ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের অগ্রযাত্রা ও আধুনিক বাংলাদেশ

 

বর্তমান দেশ ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির দেশ। দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক বৈদেশিক ও বিভিন্ন ধরনের কাজ নির্ভর করছে প্রযুক্তির উন্নতির ওপর। দেশের প্রায় সকল কাজ প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার কারণে দেশে কম্পিউটার ব্যবহারের চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের সকল দেশের কাজকর্ম ও প্রযুক্তিনির্ভর। এরই ফলশ্রুতিতে কম্পিউটার ব্যবহারের প্রসারতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে কম্পিউটার ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে বলে দেশে তৈরি হচ্ছে আইটি প্রতিষ্ঠান। ফলে দল মত নির্বিশেষে সকল জনগণ কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য  প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

কম্পিউটারের পরিচিতি:

কম্পিউটার মূলত একটি ইংরেজী শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে হিসাব গণনাকারী। তবে কম্পিউটারে শুধু হিসাব গহনা নয় বরং গ্রাফিক্স ডিজাইন কনটেন্ট রাইটিং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সহ আরো নানা ধরনের কাজ করা যায়। শুধু তাই নয় আমাদের মোবাইল ফোনের কনভারসেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে সকল এজেন্সির সাথে কলার এজেন্টরা থাকেন তারাও কম্পিউটার মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

কম্পিউটারের ইতিবাচক প্রভাব:

আমরা জানি বাংলাদেশ হচ্ছে স্বল্পআয়ের একটি দেশ। এই স্বল্পআয়ের দেশে কম্পিউটার এর সঠিক ব্যবহার  বয়ে আনতে পারে উন্নতির স্রোতধারা। বিশ্বকে আধুনিকীকরণ করতে সহায়তা করার জন্য ইন্টারনেট ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত অনস্বীকার্য। স্কুল-কলেজ অফিস-আদালতসহ যেকোন কর্ম ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া এখন আমরা চলতে পারি না। আমরা সাধারণত দুই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। সেগুলা হলো পার্সোনাল কম্পিউটার ও ল্যাপটপ। পার্সোনাল কম্পিউটার চালানোর জন্য বিদ্যুৎ কানেকশন অবশ্যই থাকতে হবে কিন্তু ল্যাপটপ চালানোর জন্য বিদ্যুৎ কানেকশনের প্রয়োজন নেই জাস্ট একটা চার্জার থাকলেই যথেষ্ট।

কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রার মানকে অনেক উন্নত করেছে এবং সেটি সহজতর করে দিয়েছে। একটা উদাহরণ হিসেবে বলি আগে আমাদেরকে পরীক্ষার রেজাল্ট নেওয়ার জন্য স্কুলে যেতে হতো কিন্তু এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে আর স্কুলে যেয়ে রেজাল্ট নিতে হয় না বাসায় বসে থেকে মোবাইল ফোন অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা সেটা পেয়ে যাই।

আধুনিক কম্পিউটারের ব্যবহার আমাদের জীবনে বয়ে এনেছে আসে আশীর্বাদ ও সুখের অনুভূতি। এখন থেকে 20- 22 বছর পূর্বে আমাদের জমি জমা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্ট হাতে লিখে সেটি জমা রাখতে হতো কিন্তু এখন ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে এগুলো কপি পেস্ট এবং টাইপিং করে সেটি ভালো করে রাখা যায় ফলে জমিজমা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট সংক্রান্ত সকল বিষয়ের প্রতি  গুরুত্ব আরো ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে।

