দেখতে দেখতে চলেই এলো ২০২১। নিউ ইয়ার রেজোলিউশানের ব্যাপারটা অর্থহীন মনে হলেও, বর্তমান ইন্টারনেট-নির্ভর জীবনযাত্রায় আমাদের একটি সাধারণ লক্ষ্য হতে পারে ব্যক্তিগত অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর এটা করার জন্য আপনাকে খুব বেশী কাঠখড় পুড়াতে হবে না। খুব সাধারণ কিছু কাজ করার মাধ্যমেই আপনি অনেক গুরুতর সমস্যায় পড়া থেকে রেহাই পেতে পারেন। তাই একটি হ্যাক প্রতিরোধ করা অন্যান্য অনেক নিউ ইয়ার রেজোলিউশানের থেকে অনেক বেশী সহজ।
আপনার হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার আপডেটেড রাখুন
আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেমগুলো যদি আপনাকে প্রতিনিয়তই নোটিফাই করতে থাকে, তবে ধরেই নিতে হবে যে কিছু অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের সময় হয়ে গিয়েছে।
বিরক্তিকর মনে হলেও, আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপডেটেড রাখলে আপনি এবং আপনার যন্ত্রগুলো অনেক অযাচিত নিরাপত্তাসূচক সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। আপনি আপডেটের নোটিফিকেশনগুলো দেখলে তাতে ক্লিক করে দেখতে পারেন যে কি নতুন বৈশিষ্ট্য এবং পরিবর্তনগুলো সংযুক্ত হয়েছে। অনেক সময়, বড় ধরনের আপডেটের ক্ষেত্রে, ঝলমলে নক্শা এবং কার্যকারী বৈশিষ্ট্যের আড়ালে নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ঢাকা পড়ে যেতে পারে।
স্বয়ংক্রিয় আপডেটগুলো আপডেটেড থাকাকে সহজ করে তোলে, কিন্তু অন্ততপক্ষে একই আপডেটের নোটিফিকেশনের পপ-আপ যাতে খুব বেশী দিন ধরে আসতে না থাকে সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে, কোম্পানিগুলো যন্ত্র বা সফ্টওয়্যারের ভার্শানগুলোকে সারা জীবন সাপোর্ট করে না। যেমন আপনি যদি এখনও আইফোন ৬ ব্যবহার করেন এবং সেটা সারা জীবন ব্যবহারের খেয়াল থাকে তবে সেটা আর সফ্টওয়্যার আপডেটের জন্য উপযুক্ত থাকবে না। এই একই জিনিস আপনি যদি উইন্ডোজের পুরোনো কোনো ভার্শন বহুদিন ধরে ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
পুরোনো অ্যাপগুলো ডিলিট করে দিন
আপনার ফোন বা কম্পিউটারে পুরোনো অ্যাপগুলো থাকাটা তেমন ক্ষতিকর মনে না হলেও, এর কিছু অপকারিতা আছে। প্রথমত, সেগুলো তথ্য সংরক্ষণের একটি বড় জায়গা দখল করে নেয়। আপনি যদি কোনো একটি অ্যাপ ব্যবহার না করেন এবং স্বয়ংক্রিয় আপডেট অন না করা থাকে, তবে তা খুব সহজেই পুরোনো হয়ে যায়।
অপারেটিং সিস্টেমগুলো আরও উন্নত হয়ে গিয়েছে এবং যে অ্যাপগুলো আপনি বহুদিন ব্যবহার করেননি সেগুলো থেকে আপনার ডেটার অ্যাক্সেস প্রত্যাহার করে নেয়। এমন ধরনের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো রাখার কোনো উপকারিতা নেই যেগুলো আপনার যন্ত্রের ছবিগুলোকে দেখতে তেলচিত্রের মতো ঝাপসা করে তোলে। সুতরাং, সেগুলো ডিলিট করে দিন।
একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
আপনার হয়তো এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সাইটে অগনিত অনলাইন এ্যাকউন্ট হয়ে গিয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোই আপনি হয়তো আর ব্যবহার করেন না। আর আপনি যদি একই পাসওয়ার্ড সব জায়গায় ব্যবহার করে থাকেন, তবে সেই সাইটগুলোর কোনো একটিতে হ্যাক হলে, তার তথ্য ব্যবহার করে হ্যাকাররা আপনার বাকি গুরুত্বপূর্ণ সাইটগুলোতেও প্রবেশ করতে পারে। এমনটা হরহামেশাই হচ্ছে।
একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার যেমন ড্যাশলেন, কীপার, বা ওয়ান পাসওয়ার্ড আপনার এ্যাকাউন্টগুলোর জন্য ক্র্যাক করা কঠিন এমন সব পাসওয়ার্ড তৈরী করে এবং আপনাকে সহজেই এ্যাকাউন্টগুলোতে লগ-ইন করতে সাহায্য করে। আপনি যদি এরপরও পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে না চান, তবে কমপক্ষে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ্যাকাউন্টগুলো আপডেট করুন। এমন ধরনের বহু উপায় আছে যেগুলোর সাহয্যে আপনি পাসওয়ার্ড তৈরীর ক্ষেত্রে করা প্রচলিত ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন, যেমন: পাসওয়ার্ড খুব বেশী ছোটো না করা এবং পাসওয়ার্ড অক্ষর, সংখ্যা এবং চিহ্ন মিশিয়ে তৈরী করা ইত্যাদি।
অপ্রয়োজনীয় ফেসবুক অ্যাপগুলো ব্যবহার করবেন না
কিছু ফেসবুক অ্যাপ আছে যেগুলোতে বলা হয়, জেনে নিন আপনার ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে? বা জেনে নিন আপনার ৬০ বছর বয়স হলে চেহারা কেমন হবে? ইত্যাদি। ফেসবুক অ্যপগুলো এসব ভ্রান্ত প্রতিজ্ঞা করে আর বিনিময়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যসমূহে প্রবেশোধিকার চায় যা ইতিমধ্যেই ফেসবুক আপনার সম্পর্কে সংগ্রহ করেছে। এই ফেসবুক অ্যপগুলো বর্তমানে আর ততোটা ঝঁকিপূর্ণ নয় যতোটা ফেসবুকের শুরুর দিনগুলোতে ছিলো। যাই হোক, এখন এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করলে প্রায় বিনা পয়সায় কিছু কোম্পানিকে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী তথ্য দিয়ে দেয়া হয়। এটা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন চালু করুন
আপনার একটি শক্ত পাসওয়ার্ড থাকলেও, হ্যাকারদের পক্ষে তা ক্র্যাক করা অসম্ভব নয়, আর এজন্যই টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন চালু হয়েছে। বেশির ভাগ টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন পদ্ধতিতে আপনার ফোনে আপনি লগ-ইন করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি সিকিউরিটি কোডসহ একটি টেক্সট বা একটি ই-মেইল পান ।
কিছু মৌলিক নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যান
বিভিন্ন বড় প্রযুক্তির কোম্পানিগুলো যেমন: ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফ্ট, টুইটার, অ্যাপল্, আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে এবং আপনি কিছু নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে কিছু নির্দিষ্ট সেটিং দিয়ে থাকেন। এটা আপনার তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।