আপনি কি কোনো স্থান বা ঘটনা নিয়ে আজও ভয় করেন? জেনে নিন এগোরাফোবিয়া সম্পর্কে। Agoraphobia

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।

তবে একটু খারাপ লাগে তাদের জন্য, যাঁরা এগোরাফোবিয়ার শিকার। তাঁরা যেকোন স্থান, কাল বা পাত্রভেদে এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকেন, যেখানে হয় তাঁদের খুব ভয় ছিলো, নাহয় সেখান থেকে নিজেদেরকে উত্তরণ করা যায়নি। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি এগোরাফোবিয়ার ভিকটিম?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক..

ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।

আজ আমরা এগোরাফোবিয়া বা কোন বিস্তর ঘটনা ভাবার সময় প্রচুর ভয় অনুভব করা নিয়ে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতে হলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

এগোরাফোবিয়া: এগোরাফোবিয়ার অর্থ কোন বিশেষ কিংবা বিস্তর ঘটনা ভাবার সময় প্রচুর ভয় অনুভব করা মতো একটি ভীতিকর মনোভাব। সাধারণত কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্নরকম ভূতের মুভি কিংবা ভৌতিক স্থানে ভ্রমণ করেছে বা ভৌতিক কোনকিছু দেখেছে, সে ঘটনা ঘটার কথা মাথায় আসলেই তাঁদের জান বেরিয়ে যায়। সাধারণত আমরা অনেকেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্যারানরমাল অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়ি, যেসবের ব্যাখ্যা আদতেই আমাদের কারো কাছে থাকেনা। এছাড়াও অনেক রকমের স্থানে যাই, যেখানে ভয় কাজ করে। আর সেখান থেকে প্রস্থান করা অসম্ভব হয়ে যায়। তখন খুব ভয় পাই আমরা। সেটা স্বাভাবিক। কিম্তু যাঁরা এগোরাফোবিয়ায় আক্রান্ত, তাঁদের কি হয় জানেন? তাঁরা সেই ভয়টাকে দীর্ঘস্থায়ী করে ফেলেন তাঁদের মনে। যার দরূণ যখনই তাঁরা ফ্রী হন, তখনই তাঁদের অবচেতন মন তাঁদেরকে বারবার সেই ঘটনা বা মুহূর্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে। তাঁদের মনে একটাই জিমিস বারবার ঘুরতে থাকে, সেটা হচ্ছে,- এই বুঝি আবারও আমাকে সেদিনের ঘটনার স্বীকার হতে হবে! এই বুঝি আমি আবার সেখানে ঘেরাও হয়ে যাবো! এই বুঝি খারাপ কিছু একটা হতে চললো! ইত্যাদী..

আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ছোটবেলায় আমার এক বড় বোনের মধ্যে এই ফোবিয়াটি মাত্রাতিরিক্ত হারে ছিলো।

“কনজিউরিং -২” -এই মুভিটার সম্বন্ধে হয়তো অনেকেই জানেন। অনেকেই এই মুভিটা হয়তো দেখে থাকবেন। শোনা যায় যে, ঐই মুভিটার অত্যন্ত ভয়াবহতা এবং মুভিটা মোস্ট হার্টব্রেকিং হওয়ার কারণে সিঙ্গাপুরসহ আরো বিভিন্ন দেশে এই মুভিটা ব্যান করে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমরা তো বাঙালি, বিশ্বে যা কিছু ভয়ানক, যা কিছু নিষিদ্ধ, সে সকল বিষয়ে আমাদের আকর্ষণ ও ক্রিয়া কলাপ একটু বেশিই।

২০১৮ -তে আমার এক খালাতো বোন, বয়সে আমার বড়। সাহস করে আমাদের সাথে মুভিটা দেখতে বসেছিলো। তাকে আগে থেকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম, তার কি ভয়জনিত কোন ইস্যু আছে কিনা। সে না বললো। তো, আমরা মুভিটা দেখলাম পুরোটা।

তারপরের দুইদিনের মাথায় শুনেছিলাম, সে নাকি মাঝরাতে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠতো। বেশ কয়েকদিন ধরে তার মানসিক অবস্থা খারাপ ছিলো। আমি বুঝে নিই, সে যতই বলুক, তার এগোরাফোবিয়া আছে। পরে অবশ্য সে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু ওইদিনের পর থেকে হরর মুভি দেখার জন্য তার উপর নিষেধাজ্ঞা পড়ে যায়।

এরকম আরও অনেক ঘটনার সাক্ষী ছিলাম আমি আমার জীবনে। আপনাদের জীবনেও এসবের কম নেই আশা করি। নিচে কমেন্ট বক্স তে আছেই, অনুরোধ করছি, জানিয়ে দিয়েন যদি আপনারও এরকম কোন বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে থাকে..

পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদের রোগব্যাধী গোপন করে রাখতে পছন্দ করে। তাঁদের নিজেদের পথচলা এবং আত্মিক স্বার্থসমূহ অটূট রাখতে তাঁরা ভয়ের ব্যাপারটা গোপন রাখেন। স্বভাবত তাঁরা একটু বন্ধুসুলভ হন। অচিরেই সবার সাথে মিশে যান। প্যারানরনাল এক্টিভি নিয়ে যেকোন আর্টিকেল/মুভি/গল্পের প্রতি তাঁদের অত্যন্ত ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়।

জেনে রাখা উচিৎ যে, এই এগোরাফোবিয়া বা কোন বিস্তর ঘটনা ভাবার সময় প্রচুর ভয় অনুভব করার ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ প্যানিক ডিসঅর্ডারে পড়ে হয়ে যায়। তখন তারা ভাবে যে এই ইনজেকশনটাই তাদের মৃত্যু। সে সময় সাধারণত ডাক্তাররা নাজেহাল হয়ে যান।

এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। তবে এ নিয়ে খুব বেশি আপত্তি থাকলে নিয়ে এবং নির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণের জন্য কিছু ব্যবস্থা চাইলে আপনি নিতে পারেন। যেমনঃ

১. আত্মবিশ্বাস নিয়ে এটা মনে করবেন যে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সে ব্যাপারটা আবার ঘটলেও আপনার কিছুই হবেনা। কারণ, আপনি এখন অভিজ্ঞ।
২. হরর মুভি, হরর এক্টিভিটি এবং সমগ্র প্যারানরমাল ব্যাপারটাকে মানসিকভাবে একটু সহজে নিতে শিখুন। সেদিকে চর্চা করার দরকার নেই।
৩. নিয়মিত মস্তিষ্ক প্রশান্তিকরণ মেডিটেশন চর্চা করুন।

কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..

পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয় রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।

Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Agoraphobia
এগোরাফোবিয়া
কোন ঘটনা চিন্তা করে প্রচুর ভয়
কাহিনীর ভয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
গল্পের ভয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
ভুতের ছবির ভয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
এগোরাফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন