আমরা যারা নব্বই এর প্রজন্ম তাদের কাছে অত্যন্ত স্মৃতিমধুর ও নস্টালজিক একটি সিনেমার নাম “অ্যানাকোন্ডা”। জেনিফার লোপেজ, ওয়েন উইলসন অভিনীত কাল্ট ক্লাসিক এই সিনেমাটিতে আমরা দেখতে পাই বিশাল আকৃতির সব অ্যানাকোন্ডা সাপ রাক্ষস এর মত আস্ত মানুষ গিলে খাচ্ছে। যা দেখে আমাদের শরীর শিউরে উঠে। আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না যে বাস্তবে কারো সাথে এরকম ঘটতে পারে।
কিন্তু সিনেমাকে হার মানিয়ে বাস্তবেও এরকম একটি ঘটনা ঘটে গেছে ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশে। যেখানে ২২ ফিট দীর্ঘ একটি দৈত্যাকার অজগর সাপ সরাসরি গিলে খেয়েছে ৫৪ বছর বয়সী এক বয়স্ক মহিলাকে। দৈত্যাকার অজগর সাপের পেট কেটে অর্ধগলিত মহিলার লাশ উদ্ধার এর গ্রাফিক ছবি সোশাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট এ ছড়িয়ে পড়লে মূহুর্তে খবরটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। কিভাবে এই কল্পনাতীত ঘটনাটি কারো সাথে ঘটতে পারে তা সবার মনোযোগ এর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। আসুন ভাইরাল হয়ে পড়া এই খবরটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের তেরজুন গাজা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন ৫৪ বছরের প্রৌঢ়া জাহরা। তিনি তার বাড়ির কাছাকাছি একটি রাবার বাগানে রাবার সংগ্রহের কাজ করতেন। শুক্রবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পরিবারের লোকজনদের জানিয়েছিলেন, স্থানীয় রাবার বাগান থেকে রাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন। এরপর থেকে তিনি নিখোজ হন। আর ফিরে আসেননি।
এর মাঝে দুইদিন কেটে যায়। জাহরা ফিরে না আসায় তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ও তার খোঁজ করতে থাকে। তার স্বামী জাহরার নিখোজ হবার সম্ভাব্য স্থানে সন্ধান করে তার স্ত্রীর স্যান্ডেল, জ্যাকেট, মাথার স্কার্ফ ও ছুরি ছাড়া আর কিছু খুজে পাননি। তার নাতিরা জরুরী পরিষেবায় খবর দেন। এলাকাবাসী ও নিজেরাও জঙ্গলের মাঝে দিদিমাকে খুজতে থাকেন। আর খুঁজতে খুঁজতেই তাঁদের সামনে পড়ে যায় ২২ ফুট দীর্ঘ এক দৈত্যাকার অজগর সাপ।
তার পেটের একটা জায়গা ফুলে ছিল যা দেখে গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। তারা দৈত্যাকার অজগরটির পেট কেটে ভেতরে কি আছে তা দেখার সিদ্ধান্ত নেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যায় একজন গ্রামবাসী অত্যান্ত সতর্কতার সাথে গাছের ডালের সাহায্যে অজগরের মাথাটিকে আটকে রাখেন এবং বাকিরা তার পেট চিড়তে থাকেন। পেট চিড়ে দেখা যায় সাপটির পাচনতন্ত্রে কুঁকড়ে পড়ে আছে দাদিমা জাহরার মৃতদেহ।
যেভাবে ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে
তেরজুন গাজা গ্রামের প্রধান, আন্তো জানিয়েছেন, সম্ভবত ওই রাতেই সাপটি প্রথমে জাহরাকে কামড় দিয়েছিল। তারপর তার পেশিবহুল শরীর দিয়ে তাঁকে পেচিয়ে ধরে পিষে দিয়েছিল। তারপর, জাহরার শ্বাসরোধ করে দিয়েছিল সাপটি। শেষে মাথার দিক থেকে গিলে নিয়েছিল তাঁকে। এই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা অন্তত ঘন্টা দুয়েক ধরে চলেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
গ্রামের সবাই এখন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারণ, এই এলাকায় একটি ২৭ ফুটের অজগরও রয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি দৈত্যাকার অজগর দেখা গিয়েছে। ২৭ ফুটের অজগরটিকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তার বিশাল আকৃতির জন্য সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রামের দুটি ছাগলকে সে গিলে খেয়ে ফেলেছে।
যে প্রজাতির সাপ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন জাহরা
“অ্যানাকোন্ডা” সিনেমায় আমরা যে অ্যানাকোন্ডা সাপ দেখতে পাই তার বসবাস মূলত দক্ষিন আমেরিকার আমাজন রেইন ফরেস্টে। ওজন এর দিক থেকে সর্ববৃহৎ এই সাপটির অস্তিত্ত দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায় নেই। জাহরা যে সাপটির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তা মূলত গোলবাহার বা জালি অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন নামে পরিচিত। দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গলে এই প্রজাতির সাপটি দেখতে পাওয়া যায়।
দৈর্ঘ্য এটি ২৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এটি পৃথিবীর সব থেকে বড় সাপ। এটি নির্বিষ কন্সট্রিক্টর প্রজাতির সাপ। অর্থাৎ এরা প্রথমে শিকারকে কামড় দিয়ে এর পেশিবহুল শরীর দিয়ে পেচিয়ে ফেলে। তারপর পেশি শক্তি দিয়ে পিষে ফেলে শিকারকে নরম মাংসপিন্ডে পরিণত করে। এরপর আস্ত গিলে খায়। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ অজগরের নিয়মিত খাদ্য নয়। তারা মূলত বন্য প্রাণী শিকার করে খায়।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।