পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার ১০০% কার্যকরী উপায়

  • ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া।

ক্লাসে কী শিখানো হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করা। অনেকে পরীক্ষার আগে অনেক সিরিয়াস হলেও ক্লাসে তেমন একটা মনোযোগ দেয় না। তারা ভাবে বাসায় বা টিউটর/কোচিং কিংবা অনলাইন ক্লাস থেকে বুঝে নেবে। প্রকৃতপক্ষে ব্যপারটা একই দাড়ালো। তাই ক্লাসে কোনো টপিক পড়ানোর সময় তুমি যদি মনোযোগ দাও তাহলে টিউটর কিংবা কোচিং থেকে টপিকটা নিয়ে পড়ানো হলে তুমি আরও ভালো করতে পারবে কিংবা ক্লাসে পুরো মনোযোগ দিলে তোমার আর টিউটর কিংবা কোচিং দরকার হবেনা।

  1. ক্লাসে টিচারের দিকে পুরো মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবে
  2. টিচারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলা নোট করে নেবে

পরীক্ষায় ভালো করার ক্ষেত্রে এই ব্যপারটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ সেটা কেবল তুমি পরিক্ষার হলে কোনো উত্তরে আটকে গেলেই বুঝতে পারবে, তখন শুধু টীচারের বলা কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করবে।

  • পড়াশোনাকে স্মার্ট বানাও, কঠিন নয়।

তোমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এই কথাটি অনেকবার শুনে থাকবে, ‘Study smart not hard’ কিন্তু কখনো কথাটি সত্যিকার অর্থে ফিল করেছ? অনেকেই হয়তো করেছে আবার অনেকেই না! যারা করেছ কংগ্রেচুলেশান হৃদয় থেকে।

তোমার পড়াশোনা কঠিন কীভাবে হয়? যখন তুমি পড়াশোনাটাকে কঠিন বানাবে। তোমার পড়াশোনাটা কঠিন কখন হয়? পরীক্ষার আগের দিন রাতে কিংবা ক্লাসের কড়াকড়ি টীচার যখন পড়া ধরতে আসে, তাই নয় কি?

এইটাই হচ্ছে তোমার পড়াশোনার কঠিন অবস্থা! কিন্তু একটা কিন্তু ত্থেকেই যায়………… অনেককেই দেখবে পরীক্ষার দিন বা কড়াকড়ি ওই টীচারের ক্লাসে খুবই ফুড়াফুড়া আর সতেজ থাকে।

কেন থাকে? কারন তারা স্মার্ট ভাবে পড়াশোনা করে। কিন্তু কীভাবে? পড়তে বসার আগে অনেক সেজেগুজে স্মার্ট হয়ে বসে? আরেহ নাহ বোকা!

তারা কখনো পড়াটাকে জমিয়ে রাখেনা। মানে আজকের পড়া কালকের জন্য রেখে দেয়না। ইয়ারের একদম শুরু থেকেই তারা পড়াশোনাটা সময়ের সাথে সাথে নরমালি চালিয়ে নিতে থাকে।

পরীক্ষার আগের দিন বই বের করে তারা কী দেখে জানো? তারা দেখে বইয়ের ভেতরের দাঁড়ি, কমা, অক্ষর, গাইডের এমচিকিউ, চিকিউ তাদের ঘুমুতে যেতে বলছে। বিশ্বাস কর আর নাই কর এটাই সত্যি!

  1. বছরের একদম শুরু থেকেই পড়াশোনা স্লো মোশানে শুরু করে দিবা।
  2. কখনো বছরের শুরুতে “সময়তো আছেই, সবে ইয়ার শুরু, ইত্যাদি ইত্যাদি” এইগুলো বলবানা।
  • ভালো নোটস সংগ্রহ কর বা তৈরি কর।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে ভালো নোটসের বিকল্প নেই! তোমার সিলেবাসের প্রত্যেকটা অধ্যায় বা টপিকের উপর তোমার কাছে যদি স্ট্যান্ডার্ড বা মানসম্মত নোটস থাকে তাহলে সেগুলো তোমার পড়াশোনাটা যেন অনেকটুকুই কমিয়ে দিল। যখন তুমি একটি চ্যাপ্টার বা টপিক নিয়ে পড়তে বসবে তখন তোমার একটু হলেও চিন্তা থাকবে কীভাবে, কোথা থেকে শুরু করবে ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে তোমার হাতের কাছে যদি একটি ভালো নোটস থাকে তুমি যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলে। বিশেষ করে যারা নিজে নিজে পড়াশোনা কর, কোচিং প্রাইভেট ছাড়া। যদিও বা তোমাদের জন্য নোট তৈরি করা একটু কষ্ট হবে।

  1. ক্লাস কিংবা কোচিং-প্রাইভেট থেকে টীচারের লেসনগুলো ভালোভাবে নোট কর।
  2. অন্যের তৈরি করা নোটের চাইতে নিজে কোন স্টাইল্টাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ কর সেটা আগে দেখ, সেক্ষেত্রে নিজের বানানো নোটস বেশি ইফেক্টিভ।
  • একটি অধ্যায় বা টপিক পড়তে কমপক্ষে আধঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা সময় দাও

আমাদের বেশিরভাগ স্টুডেন্টস দের পরীক্ষায় আশানুরূপ রেজাল্ট না পাওয়ার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে তারা পরীক্ষার আগের দিন যে এক্সপ্রেশন দেখায় আরও মাস কয়েক কিংবা বছর আগে তা দেখায় না।

তাই প্রতিদিন তোমাদের সকলেরই উচিত নুন্যতম একটা চ্যাপ্টার বা টপিক আধ ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা পড়া। অনেকেই দেখা যায়, একদিন একটা টপিক বা অধ্যায় ধরলে কিছুক্ষণ পড়ে রেখে দেয়, পরে অনেকদিন গেলেও ওইটার কথা আর মনে রাখেনা। এমনটা করা যাবেনা।

তাই, যেকোনো একটা অধ্যায় বা টপিক ধরলে সেইটাতে কমপক্ষে আধ ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা সময় দিবে। ভালো না লাগলে, না বুঝলে কিংবা না পাড়লে ব্রেইক নেবে বা হেল্প নেবে। তবুও রেখে দেবেনা। আজকে ওইটা আধ ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা পড়লা, তারপর আবার এর পরদিন ধরলা। তবুও এই ব্যপারটা কন্টিনিউ করে যাওয়ার চেষ্টা করবা।

  1. আধ ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা একটা অধ্যায় বা টপিক পড়ার সময়, শেষে ১০-১৫ মিনিট সময় রাখবা ওইটা নিজে নিজে রিভিও দেওয়ার জন্য।
  2. পড়ার মাঝখানে এইটা ওইটা নিজেই নিজেকে ধমক দিয়ে প্রশ্ন করে ফেলবা।
  • সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা

অনেকেই পরিক্ষার আগে জান-প্রাণ দিয়ে পড়ে ফাটাই দিবে বলে ৮০% ই পারেনা। এর অন্যতম একটি কারন হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব।

পরীক্ষার আগে সঠিক একটি পরিকল্পনা বা প্লেন তোমাকে অনেকটাই টেনশান ফ্রী রাখবে। তুমি যখন কী পড়বে, কোনটা রেখে কোনটা পড়বে, কোনটা আগে থেকে পারো না ইত্যাদি এইগুলো নিয়ে টেনশানে থাকবে তখন একটি সঠিক পরিকল্পনা বা প্লেন তোমাকে অনেকটাই স্বস্তি দেবে।

পরিকল্পনা বা প্লেন তৈরি করা কিংবা সঠিক পরিকল্পনা বা প্লেন তৈরি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। অন্যের হেল্প নিলেও তোমার ভালোটা তোমার নিজেরই খুঁজে নিতে হবে কারন তোমাকে তোমার চাইতে বেশি আর কেউ চেনেনা।

  1. পরিক্ষার আগে কোন অধ্যায়গুলো তুমি একেবারে ভালো পারো, কোনগুলো মাঝামাঝি পারো আর কোনগুলোতে তোমার এলার্জি ছিলো সেইগুলো আলাদা আলাদা তালিকা করো।
  2. যেইগুলো ভালো পারো- রিভাইস দাও,

যেইগুলা মাঝামাঝি পারো- একটা নির্দিষ্ট টাইম সেট করে যতটুক পারো                আয়ত্য করে নাও

আর যেইগুলা একদমই পারোনা- বেশি সময় না থাকলে শুধুমাত্র    বেসিকগুলো আয়ত্য কর আর পারলে গাইড থেকে এমচিকিউগুলা চোখা বুলাও।

না পারাগুলা নিয়ে এত বেশি প্যারা খাওয়ার দরকার নাই। তা না হলে সেইগুলা পারাগুলার উপর প্রভাব ফেলবে।

  • শুধু পরীক্ষার দিকেই ফোকাস করা, অন্যান্য জিনিসপাতি বন্ধ রাখা।

প্রফেশনাল খেলোয়াররা তাদের খেলার সময়টাতে শুধু খেলা নিয়েই চিন্তা করে, তাদের ফোকাস শুধু খেলার দিকেই থাকে। একজন প্রফেশনাল ব্যাডমিন্টন খেলোয়ার খেলা চলাকালীন সময়ে ফ্লাওয়ার দিক লক্ষ্য করা ছাড়া জিএফ এর টেক্সটের রিপ্লে দেবে? নাহ, কখনোই না!

কেন তারা শুধু খেলার দিকেই পুরো ফোকাস দেয়? জেতার জন্য বা ফলাফল ভালো করার জন্য!

হ্যাঁ! পরীক্ষার আগের সময়গুলো এমনই হওয়া উচিত। তখন কয়েকটা দিন শুধু নিজের হেলথ কেয়ার, পড়াশোনা, প্রার্থনা ইত্যাদি এই কয়েকটা জিনিসেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। তাই, পরিক্ষার আগের কয়েকদিন-

  1. পড়াশোনায় পুরো ফোকাস দাও, তবে মেন্টালি-ফিজিক্যালি ঠিক থেকে।
  2. কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর পড়ার সময় আগে প্রশ্নটা ভালোভাবে বুঝে তারপর উত্তর অংশে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
  • পরীক্ষায় উত্তর করার বিভিন্ন টেকনিক নিয়ে গভেষণা-

পরীক্ষায় যেহেতু হাতেগুনা সময় থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে সঠিক সময়ে সব উত্তর দিতে পারবে। যেমন- এমচিকিউ অংশে কিন্তু একদম একুয়ারেট সময় থাকে, বিশেষ করে গনিতে।  এক্ষেত্রে এমন কিছু টেকনিক খোঁজার চেষ্টা করবে যাতে সঠিক সময়ে রিলাক্স থেকে উত্তর করা যায়। যেমন-

  1. স্টপওয়াচ ব্যবহার। পরীক্ষায় প্রত্যেকটা সেকন্ড কাউন্ট হয়। সেক্ষেত্রে সময় সতর্কতার জন্য স্টপওয়াচ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. প্রথমেই পুরো প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে দেখা। কমন পড়াগুলো মার্ক করে আগেই উত্তর করে ফেলা।
  3. যেটা পারবেনা বলে মনে হবে সেটা স্কিপ করা।

ইত্যাদি। এছাড়াও আরও অনেক কার্যকরী টিপস আছে। অন্য একটি আর্টিকেলে এ নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করব। ইন-শা-আল্লাহ।

এক্সট্রা কিছু টিপস!

# ব্রেইল গ্রোথ খাবার খাওয়া।

# ঘুম ঠিক রাখা।

# সকালে হাটাহাটি করা। (ব্রেইন আর স্বাস্থ্য উভয়ের জন্য উপকারী)

# প্রাকটিস প্রাকটিস এন্ড প্রাকটিস!

কথা হবে পরবর্তী আর্টিকেলে। সেই অবধি ভালো থাকুন আর ভালো একটা লাইফ লিড করুন, দোয়া করি। আল্লাহ-হাফিজ!

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন