কথিত অর্থ নয়, জানতে হবে ভাবার্থ!

বদলে যাচ্ছি আমরা, বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবন ধারা। আমাদের জীবনধারা, আমাদের বোঝার ক্ষমতা, চিন্তাধারা এক কথায় বলতে গেলে পুরো আমরাই শব্দের কথিত অর্থ নির্ভর হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। যা আমাদের খোলা চিন্তাধারার বিকাশের জন্য অনেকটাই হুমকির।

উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে দেখুন, ‘প্রেম’একটি সুন্দর শব্দ। প্রেম শব্দটির ভাবার্থ বিশাল! কিন্তু আপনি যদি একশো জন মানুষকে জিজ্ঞেস করে যে প্রেম বলতে তারা কি বুঝে- আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে যে, তাদের মধ্যে নব্বই শতাংশ বা তারও বেশি মানুষ বলবে “প্রেম মানে হলো বাগানে বসে বা যেখানে – সেখানে বসে প্রেমিক – প্রেমিকার গল্প করা” বা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আসলেই কি প্রেম মানে শুধু তাই? আমি মনে করি না যে প্রেম মানে তাই! কারণ আমার কাছে প্রেম মানে হলো কোন নিদিষ্ট ব্যাপারের উপর ক্ষুধা বা তীব্র আকাঙ্ক্ষা। যেমন, ‘আমার একটা দামী কালো রঙের ঘড়ি চাই’ এখানে দামী কালো রঙের ঘড়ি টা হলো প্রেম। আবার ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে একা হেঁটে যাচ্ছেন, আপনার সামনে এক বিশাল সাপ; আপনার দিকেই আসছে, আপনি সাপে ভয় পান৷ সেক্ষেত্রে আপনার প্রেম কিন্তু দামী কালো রঙের ঘড়ি টা হবে না, এক্ষেত্রে আপনার প্রেম হবে ঐ সাপ টার হাত থেকে রেহাই পাওয়া অর্থাৎ আপনার জীবন রক্ষা করা! আগেই বলেছিলাম প্রেম মানে কোন কিছুর ক্ষুধা বা তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আর নিশ্চয়ই আপনার ক্ষুধা হবে আপনার জীবন রক্ষা করা।

ঠিক তেমনি ‘খুশি’ ও একটা সুন্দর শব্দ। কিন্তু আমরা খুশি বলতে বুঝি শুধুই ভালো কিছু।
খুশি এমন একটা অর্থবহ শব্দ যার একদিক খারাপ হওয়ার কারণেই অন্যদিক ভালো হয়। অর্থাৎ আপনার খুশি হতে পারে অন্য কারো জন্যে দুঃখের ব্যাপার। আবার আপনার দুঃখ হতে পারে অন্য কারো জন্যে তা খুশির ব্যাপার । যেমন দেখুন, যারা সিগারেট বা ইত্যাদি মাদক দ্রব্য পান/গ্রহণ করে,তাদের বাবা মা কি খুশি? অবশ্যই তারা খুশি নন। কিন্তু একজন সিগারেট বিক্রেতা ঠিকই খুশি। যতই তারা প্যাকেটের মধ্যে লিখে দিক “ধুমপান ক্যান্সারের কারণ,,ধুমপান মৃত্যুর কারণ” বা ইত্যাদি ইত্যাদি।তারা কিন্তু চায় আপনি তাদের সিগারেট কিনুন আর তাদের বিক্রি বেশি বেশি হোক, তাতেই তারা খুশি৷ আবার শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি যে একজন কাফনের কাপড় বিক্রেতার খুশি কিন্তু অন্য একজন মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

এরকম অদ্ভুত সব ভাবার্থ নিয়েই শত শত বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আমাদের এসব শব্দ। আর এসব শব্দ রক্ষা করার দায়িত্বটাও আমাদেরকেই নিতে হবে। আর এরকম হাজার হাজার শব্দ রয়েছে যেগুলোর ভাবার্থ বিশাল কিন্তু আমরা শুধুমাত্র কথিত অর্থ নিয়েই মাতামাতি করে যাচ্ছি দিনের পর দিন। কিন্তু ভাবার্থের কোন মূল্য দিচ্ছি না। একটা শব্দকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য এবং শব্দকে সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার ভাবার্থ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি মনে করি একটি শব্দকে যথার্থ সম্মান করতে হলে আমাদেরকে শব্দের ভাবার্থ জানতে হবে, কথিত অর্থ নয়।

Related Posts