহানা থাকবেই আর আপনি চাঁদা দিতেই থাকবেন যতদিন আপনার কাজ শেষ না হয়। তো! কি করবেন? আসুন, আজকে এই সমস্যার কিছু অন্যরকম সমাধান নিয়ে আলাপ করা যাক!!
শুরুতেই একটি ঘটনা বলি। আমার লোকাল পৌর শহরে এক খন্ড জমি আছে। ২০০৬ সালে আমি ওখানে বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার কয়েকজন আত্মীয় ছিল ঐ এলাকার বাসিন্দা। আমি তাদের সাথে আলাপ করতে গেলে সবাই স্বাগত জানালো। কিন্তু, প্রত্যেকেই একটি বিষয়ে আমাকে সতর্ক করে দিল। সেটি হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতা – কর্মী এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি করতে গেলেই চাঁদা দাবি করে। আর তাদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাড়ি করা তো দূরের কথা, মান সম্মান বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ে। আমি মনে মনে বলি, “সময়ই বলে দিবে কাকে চাঁদা দিব, কাকে দিবো না।“
আমি তৎকালীন মেয়র সাহেবের ভাতিজার সাথে যোগাযোগ করলাম। তাকে বললাম,
ঃ চাচা, আপনি তো জানেন আপনার বাড়ির কাছেই আমার এক খন্ড জমি আছে।
ঃ হ্যাঁ ভাতিজা, জানি তো। কি হয়েছে? কোনও সমস্যা?
ঃ না, না, কোন সমস্যা নেই। আসলে আমি ওখানে একটি বাড়ি করতে চাইছি। তো, আমি থাকি ঢাকায়।একা মানুষ কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
ঃ কি যে বলো! আমরা আছি কি করতে? একটা বাড়ি করার জন্য তোমার এত টেনশন করার কিছুই নেই। তুমি জাস্ট একদিন এসে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে যাও। বাকিটা আমি বুঝবো।
ঃ তাহলে চাচা, আগামী শুক্রবারই কাজ শুরু করি? কি বলেন আপনি?
ঃ তুমি শুক্রবার বললে শুক্রবারই শুরু হবে। তুমি সকাল সকাল চলে আসবা, আমাকে একটা কল দিলেই আমি তোমার জায়গায় গিয়ে হাজির হবো।
তারপরের কথা আর কি বলবো? আমি চাচাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে পরদিন ঢাকায় চলে এলাম। প্রতিদিন ৩/৪ বার চাচাকে আর আমার স্ত্রীকে কল করে জাস্ট খবর নিতাম। এক মাসের মাথায় আমার বাড়ি রেডি! কোনও নেতা – কর্মী চাঁদা চাওয়া তো পরের কথা, একদিন এসে জিজ্ঞাসাও করে নাই এই বাড়িটা কে বানাচ্ছে?
চাঁদাবাজির মোকাবেলায় কি করতে হবে আশা করি আপনাদের কিছুটা ধারনা দিতে পেরেছি। আপনি চাইলে সমস্যার গোড়াতেই হাত দিতে পারেন। ওদের নেতার কাছে গিয়ে ভাল মন্দ পরামর্শ নিতে পারেন। অভিযোগের সূরে কথা না বলে আন্তরিকতার সাথে ওনাকে হাত করতে পারলে সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।
হাত করবেন কিভাবে? আমার মতে, মানুষ সবসময় নিজের স্বার্থটা দেখে সবার আগে। আর নেতাদের ক্ষত্রে তো কথাটা আরোও বেশি সত্য। আপনি উনাকে এমন কিছু অফার করেন যাতে উনার মনে হয় আপনি উনার উপকার করছেন। আপনি যত বুদ্ধিমান হবেন, আপনার খরচ তত কম হবে। এমন কোন অফার করবেন না যাতে আপনার ক্ষতি হয়। উনাকে বিজনেস রিলেটেড বা, উপহার সামগ্রী দিয়ে কিছুদিনের জন্য হলেও বন্ধুত্ব করতে পারেন। আপনার হয়ত মনে হতে পারে আপনি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আপনি ভাবছেন ডিরেক্ট একশন নিলেই হয়। কিন্তু সমস্যাটা হলো এতে ওরা আপনার পিছু তো ছাড়বেই না বরং উলটো আর ক্ষিপ্ত হয়ে আপনার ক্ষতি করতে লেগে যাবে। খুব লাকি হলে আপনার সমস্যার সমাধান ডিরেক্ট ওয়েতে হতে পারে। কিন্তু ঝুঁকিটার ব্যাপারও মাথায় রাখতে হবে! ।
আরেকটা কাজ করা যায়, যেটা দীর্ঘমেয়াদী। এলাকায় যারা একই সমস্যায় আছেন তাদের নিয়ে একটা কমিটি গঠন করতে পারেন। যতই বলুন, একলা কুকুর সব সময় মার খায়। একলা সমস্যা ডিল করার চেয়ে একথাবদ্ধ হয়ে ডিল করা অনেক সহজ। আর এতে সবাই আপনাদের সমীহ করে চলবে।
আর একটা উপায় বলি। ওদেরকে সরাসরি আপনার কাজে সম্পৃক্ত করুন। মানে ব্যাপারটা এমন। সবাইকে একসাথে ডেকে চা নাস্তা খাওয়ালেন। মাঝে মাঝে কাজ সংক্রান্ত পরামর্শ চাইলেন। ওরা আপনাকে নানা দিকে সাহায্য করার আগ্রহ দেখাবে। তাদের দিয়ে ইট , বালু, সিমেন্ট আনান। এতে আপনার খরচ কিছুটা বাড়বে সন্দেহ নাই। কিন্তু, পরিণতিতে লাভই বেশি হবে বলে আমি মনে করি। কারন ওরা তখন নিজ দায়িত্তে কাজ করবে। আর কেউ ঝামেলা করবে না। এতে ওদেরও লাভ হল। আপনার কাজও হলো আর তাদের সাথে সম্পর্কও ভাল থাকল। বিষয়টা ভেবে দেখেবেন আশা করি।
আল্লাহ্ হাফিজ।