স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় এবং দুর্দান্ত একটি অ্যাপস ‘ট্রুকলার’। বিশেষ করে অপিরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে আপনি আগে থেকেই জানতে পেরে যাবেন কে ফোন করেছে এবং সেটি জানার জন্য আপনি প্রথমে প্লেস্টোর থেকে এপস ইনস্টল করে নিতে হবে,এ অ্যাপটি বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ব্যবহার করছেন ইতিমধ্যেই। কোনো নম্বর মোবাইলে সংরক্ষিত না থাকলেও খুব সহজেই এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী জানতে পারবে এবং কে ফোন করেছে এবং তার পরিচয় আপনার ফোনে ছবিসহ অনেক সময়ই দেখা যায়। এছাড়া বিরক্তিকর যত কল ব্লক করা, এসএমএস ব্লক করার দুর্দান্ত সুবিধা থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই ‘ট্রুকলার’র ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
তবে সম্প্রতি সময়ে ব্যবহারকারীদের সকল গুরুত্বপূর্ণ এসএমএস এবং কল পড়ার এবং দেখার অভিযোগ পাওয়া গেছে ট্রুকলারের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে যেসব ব্যবহারকারী অর্থ ঋণ সংক্রান্ত এসএমএস আদান-প্রদান করে থাকে তাদের তথ্য চুরির অভিযোগও উঠেছে ট্রুকলারের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ ঋণ দেয় তারা উক্ত ব্যবহারকারীর সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছে নিমেষেই ব্যবহারকারীর অজান্তেই।
সম্প্রতি ট্রুকলার অ্যাপের একটি টেকনিক্যাল সমস্যার কথা জানার পরেই এ ধরনের অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে । ‘নিমো’ নামের এক সফটওয়্যার ডেভলপার সুইডেন ভিত্তিক কলার এ কলার আইডি অ্যাপটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ট্রুকলার তৃতীয় পক্ষের সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট কিটস (এসডিকেএস) ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ফোনে থাকা এসএমএস তথ্য ঋণ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে ট্রুকলার ৩৫৬টি শব্দ বা এ সংক্রান্ত তথ্য থাকলে সেগুলো সংগ্রহ করছে। এর মধ্যে অন্যতম বেতন, ক্রেডিট, ডেবিট, বোনাস, চেক, প্রিমিয়াম, ইন্সুরেন্স, উবার, এয়ারবিএনবি ইত্যাদি। এ ধরনের তথ্যাদির প্রতি বেশি আগ্রহ তৃতীয় পক্ষের। এছাড়াও ঋণ দাতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ভাবে ইএমআই সংক্রান্ত যে ধরনের এসএমএস পাঠায় ব্যবহারকারীদের সেই সকল বিষয়গুলোকে তালিকায় রেখেছে ট্রুকলার।
পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে নিমো জানিয়েছেন, ট্রুকলারের ফ্রিকুয়েন্টলি আস্ক কোশ্নেয়নস (FAQ ) এ বলা আছে একজন ব্যবহারকারী চাইলে ট্রুকলারে থাকা সকল ব্যাংকিং ট্যাব ব্যবহার করে উক্ত ব্যবহারকারীর সকল আর্থিক তথ্যাদি বিশ্লেষন করতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই ব্যবহারকারীর অনুমতি সাপেক্ষে। এখন সেটি না করে ট্রুকলার কর্তৃপক্ষ সকল ব্যবহারকারীদেরই এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় এই ট্রুকলার কম্পানি
এ বিষয়ে ট্রুকলার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমরা ব্যবহারকারীদের সুযোগ দিয়েছি যদি তারা কোন ঋণ আবেদন করতে চায় তাহলে ব্যাংকিং ট্যাব থেকে ঋণ পাওয়ার যাবতীয় বিষয়গুলো বিশ্লেষণে আমরা সহায়তা করতে পারি। তবে সেটি সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীদের অনুমতি সাপেক্ষে এবং বিষয়টি একটি এসএমএস বার্তা পাঠানোর পর গ্রাহকদের সম্মতি সাপেক্ষে। এর বাইরে কোন গ্রাহকের তথ্য চুরির বিষয় নেই উল্লেখ করে বলা হয়, বাকি সকল কাজ আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
কিন্তু নিজেদের টার্মস এবং কন্ডিশনে বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করে রেখেছে ট্রুকলার কর্তৃপক্ষ। যাতে লেখা আছে ট্রুকলার ব্যবহারকারীদের কাছে আসা এবং ব্যবহারকারীর ফোন থেকে করা সকল ফোনকল ও এসএমএসের মেটা ডেটা সংগ্রহ করে থাকে তারা । ডেটা সুরক্ষা সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু বিনামূল্যে এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে তাই এ অ্যাপগুলো গ্রাহকদের ব্যাক্তিগত নানা তথ্যাদি সংরক্ষণ করার এক্সেস রাখে, যা পরবর্তীতে ব্যবহারকারীর অজান্তেই সকল তথ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয় বা বিক্রি করার সমর্থ ওই এপস কর্তৃপক্ষের থাকে । এক্ষেত্রে শুধুমাত্র এপস ব্যবহারকরী নিজে চাইলেই নিজের তথ্য সুরক্ষা দিতে পারেন।