পেপারোমিয়া; আগাছা হলেও ফেলনা নয়

যারা বাগান করেন, তারা হয়তো এই লেখাটি পড়ে ভীষণ অবাক হবেন। কেননা আজকের লেখা এমন এক গাছ নিয়ে, যা তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের শখের গাছগুলোকে সুস্থ রাখতে এই গাছকে অবলীলায় উপড়ে ফেলেন। এই গাছের নাম পে‌পারো‌মিয়া (Pansit-Pansitan)।অনেকে চিনে থাকে পান পাতা নামে, হাড়ি-পাতিল খেলার যুগে এই পাতাই হতো বাচ্চাদের কাল্পনিক শাক-সব্জী। খুব কম মানুষই আছে,যারা স্কুলে থাকতে এই গাছের স্বচ্ছ কান্ড বেয়ে রং উঠে আসার বিজ্ঞানের পরীক্ষাটি না করেনি।

এটি একটি ঔষধি গাছ। বাত, গেঁটেবাত, চর্ম রোগ, পেটের ব্যথা ও কিডনি সমস্যার চিকিৎসা্য ব্যবহৃত হয়। এর পাতা ও কান্ড বেটে মলম হিসাবে ত্বকে প্রদাহ হলে প্রয়োগ করা হয়।


বায়োলজিক্যাল ক্যাটাগরি: Plantae

বিভাগ: Angiosperms

শ্রেণী: গুল্ম, লতা

পরিবার: Piperaceae

প্রজাতি: P. pellucida

দ্বিপদ নাম: Peperomia pellucida

প্রতিশব্দ: Piper concinnum Haw.
Peperomia translucens Trel.
Piper pellucidum L.

প্রচলিত নাম: এটা মরিচ শ্রেণির গাছ। Silverbush, ইঁদুর-কান, ম্যান-টু-ম্যান, clearweed (উত্তর আমেরিকা) হিসেবে পরিচিত; prenetaria (পুয়ের্তো রিকো); konsaka wiwiri (সুরিনাম); coraçãozinho বা “সামান্য হৃদয়” (ব্রাজিল); লিঙ্গুয়া ডি sapo, herva-ডি-vidro, herva-ডি-jaboti বা herva-ডি-jabuti (দক্ষিণ আমেরিকা), Corazón de . hombre (কিউবা) ওশেনিয়া, এটা বলা হয় rtertiil ( Belauan ); podpod-lahe বা potpopot ( চামেরো ). ফিলিপাইন এর বিভিন্ন উপভাষায়, এটা pansit-pansitan বা ulasimang-Bato (তাগালগ), olasiman ihalas (Bisaya,), sinaw-sinaw বা tangon-tangon (বিকোল), Lin-linnaaw (Ilocano) এবং “clavo-clavo বলা হয় “(Chavacano,). পাক krasang ผัก กระสัง (থাইল্যান্ড); এশিয়ার অন্যান্য অংশে এটা Cang Cua (ভিয়েতনাম) হিসেবে পরিচিত; “krasang teap” ក្រសាំងទាប (কাম্বোডিয়া); Suna kosho (জাপান); Rangu-Rangu, ketumpangan বা tumpang angin (বাহাসা / মালয়); rinrin (নাইজেরিয়া), “গুল্ম জ্বলজ্বলে” (ত্রিনিদাদ ও টোবাগো), এবং mashithandu (মালায়ালম)।

কোথায় জন্মেঃ সারা বছর জন্মে গাছটি। স্যাঁতসেঁতে কম আলোতে ভাল হয়। সাধারণত ১৫-৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতা গুলো উজ্জ্বল সবুজ রঙের হয়। এটার রয়েছে চকচকে রসপূর্ণ কাণ্ড, হৃদয় আকৃতির মাংসল পাতা। গাছের পাতা থেকে উদ্ভূত লম্বাটে আকারে ক্রমবর্ধমান ফুল রয়েছে। ফল খুব ছোট, আয়তাকার, শৈলশিরাময়। প্রথম সবুজ পরে কালো বৃত্তাকার হয়।

ব্যবহার্য্য অংশ: পত্রাদি এবং ডালপালা.

উপকারিতা: প্রদাহ নাশক, ত্বক স্নিগ্ধকারী ও বেদনানাশক, সংক্রামক বিরোধী, স্কিন ক্যানসার নিরাময়ক।

ব্যবহার সমূহ:
১। এটি কাশি, জ্বর, সর্দি জ্বর, মাথা ব্যথা, স্বরভঙ্গ, ডায়রিয়ার সারার জন্য প্রয়োগ করা হয়। কিডনি সমস্যা এবং প্রস্টেট সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও ব্যবহার করা হয়।
২। পাতার ক্বাথ ব্যবহার হয় গেঁটেবাতে এবং সাধারণ বাতের জন্য ব্যবহার করা হয় ডালপালা।
৩।পাতার রস মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার করা হয়।

৪। মুখের বাইরের ত্বকে যে কোন সমস্যার জন্য পেপেরোমিয়া গুল্মের রস দিয়ে মুখ নিয়মিত ধুলে করলে উপকার পাওয়া যায়।
৫।হালকা গরম পানিতে সম্পূর্ণ পেপেরোমিয়া গুল্ম ডুবিয়ে রেখে এর পানি নরম কাপড়ে নিয়ে ব্রণ যুক্ত মুখে সেক দিলে ব্রণ সমস্যা দূর হয়।
৬। কাণ্ড এবং পাতার তাজা রস চোখের প্রদাহ সারার কাজে ব্যবহার করা হয়।
৭।জ্যামাইকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে সর্দি, ঠাণ্ডার জন্য এবং কিডনি সমস্যার জন্য একটি মূত্রবর্ধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
৮। ব্রাজিলে ফোঁড়া বা পাচড়া উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৯। বলিভিয়ায় জ্বরের জন্য ব্যবহৃত হয় শিকড়ের ক্বাথ।
১০। বাংলাদেশে মানসিক উত্তেজনা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
১১। আফ্রিকায় খিঁচুনি এবং টিউমারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
১২। মাথাব্যথা, বাতের ব্যথা ও পুরুষত্বহীনতা রোধে ব্যবহৃত এ গাছের কাচা সালাদ অত্যন্ত কার্যকর।
সুতরাং দেখতে সাদাসিধে আর যত্রত্ত্র জম্নে ওঠে বলে এই গাছটি কিন্তু মোটেও আর অবহেলা করা যায় না। আমরা সকলেই খুব সহজে এই গাছের দ্বারা উপকার পেতে পারি।
তথ্য সূত্রঃ Google

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন