আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি ভিন্ন ধরনের টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। তো আজকে আমি আপনাদের সাথে ইউটিউব সম্পর্কে যতকিছু আছে তা সব কথা বলব।
কোম্পানিটি কিভাবে শুরু হয়?
ইউটিউব বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও বড় কোম্পানি গুলোর মধ্যে একটি।এই কোম্পানির আছে এক বিরাট ইতিহাস।
প্রথমে সব শুরু হয় ২০০৫ সালে। জাওয়েদ করিম, চাদ হারলি ও স্টিভ চেন নামক তিনজন ব্যক্তি পেপালে কাজ করত। (গর্বের বিষয় এই যে, জাওয়েক করিম যে হচ্ছে বলতে গেলে এই ওয়েবসাইটের মূল তৈরিকারী একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তারা বাবা বাংলাদেশি।) তারা তিনজনই এখানে কাজ করার পাশাপশি পড়ালেখা করতেন।
তারা ২০০৫ সালের ১৪ই ফেব্রুফারি youtube.com এই ডোমেইনটি আ্যক্টিভেট করা হয়। আর ২০০৫ সালের ২৩ই এপ্রিল তারা এই ওয়েবসাইটে ভিডিও দেওয়ার অপশন চালু করেন। তাদের মূল আইডিয়াটি ছিল একটি ডেটিং ওয়েবসাইট তৈরি করা। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। এবং এই ওয়েবসাইটটি ধীরে ধীরে একটি ভিডিও আপলোডিং ওয়েবসাইটে পরিণত হয়।
ইউটিউব লঞ্চ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি প্রায় দৈনিক ৩০০০০ এর মতো ভিউয়ার পায়। প্রায় ৬ মাসের মধ্যে তারা দৈনিক ২ মিলয়ন বা ২০ লক্ষ ভিউতে পৌঁছায়। ২০০৬ সালের মার্চের মধ্যে এই ওয়েবসাইটে মোট ২৫ মিলিয়ন বা ২.৫ কোটি ভিডিও থাকে। এবং তারা দৈনিক ২০০০০ ভিডিও আপলোডে পৌঁছায়। সেই একই বছর জুলাইয়ে গড়ে প্রায় ১০ কোটি দৈনিক ভিউ পায়। ২০০৬ সালে ইউটিউবকে গুগল কিনে নেয়। তারা ইউটিউবকে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। গুগল ইউটিউবকে কেনার পর অনেক উন্নতি করে। তারা ওয়েবসাইটে আ্যড দেখানো আরম্ভ করে এবং তারা ইউটিউবারদেরও ইনকাম করার একটি সুযোগ করে দেয়।
কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা এবং কতজন employee কাজ করে?
বর্তমানে ইউটিউব বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও আপলোডিং ও দেখার ওয়েবসাইটে পরিণত হয়েছে। এটি একটি ইন্ট্যারন্যাশনাল কোম্পানি। বর্তমানে ইউটিউব প্রায় বিশ্বের সব দেশেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে (কিছু দেশ বাদে যেখানে ইউটিউব ব্যানড)। এদের বর্তমানে ২ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে।
বর্তমানে ইউটিউবে প্রায় ২৮০০ এরও বেশি চাকুরীজীবী রয়েছে। আর ইউটিউবে চাকরি পাওয়া এতোটাও সোজা নয়। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা এটিকে পরিচালনা করে। এরকম কতিপয় ব্যক্তির কথা নিচে দেওয়া হলোঃ
মূলত ইউটিউব সম্পূর্ণভাবেই গুগল এর দ্বারা পরিচালিত। যদিও তার পাশাপশি কিছু ব্যক্তিও রয়েছে। সুসান ওজিকি ইউটিউবে সিইও এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি একজন খুবই মেধাবী এবং এক্সপেরিয়েন্সড একজন ব্যবসায়ী। তিনি এই টেক ইন্ডাস্ট্রিতে গত ২০ বছর পর্যন্ত কাজ করে আসছেন। তার মোট নেট ইনকাম প্রায় ৮১৫ মিলিয়ন ডলার।
চাদ হারলি ইউটিউবে একজন আ্যডভাইজার এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইউটিউব তৈরিকারীদের
তিনজনের একজন। তিনি ২০১০ সাল পর্যন্ত ইউটিউবে একজন সিইও এর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে পদ ছেড়ে দিয়েছেন। ইউটিউব যে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল তার ৩৪৫.৬ মিলিয়ন ডলার তিনি পান।
কোম্পানিটির কি কি প্রোডাক্ট রয়েছে এবং সেগুলো কেমন জনপ্রিয়?
ইউটিউবের সব প্রোডাক্টই ইউটিউবের সাথে সম্পর্কিত যুক্ত। ইউটিউবের মূল প্রোডাক্ট ইউটিউব নিজেই। তাছাড়া ইউটিউবের আছে ইউটিউব প্রিমিয়াম, ইউটিউব মিউজিক, ইউটিউব কিডস, ইউটিউব টিভি ইত্যাদি। এর পাশাপাশি তারা আ্যডভার্টাইজিং করার জন্য গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে।
ইউটিউব প্রিমিয়ামঃ ইউটিউব প্রিমিয়াম হলো ইউটিউবের একটি সাবস্ক্রিপশন বেসড সার্ভিস। একে ইউটিউব রেডও বলা হয়। ইউটিউব প্রিমিয়ামের মাধ্যমে আপনি কোনো প্রকার আ্যড ছাড়া ভিডিও দেখতে পারবেন। তাছাড়া ইউটিউব অরিজিনাল কন্টেন্টগুলো দেখতে পারবেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিডিও চালাতে পারবেন। ইউটিউব প্রিমিয়ামের মূল্য হচ্ছে ১১.৯৯ ডলার। বর্তমানে প্রিমিয়াম নেওয়া মেম্বারের সংখ্যা ৫০ মিলয়নেরও বেশি।
ইউটিউব মিউজিকঃ ইউটিউব মিউজিক হচ্ছে ইউটিউবের মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস। এটি ২০১৫ সালে লঞ্চ করা হয়। বর্তমানে এটি ১০০ এরও বেশি দেশে আছে (বাংলাদেশে নেই)। ইউটিউব মিউজিক প্রিমিয়ামের মূল্য ৯.৯৯ ডলার। আপনি ইউটিউব প্রিমিয়াম কিনলে ইউটিউব মিউজিক প্রিমিয়াম ফ্রী পাবেন। প্রমিয়ামের মাধ্যমে আপনি আ্যড ছাড়া গান শুনতে, গান ব্যাকগ্রাউন্ডে চালাতে পারবেন, গান ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন। যদিও আপনি চাইলে ফ্রীতেও ইউটিউব মিউজিক চালাতে পারবেন।
ইউটিউব কিডসঃ ইউটিউব কিডস জন্য সম্পূর্ণভাবে বাচ্চাদেরকে টার্গেট করে তৈরি করা। ইউটিউব কিডস সম্পূর্ণ বাচ্চাদের জন্য। ইউটিউব কিডসের মধ্যে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ও অটো ফিল্টার থাকে। যাতে বাচ্চাদের সামনে খারাপ কিছু আসার কোনো সুযোগই না থাকে। শিশুর বয়স অনুযায়ী ৫, ৯ ও ১৩ বছর বয়সী দের জন্য আলাদা ভিডিও দেওয়া রয়েছে।
ইউটিউব টিভিঃ আপনি ইউটিউব টিভির মাধ্যমে আপনার টেলিভিশনে বিভিন্ন ভিডিওর পাশাপাশি ৮৫ টি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক/ টিভি চ্যানেল পেয়ে যাবেন।
কোম্পানিটি আনুমানিক কত টাকা উপার্জন করে?
ইউটিউবের ইনকাম প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মূল ইনকামের সোর্স হচ্ছে আ্যডভার্টাইজিং। যদিও তার পাশাপাশি তারা প্রিমিয়ামের মাধ্যমেও কিছু পরিমাণ ইনাকম করে।
২০১৮ সালে ইউটিউবের মোট ইনকাম ছিল ১১.১ বিলিয়ন ডলার।
২০১৯ সালে ইউটিউবের ইনকাম ছিল ১৫.১ বিলিয়ন ডলার।
২০২০ সালে ইউটিউবের ইনকাম হয় ১৯.৭ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে তারা এখনও Fortune 500 অর্থাৎ সবচেয়ে বড় ও ধনী কোম্পানিগুলোর লিস্টে আসেনি।
উপসংহার:
আসলে ইউটিউব এখন পর্যন্ত একটি ভালো বেগেই আগাচ্ছে। তাদের আ্যডভার্টাইজারের সংখ্যা, প্রিমিয়াম মেম্বার সবই খুব দ্রুত বাড়ছে। প্রিমিয়াম মেম্বারের সংখ্যা ২০১৫ সালে ছিল ১.৫ মিলিয়ন তা বেড়ে ২০২১ সালে প্রায় ৫০ মিলিয়ন। ২০১০ সালে ইউটিউবের বাৎসরিক ইনকাম ছিল ০.৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২০ সালে তাদের বাৎসরিক ইনকাম ছিল ১৯.৭ বিলিয়ন ডলার। তারা অনেক উন্নতি করতেছে। একটি ডেটিং ওয়েবসাইট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়ে এখন সেই ইউটিউব বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও আপলোডিং প্লাটফর্ম।
তো আজকের জন্য এতটুকুই। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আবার আপনাদের সামনে অন্য কোনো টপিক নিয়ে হাজির হব। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সেই কামনা নিয়ে আজকের জন্য বিদায় জানাচ্ছি। গ্রাথোরের সঙ্গেই থাকুন।