শ্রীলংকার বর্তমান অবস্থা

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। এই পোস্টে আজকে আমি, শ্রীলংকার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হলাম । তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

শ্রীলংকার বর্তমান অবস্থা

ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পরে শ্রীলঙ্কা বর্তমানে এক নজির বিহীন এবং মনে হয় সে দেশের ইতিহাসে বিশাল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। বর্তমান শ্রীলঙ্কা তার এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও শ্রীলংকার মানুষ এই পরিস্থিতির জন্য রাত দিন আন্দোলন করে গেছে অবিরত।
দেশের পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল যে , খাবার নেই, গাস নেই, নেই পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবার আয়োজন। এমন কি কাগজের অভাবে স্কুল গুলোতে পরিক্ষা নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ কিছু যুক্তি সঙ্গত কারনে দেশের অবস্থা এমন অবস্তায় পৌছায় এবং সে দেশের সরকার নিজেদের কে দেওলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
শ্রীলংকার এই অবস্থার পিছনে কিছু কারণ ছিল। তা হলঃ

১। শ্রীলংকার উন্নয়ন ও বস্তুগত যত উন্নয়ন ছিল সব করা হয়েছিল বিদেশি ঋণ নিয়ে। যে ঋণের পরিমান পরিশোধ না করার কারণে বহুগুনে বেড়ে যায়।

২। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে দেশে শুরু হয় লকডাউন। আর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির সিংহ ভাগ আসত পর্যটন খাত থেকে। আর দেশে পর্যটক না আসার কারণে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

৩। দেশের মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছায় যে মানুষের দৈনন্দিন খাবার ও জ্বালানি কেনা কঠিন হয়ে দাড়ায়।
৪। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প।

৫। কর কমানো। ২০১৯ সালে সরকার কর কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উন্নয়নে গতি আসে, কিন্তু দেশ খারাপ পরিস্থিতির মধ্য পতিত হয়।

উদাহরণ স্বরূপ, এক কেজি চালের দাম ৫০০ এল কে আর (শ্রীলঙ্কার টাকা) ও এক কেজি চিনির দাম ২৯০ এল কে আর হওয়ার কথা দর্শানো যায়। ফলে ক্ষোভে জর্জরিত মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হন।
দেশের এই পরিস্থিতি থেকে মানুষ পালানো শুরু করে এবং আশ্রয় নিতে থাকে ভারতের তামিলনাড়ুতে। ভারত সরকার তাদের আশ্রয় দেয় এবং মানবিক সাহায্য ,সহযোগিতা করতে থাকে। যদিও ভারত সরকারের আসল উদ্দেশ্য ছিল তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো।

দেশের এই অবস্থা অনেক দিন ধরে পুঞ্জীভূত হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এখন মাত্র দুই বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রয়েছে। দেশের ঋণ থেকে জিডিপি ২০১৯ সালের ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১০৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, কাগজপত্র, দুধের গুঁড়োসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ পেতে তীব্র অসুবিধা দেখা দিয়েছে। দেশটি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হচ্ছে, এমনকি নিউজপ্রিন্টের অভাবে কাগজের মুদ্রণ বন্ধ হয়ে গেছে। মার্চে দেশটিতে সাধারণ মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৭ শতাংশের বেশি। খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৩০.২ শতাংশ। এতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের মানুষের অবস্থা যখন খারাপ অবস্থা ধারণ করে তখন তাঁরা রাস্তায় নেমে আসে এবং লাগাটার আন্দোলন করতে থাকে। টানা আড়াই মাস আন্দোলনের পর দেশের সরকার গদি ছাড়তে বাধ্য হয়, এবং তাঁরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দেশের এমন ও হয়েছে যে মন্ত্রী ও এমপি কে রাস্তায় ফেলে পিটানো হয়েছে।

বর্তমানে দেশে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, এবং ইতিমধ্যে দেশে জরুরী অবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে। দেশের জনগণ থেকে শুরু করে সবাই আশা করছে এই সরকার দেশের অবস্থা আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাবে।
এখন দেখার বিষয় ,কতদিনে এই সমস্যা দৃরীভূত হয়। এখন সময়ের অপেক্ষা ।

পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

5 Comments

মন্তব্য করুন