VPN কি, এর কাজ কি এবং VPN কেন দরকার ?
VPN এর পূর্ণ রূপ হল- Virtual Private Network.
সোজা কথায় বলা যায়, VPN হল একটা কাল্পনিক ‘Tunnel/channel’ যার মাধ্যমে নিরাপদে/গোপনে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।এই ‘Tunnel channel’ বা সুড়ঙ্গের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, এটি দিয়ে মূলত কাল্পনিক ভার্চুয়াল একটা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বোঝানো হচ্ছে যেটি দিয়ে ইন্টারনেটে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। ইন্টারনেট মূলত উন্মুক্ত তথ্য আদান প্রদানের জায়গা।
ধরুন আপনি একটি খোলা মাঠে ফুটবল খেলছেন,
যেখানে আপনার মতো আর অনেকে খেলছে, সেখানে আপনাদের বল তাদের খেলার মাঝখানে যেতে পারে আবার তাদের বলও আপনাদের খেলার মাঝখানে আসতে পারে, এতে করে যে কেউ সেই বলে কিক করতে পারে। আবার যারা আবার সম্পূর্ণ মাঠ নিয়ে খেলে তাদের খেলার মাঝখানে আবার অন্য কেউ ঢুকতে পারে না। ঠিক একই ভাবে ইন্টারনেট যেহেতু এটি পাবলিক নেটওয়ার্ক অর্থাৎ, পৃথিবীর সবাই সংযুক্ত তাই এখানে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবার একটা ঝুঁকি আছে, অর্থাৎ যে কেউ আপনার তথ্য দেখতে পারবে।
নিরাপত্তার এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ইন্টারনেট
ব্যবহার করে অর্থাৎ পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট তথ্য আদান প্রদান করার জন্য ব্যক্তিগত/গোপন/কাল্পনিক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার পদ্ধতিই হল VPN। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার জন্য ইন্টারনেটে একটি কাল্পনিক tunnel তৈরী হয়।
এটা কিভাবে কাজ করে?
যখন ভিপিএন দিয়ে একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইলকে সংযোগ করা হয় তখন ডিভাইসটি ভিপিএন সার্ভারের সাথে কানেক্ট হয়ে যায় এবং ভার্চুয়ালি একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করে যেটি শুধুমাত্র আপনার ডিভাইসের জন্যই। এই জন্যই একে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলা হয়। আপনার সমস্ত ইন্টারনেট ট্রাফিক তথা ব্রাউসিং, ডাউনলোড, সার্ভার কানেকশন সবই ভিপিএন এ কানেক্টেড থাকা সার্ভারটি হয়ে যাবে।এক্ষেত্রে ভিপিএন এমন একটি কাজ করতে সক্ষম যাতে আপনি বাংলাদেশে থেকেও ইন্টারনেট মনে করবে আপনি ভিপিএন কানেকটেড সার্ভারের দেশে আছেন।
এতে করে পাবলিক ওয়াইফাই জোনে গিয়ে আপনি আপনার ব্রাউসিং যেমন সুরক্ষিত রাখতে পারবেন তেমনি স্পটিফাই এর মত সার্ভিস গুলো আপনি দেশে বসে ব্যবহার করতে পারবেন।
কারন আপনি যখন ভিপিএন কানেক্টেড অবস্থায় থাকবেন। তখন আপনার কম্পিউটারটি যে কোন ওয়েবসাইট এনক্রিপ্টেড ভিপিএন কানেকশনের মধ্য দিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভিপিএন আপনার কম্পিউটার এবং যে ওয়েবসাইটের সাথে আপনি কানেক্ট করবেন দুয়ের মধ্যে একটি সিকিউর কানেকশন হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই জিও লোকেশন হাইড করে ব্লকড ওয়েবসাইট এবং সার্ভিস ব্যবহার করা সহজ ভিপিএন দিয়ে।
VPN-এর সুবিধাগুলো কি কি ভিপিএন কেন দরকার
১ VPN ব্যবহার করার উদ্দেশ্যই হলো আপনি আপনার তথ্য নিরাপদে আদান প্রদান করতে পারছেন।
২ VPN ব্যবহার করলে আপনার অবস্থান কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না।
৩. IP address (Internet Protocol address) লুকিয়ে রাখতে পারবেন। অর্থাৎ, হ্যাকারদের কবলে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
৪. আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আইপিএস থেকে নেটের ফুল স্পিড পাবেন।
৫. VPN দিয়ে আপনি আইএসপি আইআইজি কান্ট্রি তে ব্লক করা সাইট ভিজিট করতে পারবেন। যেমন ধরেন, যদি ফেসবুক আমাদের দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলেও আপনি VPN ব্যবহার করে ফেসবুকে ঢুকতে পারবেন।
৬. এছাড়া অনেক অফিসিয়াল কাজেও ভিপিএন ব্যবহার করা যায়।অনেক গুরুত্বপুর্ন কাজ ভিপিএন দিয়ে করলে হ্যাকারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। যেমন ধরুন আপনি ঘরে বসে ব্যাংকিং সার্ভারে কাজ করবেন, সেক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করা খুবই জরুরি, অন্যথায় আপনার সার্ভারের ইনফর্মেশন হ্যাকাররা নিয়ে নিতে পারে।
কিভাবে ভিপিএন ব্যবহার করবেন এবং কোন ভিপিএন ভালো?
বর্তমানে ফ্রী ভিপিএন সফটওয়্যারের অভাব নেই এবং বেশিরভাগ ভিপিএন সার্ভিস নিতে হলে একটা একাউন্ট খুলে নিতে হয় ঐসব ভিপিএন ওয়েবসাইটগুলোতে। এর পরে রেজিস্টার্ড সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করলেই হয়ে যায়। আবার কিছু ভিপিএন যেমন মাইক্রোসফট ওয়েবস্টোরে থাকে Touch VPN এ কোন একাউন্ট খোলার প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া LionVPN এপ স্টোর থেকে এপটি ইন্সটল করে কানেক্ট করলেই হয়ে যায়।
তবে এই ফ্রী ভিপিএন সফটওয়্যারে সব দেশের সার্ভার থাকে না। এছাড়াও কিছু ভিপিএনএ একটি নির্দিষ্ট পরিমান ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পর তারা পেইড সার্ভিস ব্যবহারের জন্য আপনাকে ফোর্স করতে পারে। প্রিমিয়াম ভিপিএন-এ সুবিধা হলো তাদের কানেকশন প্রসেস আরো বেশি সিকিউর এবং এক্ষেত্রে পেইড ভিপিএনগুলো আপনাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ইন্টারনেট সিকিউরিটি দিতে সক্ষম। তবে প্রিমিয়াম গুলো প্রায় সবগুলোই অর্থের পরিবর্তে কিনতে হয়। তবে পেইড ভিপিএন-এ প্রায় সব দেশের সার্ভারে কানেক্ট হতে পারবেন এবং প্রিমিয়াম ভিপিএন-এ ডাটা লস হবার সম্ভাবনা কম থাকে।