ভ্রমণবিলাস:
পাহাড়, ছুঁয়েছে আকাশ
বিশাল পাহাড়ের পাদদেশে যখন উপস্থিত হই তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। সূর্যের আলোর প্রখরতা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে । কমে গিয়েছে ঝাঁজালো রোদের তাপ। বিশাল পাহাড়ের বুক চিরে পাদদেশে নেমে গেছে, সূর্যটা। ঝলমলে আলো নদীতে পড়ে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। মানুষজন নেমে গেছে আগেই । আমরা তিনজন । সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ছে না । বিশাল বিশাল গাছে ছেয়ে আছে পুরো পাহাড় । মানুষের কত কী মন চায়! আমারও মন চায় অনেক কিছু! বিশাল পাহাড় ছুঁতে মন চায় ।আকাশ ছুঁয়ে দেখার তীব্র আগ্রহ আমাকে ডেকে নেয়। এইতো আমি ছুটে এসেছি । আকাশ ছুঁতে । পাহাড়ের বুক বেয়ে উঠবো আর বুকে দাঁড়িয়ে মন ভরে দেখবো আমার আকাশ!
পাহাড়টি সংরক্ষিত থাকায় টিকেট কিনে ভিতরে প্রবেশ করি আমরা । এখান থেকে পাহাড়ের চূড়া অনেক উঁচুতে! পায়ে হেঁটে গেলে সন্ধ্যে নামার আগে নেমে আসা অসম্ভব । তিনশ টাকায় একটি সিএনজি ভাড়া করলাম । আমাদেরকে ওপরে নিয়ে যাবে। ঘুরবো কিছুক্ষণ । আবার নামিয়ে দেবে । উচ্চতা বেশি হওয়ায় অত্যাধুনিক ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ । বেশ ভাল লাগল । তবে পাহাড় বেয়ে ওঠার যে আনন্দ তার সামান্যই উপভোগ হলো । কষ্ট তো হলোই না । আরো অনেক পাহাড়ে ওঠার সুযোগ হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু এবারের মত এত উঁচু নয় সেগুলো! আমি বিস্মিত হই! ঐ তো পাহাড়ের ওপাশটায় পাহাড় ছুঁয়ে আছে , আকাশ । আলতো পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে একে অপরকে । আকাশ যেন নেমে এসেছে পাহাড়ের বুকে ! প্রিয় করে নিতে পাহাড়কে!
আমরা হাঁটছি, দেখছি, প্রভুর অপার সৃষ্টি । অবাক হচ্ছি! মনে পড়ছে মহান প্রভুর বাণী , আমি পাহাড়কে সৃষ্টি করেছি কীলক স্বরূপ !
ওপাশটায় পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে গেছে ঝরনা। নিচে জমা হয়ে আবার চলে যাচ্ছে নালায় , অনেক দূরে। মনে হয় পাশের নদীতে গিয়ে পড়বে। এ জায়গাটা পাহাড় থেকে অনেক নিচে । নামার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে বলেই নামা যায় । নয়তো এখানে নামা ওঠা কখনো সম্ভব হতো না । নামতেই আমরা ক্লান্ত । ঘামে জবুথবু অবস্থা । পাহাড় দেখেছি অনেক ! কখনো কাছ থেকে , কখনো বা দূর থেকে । আগে শুনতাম পাহাড় আকাশ ছোঁয় । এবার যেন তাই মনে হলো আমার। কত উঁচু পাহাড় , একটাতে দাঁড়ালে মনে হয় অন্যটা আকাশ ছুঁয়ে আছে । আনমনে ভাবতেই ভালো লাগে আমার ।
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার সৃষ্টি দেখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সত্যিই , মহান প্রভুর সৃষ্টি অতুলনীয় আমি এসব থেকে পাই চিন্তার খোরাক। পাই প্রভুর পরিচয় । যিনি পাহাড় সৃষ্টি করেছেন কীলক স্বরূপ। কৃতজ্ঞতা তখন আমার মাথা নুইয়ে দেয় প্রভুর সামনে । আল্লাহ তুমি মহান !
নেমে যেতে হবে । সূর্যটা হারিয়ে গেছে আগেই । অন্ধকার নামতে শুরু করেছে চারপাশটায়। আবার চেপে বসলাম সিএনজিতে । পাহাড়ের পাদদেশে মসজিদ । আজান হচ্ছে । আমরা নামাজের প্রস্তুতি নিতে চললাম মসজিদ পানে ।প্রভুর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে।