একটি কাগজকে যদি ৪৩ বার ভাজ করা যায় তবে সেটি চাঁদে গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু তাহলে আমরা চাঁদে যেতে রকেট কেন ব্যাবহার করি?

আসসালামু  আলাইকুম,  আজ  আবার‍ও  আপনাদের  সামনে  হাজির  হলাম একটা  নতুন  বিষয়  নিয়ে। আশা  করি  আপনাদের  ভালো লাগবে। তাহলে  শুরু  করা  যাক।

প্রথম  প্রথম  আপনাদের এই  বিষয়টা   বিশ্বাস  নাও হতে পারে, মনে হতে পারে আমি আপনাদের সাথে মজা করছি, এটা ভুয়া ইত্যাদি। কিন্তু যা বলতে যাচ্ছি তার সবই সত্য। পুরোটা পড়লেই পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারবেন। সেটি হলো – আপনি একটি কাগজের  উপর  দিয়ে  হেটে  চাঁদে  চলে  যেতে  পারবেন,  কিন্তু তার জন্য আপনাকে ওই  কাজটিকে ৪৩ বার  ভাজ  করতে হবে। কী বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?  আসলে  তাই স্বাভাবিক। আসুন  বিস্তারিত  জেনে  নিই-

  • সাধারণত একটি কাগজের পুরুত্ব ০.১ মিলিমিটার হয়ে থাকে। আপনাকে সেই কাগজটিকে ভাজ করতে হবে।
  • কাগজটিকে ভাজ করলে দেখা যাবে,

১ বার ভাজে পুরুত্ব- (০.১×২) = ০.২ মিলিমিটার

২ বার ভাজে পুরুত্ব- (০.২×২) = ০.৪ মিলিমিটার

৩ বার ভাজে পুরুত্ব- (০.৪×২) = ০.৮ মিলিমিটার

৪ বার ভাজে পুরুত্ব- (০.৮×২) = ০.১৬ মিলিমিটার একইভাবে ভাজ করতে থাকলে দেখা যাবে প্রতিবারেই ২ গুণ করে বারছে। সুতরাং আমরা এই হিসাবকে গুণত্তর ধারার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এখন আমার ধারণা অনেকেই হয়তো এই গুণত্তর ধারা সম্পর্কে জানেন না, তাহলে একটু কষ্ট করে জেনে আসি। খুবই সহজ বিষয় এটি। তাহলে চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই-

ধারা: অনুক্রমের পদ বা সংখ্যাগুলোর সমষ্টিকে ধারা বলে। যেমনঃ১+২+৩+৪+……..+n+………।
গুণোত্তর ধারা : যে ধারার কোন প‌দের সা‌থে তার পরবর্তী প‌দের অনুপাত বা ভাগফল সর্বদাই সমান হয় তাকে গুণোত্তর ধারা বলে। যেমনঃ২+৪+৬+৮+……..+arn-১+………

ঠিক একইভাবে কাগজের পুরত্বের ধারাটি গুণত্তর ধারা হলে ধারাটি হবে-

০.১+০.২+০.৩+০.৪+………+arn-১+………. । আমাদের এখানে ,

a = প্রথম পদ। এখানে প্রথম পদ হলো ০.১ ।

r = যতগুণ করে বাড়ছে। এখানে প্রত্যেক ক্ষেত্রে ২ গুণ করে বাড়ছে।

n = যতবার করে কাগজকে ভাজ করা হচ্ছে তার সংখ্যা। এখানে আমাদের এটাই বের করতে হবে ।

এবং সর্বশেষ জানা দরকার , পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩৮৪০০০ কি.মি. = ৩.৮৪।

  • এখন সমাধানটি করা যাক,

arn-1 = 38×1011

0.1×2n-1 = 38×1011 ( মান বসিয়ে)

2n-1 = 38×1012

log22n-1 = log2(38×1012) (উভয়পক্ষে log2 এনে)

n-1 = 41.8 (প্রায়)

n = 42.8 = 43 (42.8, 43 এর কাছাকাছি হওয়ায় 43 ধরে নিই)

সুতরাং আমরাতো দেখলাম যে একটি কাগজকে ৪৩ বার ভাজ করলেই পৌছে যেতে পারব। কথা ও যুক্তি ঠিক থাকলে কি হবে ? বাস্তবে তা আসলে অবাস্তব। কেননা একটি কাগজকে আমরা সর্বোচ্চ ১২ বার ভাজ করতে পারি এর বেশি নয়। কিন্তু ২০০২ সালের আগে মানা হতো যে একটি কাগজকে সর্বোচ্চ ৮ বার ভাজ করা যায় । ২০০২ সালে এক স্কুল ছাত্রী ১২ বার কাগজকে ভাজ করে তা ভুল প্রমাণিত করে অর্জন করেছেন গিনিস অয়ার্ল্ড রেকর্ড। সেই স্কুল ছাত্রীটির নাম হলো “ব্রিটনি গ্যালিভান নামনী”।

তাহলে দেখায় যাচ্ছে যে ১২ বার ৪৩ বার হতে অনেক দূর।

যদি একটি কাগজকে অসংখ্যবার ভাজ করা যেত তবে আমরা

  • ৫১ বারে সূর্যে,
  • ৮১ বারে প্রায় অ্যান্ড্রমিয়া গ্যালাক্সি বা ১,২৭,৭৮৬ আলোকবর্ষ এর সমান,
  • ৯০ বারে vigor super cluster এর সমান বা ১৩১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ এর সমান পুরু হয়ে যাবে , এবং
  • ১০৩ বারে observable universe অতিক্রম করে যাবেন।

আর এমনটা হলে বোধহয় আমাদের আর রকেটের প্রয়োজন হতো না।

আবার আগামীতে দেখা হবে আরও নতুন কোনো বিষয় নিয়ে , “ইনশাল্লাহ”।

সবাই সুস্থ থাকবেন , ভালো থাকবেন।

ধন্যবাদ।

Related Posts