আগে চাকরি করতে হলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চাকরি সম্পর্কে জানতে হতো কিন্তু এখন ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের উন্নতি হওয়ার জন্য বাসায় বসে থেকেই সকল চাকরি সংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়। আপনার যদি একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে পুরো বিশ্বকে আপনি দশ মিনিটের মধ্যে হাতের মুঠোয় করে নিতে পারেন। এটা শুধু সম্ভব ইন্টারনেট কানেকশন ও প্রযুক্তি  অর্থাৎ কম্পিউটারের অগ্রগতি কারণে। আজ আমরা  বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট 1 উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে বিশ্বের  সেরা কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহ  প্রেরনকারী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত  হয়েছি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট 1 উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে আমরা আবহাওয়া জলবায়ু সহ বিভিন্ন ধরনের খবর মহাকাশযানের খবর পেয়ে থাকি। কম্পিউটারের অগ্রগতির কারণে দেশের প্রতিটি প্রশাসন ডিপার্টমেন্টে উন্নতি হয়েছে ফলে অপরাধ প্রবণতাও কমে গিয়েছে। এখন যে কোন অপরাধীকে খুব সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং তাঁকে সহজেই আইনের আওতায় আনা যায়। ধর্ষণ ও খুনের মতো মামলাতে এখন ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সহজেই অপরাধীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে তার প্রধান  কৃতিত্ব দিতে হবে  কম্পিউটারে ইন্টারনেট অগ্রগতিকে।

বিজিবি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর  সৈনিকেরা পরাক্রমশালী শত্রুর উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার করে থাকে। সরকার শত্রুর উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য তাদের একটি ট্রাকিং সিস্টেম দিয়ে রেখেছেন  যেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় কম্পিউটার দিয়ে কন্ট্রোল রুমে বসে থেকে। এসব ব্যাবহার শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয় বরং বিশ্বের সমস্ত জনসাধারণের জন্য  আশীর্বাদ স্বরূপ।

কম্পিউটারের কিছু নেতিবাচক প্রভাব:

কম্পিউটার ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব এর পাশাপাশি এমন কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যা আমাদের সকলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কম্পিউটার ব্যবহারের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে বাচ্চাদের উপর। তারা কম্পিউটারকে সাধারণভাবে ব্যবহার করতে করতে একসময় কম্পিউটার ব্যবহারের প্রতি ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে তারা খাওয়া-দাওয়া খেলাধুলা পড়াশোনা সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে সব সময় কম্পিউটার এর পেছনে লেগে থাকে। যা দেশ ও জাতির জন্য ভবিষ্যতে হতে পারে হুমকি স্বরূপ। কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

কম্পিউটারে কিছু আসক্তিজনক গেম রয়েছে যেগুলো একবার কেউ আসক্ত হয়ে পড়লে সেটা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের প্রায় 90 ভাগ বাচ্চারা এই সমস্ত গেম খেলার প্রতি ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে তারা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। আমরা যদি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারি অচিরেই একদিনে সমস্ত প্রযুক্তির খারাপ প্রভাবের কারণে দেশের অবস্থা কঠিন থেকে  কঠিনতর পর্যায়ে চলে যাবে।

আমাদের যুবসমাজের একটা বড় অংশও প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত। আর এখনকার দেশ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চলছে বিধায়  সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা কেউই ইন্টারনেট ছাড়া একদিনও থাকতে পারিনা। ফলে আমাদের কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোনের সহায়তায় চলতে হয়। আমরা জানি ইন্টারনেটে নানা রকম অশ্লীল ভিডিও  পাওয়া যায়। আমাদের যুবকেরা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় এই সমস্ত অশ্লীল ভিডিও প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে। যার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।

এখনই সময় আমাদের যুব সমাজ সমাজকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে আনার। যুবসমাজের সমাজের হাতে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ পথ-পরিক্রমা হবে। প্রযুক্তির করাঘাত থেকে যদি আমাদের আমরা আমাদের  যুবকদের নিরাপত্তা না দিতে পারি তাহলে অচিরেই আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেজন্য যুবসমাজকে এ কম্পিউটারের ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের কথা ভালোভাবে আলোচনা করতে হবে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং পাশাপাশি তাদেরকে কম্পিউটার ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করতে হবে যাতে দেশ ভবিষ্যতে উন্নতির পথে এগিয়ে যায়।

Related Posts

13 Comments

মন্তব্য করুন