ইন্টারনেট ও এর খুঁটিনাটি | ইন্টারনেটের ব্যবহার

ইন্টারনেট মূলত পুরো পৃথিবী বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে ভিন্ন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত কম্পিউটারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বলা হয় ইন্টারনেটওয়ার্কিং। সে অনুযায়ী ইন্টারনেটকে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেটওয়ার্কও বলা হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সমন্বিত ব্যবস্থায় ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বর্তমান বিশ্বের গতিময়তার এক বৃহত্তর মাইলফলক। এটি তথ্যের এক বিশাল ভান্ডার। তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগে ইন্টারনেট একটি অন্যতম মাধ্যম। ইন্টারনেট দিয়ে বিভিন্ন ভাবে তথ্য সঞ্চালন ও আহরণ করা যায়। নিত্য নতুন উদ্ভাবন এর ফলে ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা ও তথ্যের সমারোহ বেড়েই চলেছে।

ইন্টারনেটের ব্যবহার

শুরুতে কেবল তথ্যের আদান-প্রদান করার জন্য ইন্টারনেটের জন্ম হলেও যতই দিন যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের বহুমুখিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে। বর্তমানে এটা কেবল গবেষণাকর্ম ও সরকারি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য ইন্টারনেট এখন উন্মুক্ত।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার ইন্টারনেটকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। বর্তমানে যে কোন ধরনের ব্যবসায়িক যোগাযোগ কিংবা বিজ্ঞাপনের জন্য ইন্টারনেটকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত নয়। নিচে ইন্টারনেটের ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

তথ্য আদান-প্রদানঃ বর্তমানে ইন্টারনেট তথ্য আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইমেইলের মাধ্যমে নিমিষেই পৃথিবীর একমাত্র থেকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ন্যুনতম ব্যয়ে তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেট মূলত টেলিফোন ও ফ্যাক্সের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তথ্য আহরণঃ পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ের উপর চলতি তথ্যাবলী বর্তমানে ইন্টারনেটে ধারণ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ব্যবহারকারী ব্রাউজিং করে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী কম্পিউটারের পর্দায় প্রদর্শন করতে পারেন কিংবা নিজের কম্পিউটারে সংরক্ষণ বা প্রিন্ট করতে পারেন। কোনো বিষয়ের উপর তথ্যাবলী আহরণ করতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তা নেয়া যায়।

শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ বর্তমানে ইন্টারনেটের এত বেশি প্রসার ঘটেছে যে, তা এখন জ্ঞান অর্জনের মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জীবনের যেকোনো প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক তথ্য এখন ইন্টারনেট থেকে আহরণ করে জ্ঞানার্জন করা সম্ভব। অনলাইনে যেকোনো লাইব্রেরী থেকে কিংবা অনলাইনে অবস্থিত যেকোনো বই অধ্যায়ন করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোর্সও করা যায়।

অনলাইন মিডিয়াঃ আজকাল পত্রিকা কাগজে প্রকাশনার পাশাপাশি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। অনলাইনের মাধ্যমে ব্রডকাস্টিংও হচ্ছে। অনলাইনে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল দেখারও সুযোগ রয়েছে।

বিনোদনঃ বিনোদন ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজকাল অনেকেই অনলাইনে রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে বিনোদন সংগ্রহ করে থাকেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন সময় দিয়ে থাকেন। আরো বিভিন্ন রকম ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে বিনোদনের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব।

বাণিজ্যিকঃ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেট একদিকে যেমন ব্যবসায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। ওয়েব পেজে একটি বিজ্ঞাপন নিমেষেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া যায়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য কেনা-বেচা করা হচ্ছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক এরূপ  ব্যবসা-বাণিজ্যকে ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স বলা হয়।

অর্থ উপার্জনঃ ইন্টারনেট এখন অর্থ উপার্জনের বৃহৎ একটি মাধ্যম। নিজস্ব সাইট গুলোতে গুগল এডসেন্স বা এ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বসিয়ে সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্স মারকেটপ্লেস যেমন- আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, ফাইবার, গুরু ডট কম, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি সাইটে কাজের জন্য বিড করে কিংবা নিজের কাজ বিক্রি করে, সে কাজগুলো ঘরে বসে করার পর অনলাইনে কাজ জমা দিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায়। এছাড়াও আরো বহু পন্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য ইন্টারনেট বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন