নেটওয়ার্ক টপোলজি কমিউনিকেশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যে ধাপটির কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম তৈরি হয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন আসলে কীভাবে সম্ভব হয়, বা একেকটি পৃথক নেটওয়ার্ক কীভাবে গঠন হতে পারে, তারই ব্যাখ্যা প্রদান করে এই টপোলজি। এমনকি টপোলজি বিভিন্ন রেডিও নেটওয়ার্কিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের গাঠনিক ব্যাখ্যাও প্দান করতে পারে। সহজ ভাষায় এটি যোগাযোগের টেকনিক্যাল ব্যবস্থাপনা।
ফিজিকাল টপোলজি ও লজিক্যাল টপোলজি। নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ধাপগুলো নির্দিষ্ট স্থানে স্বয়ংক্রিয় ভাবে স্থাপন করাকে ফিজিকাল টপোলজি বলে।ডিভাইস লোকেশন কেমন হবে, বা কেমন কেবল সংযোগ করা হবে, এসব নির্দিষ্ট করা ফিজিকাল টপোলজির কাজ।অপরদিকে, লজিকাল টপোলজির কাজ হলো, ডাটা বা তথ্য, কীভাবে নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আসা যাওয়া করবে, তার ব্যবস্থাপনা করা। লজিক্যাল পদ্ধতিতে টপোলজিকে বিভিন্নভাবে সাজানো যায়। এটি দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যেগুলো হলোঃ nodes & links. Nodes বলতে কমিউনিকেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রকে বোঝানো হচ্ছে যারা জোড়ায় অবস্থান করে। sender & Reciever. Nodes গুলো একেকটি পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যাতে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। nodes গুলো কানেক্ট করার জন্য বিভিন্ন link তৈরি করা হয়। এই লিংক তৈরি করার যতগুলো প্রক্রিয়া গঠিত হওয়া সম্ভব, তার প্রত্যেকটির প্যাটার্ন একেকটি টপোলজি।
কয়েকরকম টপোলজির উদাহরণ দেখা যায় যা নিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো হলোঃ বাস টপোলজি, রিং টপোলজি, ট্রি টপোলজি, স্টার টপোলজি, মেশ টপোলজি, হাইব্রিড টপোলজি ইত্যাদি।
বাস টপোলজিঃ বাস টপোলজিকে বাসের সাথে তুলনা করার কারণ হলোঃ
এ টপোলজিতে একটি মূল তারের সাথে সবকটি কম্পিউটারে সংযুক্ত থাকে, তাই তাকে বাস টপোলজি বলা হয়। টপোলজির প্রধান ক্যাবলটিকে বলা হয় ব্যাকবোন (Backbone) বা ট্রাঙ্ক (Trunk)। সিগন্যাল যখন প্রধান ক্যাবলে চলাফেরা করে তখন শুধু প্রাপক কম্পিউটার সিগন্যাল গ্রহণ করে, বাকিরা একে অগ্রাহ্য করে।এ টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্কে ব্যবহার খুব সহজ, সাশ্রয়ী ও বিশ্বস্ত। এ সংগঠনে কোনো কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় না। বাস টপোলজিতে একই নেটওয়ার্ক এ ভিন্ন ক্যাবল ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু, মূল ব্যাকবোন নষ্ট হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যাবে।
রিং টপোলজিঃ রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার তার পাশের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ, প্রতিটি কম্পিউটার ২ টি করে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। এভাবে রিংয়ের সর্বশেষ কম্পিউটারটি প্রথম কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় কোনো কম্পিউটার ডেটা পাঠালে তা বৃত্তকার পথে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রাপক কম্পিউটারটি ডেটা গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থায় কোনো কেন্দ্রীয় কম্পিউটার থাকে না। এতে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান।
স্টার টপোলজিঃ যে টপোলজি একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য কম্পিউটার সংযুক্ত করে নেটওয়ার্ক গরে তোলে তাকে স্টার টপোলজি বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে। এ টপোলজিতে কোনো একটি কম্পিউটার নষ্ট বা বিকল হলে নেটওয়ার্ক এর উপর কোনো প্রভাব পরে না। খুব সহজেই সমস্যায় আক্রান্ত কম্পিউটারটি সরিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় কম্পিউটার নষ্ট হলে, পুরো সিস্টেম বিকল হয়ে পড়বে। স্টার টপোলজি একটি বহুল ব্যবহৃত টপোলজি এবং এই টপোলজিতে একই নেটওয়ার্ক এ বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহৃত হতে পারে। খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি কোনো নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এ টপোলজি বেশ কার্যকর।
ট্রি টপোলজি (Tree Topology): যে টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো বিন্যস্ত থাকে তাকে ট্রি টপোলজি বলে।এ টপোলজিতে এক বা একাধিক স্তরের কম্পিউটার হোস্ট কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ প্রথম স্তরের কম্পিউটারগুলো দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর হোস্ট হয়। একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর হোস্ট হয়। অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ নেটওয়ার্ক টপোলজি খুবই উপযোগী। শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ। এ টপোলজি অনেক গুলো স্টার টপোলজি মিলে গঠিত।
*স্টার ও ট্রি টপোলজিতে সবসময় ১টি সিঙ্গেল Node থাকে।
মেশ টপোলজি (Mesh Topology): যদি কোনো নেটওয়ার্কে ডিভাইস বা কম্পিউটারগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত সংযোগ থাকে এবং সেগুলো প্রত্যেকটি প্রত্যেকটির সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে তাকে বলা হয় মেশ টপোলজি।অধিকাংশ মেশ টপোলজি নেটওয়ার্ক সত্যিকারের মেশ নেটওয়ার্ক নয়। এগুলো হলো আসলে হাইব্রিড মেশ নেটওয়ার্ক। এতে শুধু অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় লিঙ্ক থাকে। এতে ডেটা কমিউনিকেশনে অনেক বেশি নিশ্চয়তা থাকে এবং নেটওয়ার্কের সমস্যা খুব সহজে সমাধান করা যায়।এই টপোলজিতে সব নোডগুলোর সাথে পৃথক লিংকে আবদ্ধ থাকে। এমন সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক সিস্টেমে যদি n সংখ্যক Node থাকে, তাহলে লিংক থাকবে, n(n-1)/2 সংখ্যক যার মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ করা যাবে। এই সূত্র মেনে মেশ টপোলজি তৈরি করা হয়।
হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology): বাস, স্টার, রিং ইত্যাদি টপোলজির সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক টপোলজিকে বলা হয় হাইব্রিড টপোলজি।
উদাহরণস্বরূপ ইন্টারনেটকে এ ধরনের টপোলজি হিসেবে অভিহিত করা যায়। কেননা ইন্টারনেট হলো বৃহৎ পরিসরের একটি নেটওয়ার্ক যেখানে সব ধরনের টপোলজির মিশ্রণ দেখা যায়। এ টপোলজিতে প্রয়োজন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কোনো একটি অংশ নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক নষ্ট না হয়ে অংশবিশেষ নষ্ট হয়।
মেশ টপোলজিতে যেহেতু প্রতিটি কম্পিউটার প্রতিটির সাথে সংযুক্ত থাকে তাই এ অর্থে এই নেটওয়ার্কের প্রথম কম্পিউটারটি শেষ কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারকে প্রতিটির সাথে অতিরিক্ত নোড দিয়ে সংযুক্ত করলেই তা মেশ টপোলজিতে রূপান্তরিত হবে।
নেটওয়ার্ক টপোলজির একটি উদাহরণ হিসেবে LAN (Local Area Network) অন্যতম। LAN টপোলজিতে রিং টপোলজি, বাস টপোলজি, স্টার টপোলজি ও মেশ টপোলজি ব্যবহৃত হয়। নেটওয়ার্ক টপোলজির ক্ষেত্রে উক্ত টপোলজিগুলো ফিজিকাল টপোলজিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু লজিকাল টপোলজিতে এসব এককভাবে কাজ করে না, বরং বিভিন্নভাবে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ, অনেকটা হাইব্রিড টপোলজির মতো কাজ করে। নেটওয়ার্কে হাব এর ব্যবহার থাকাকালীন সময়ে, এই টপোলজিগুলো এভাবে ব্যবহৃত হত। কিন্তু এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে, হাবের পরিবর্তে সুইচ ব্যবহারের জন্য টপোলজি ব্যবহারে কিছু পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বিভিন্ন কন্ট্রোল মিডিয়ার মাধ্যমে এসব ব্যবহৃত হচ্ছে।